কুড়িগ্রাম পৌরসভার অন্তর্গত দুটি গ্রাম নামা ভেলাকোপা ও টাপু ভেলাকোপা। এ দুটি গ্রামে বাস করে কয়েক হাজার মানুষ। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের এ দুটি গ্রামের মানুষের নিয়মিত চলাচল করতে হচ্ছে একমাত্র নড়বড়ে একটি বাঁশের সাঁকো দিয়ে। অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও এই দুই গ্রামবাসীর এখন চরম দুর্ভোগে কাটছে দিন।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই দুর্ভোগ আরো চরম আকার ধারণ করে। গ্রামের মানুষ নিজেরা তাদের দেয়া চাঁদার টাকায় সাঁকো নিয়মিত সংস্কার করে চলছেন। বছরের পর বছর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কোন বিত্তবানরা এগিয়ে আসেননি এটি সংস্কার কিংবা নতুন করে তৈরিতে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, জনপ্রতিনিধিরা ভোট নিতে এলে মুখের ফুলঝুড়ি দিয়ে আশ্বাস দেন। কিন্তু তা বাস্তবে রুপ নেয় না। ফলে তাদের দুর্ভোগ ও কষ্ট থেকেই যায়।
সরেজমিনে জানা যায়, নামা ভেলাকোপা ও টাপু ভেলাকোপা গ্রামের এ সাঁকোটির জরাজীর্ণ অবস্থা। প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে এই সাঁকো দিয়ে পার হতে হচ্ছে খালের দুই দিকের গ্রামের বাসিন্দাদের। পাশাপাশি এর দুদিকে রয়েছে একটি মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। কারণে বরাবরই দুটি প্রতিষ্ঠানের শিশু শিক্ষার্থীসহ সকলকে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয়। দিনদিন যেন এটি মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে।রেলিং না থাকায় এ নড়বড়ে সাঁকোটি আরো দুশ্চিন্তার কারণ। ইচ্ছে না থাকলেও কোন উপায় নেই। কেননা বাঁশের চাটাই বিছানো ২ ফুট প্রস্থ আর ৯০ ফুট দৈর্ঘের এ সাঁকোটি ছাড়া আর বিকল্প কোনো রাস্তা নেই এসব মানুষের চলাচলের জন্য। এতে তাদের প্রতিনিয়ত চরম হতাশা, ক্ষোভ আর ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হচ্ছে। আর এনিয়ে এখানকার বাসিন্দারা বহুবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবেদন করে তেমন কোন সাড়া পাননি বলে অভিযোগ তাদের।
পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর উদাসীনতাকে দায়ী করছেন দুই গ্রামের বাসিন্দারা। সাঁকো দিয়ে চলাচলরত ভ্যান চালক মো. রতু মিয়া বলেন, 'এত কষ্ট করি ভ্যানে করি মাল নেয়া এই সাঁকোর দিয়া খুবই কঠিন। কখন যে ভাঙি পড়বে তা কবার পাই না।'
অন্যদিকে মাদরাসা শিক্ষার্থী আলম হোসেন বলেন, 'এ সাঁকো দিয়ে চলাচল করা খুবই সমস্যা। আমরা মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রী ও প্রাইমারীর ছাত্র-ছাত্রীরা সবসময় ভয়ে থাকি। যেকোন মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে এ নড়বড়ে সাঁকো।'
ভেলাকোপার কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা জাবেদ আলী বলেন, আমরা গ্রামবাসী চাঁদা তুলে এ বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করেছি। সারা বছর এ সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে আমাদের নানা দুর্ভোগে পড়তে হয়। তাছাড়া হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে এ বাঁশের সাঁকো দিয়ে জেলা সদরে হাসপাতালে যাওয়া খুবই কষ্টকর হয়ে যায়। আমরা দ্রুততম সময়ে এখানে একটা সেতু চাই।
১নং কদমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রুহুল আমিন কবির বলেন, আমরা তো ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাই। তারপরও দুর্ঘটনার ভয় তো থাকেই। আমাদের স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে খুব চিন্তা হয়। এখানে জরুরী ভিত্তিতে একটা ব্রিজ হওয়া প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে পৌর মেয়র কাজিউল ইসলাম বলেন, নামা ভেলাকোপা ব্রিজের চাহিদার বিষয়টি অনেক আগেই ঢাকায় প্রেরণ করেছি। সেখান থেকে অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে দ্রুততম সময়ে টেন্ডারের মাধ্যমে সেটির কাজ শুরু করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল