বগুড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনে জেলার ৬ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কাজ করছেন। গুরুত্বপূর্ণ স্থান বুঝে যে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। দিনরাত দায়িত্ব পালন করে মণ্ডপ মন্দিরের পরিবেশ রাখছেন শান্ত। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব সদস্যরাও টহল অব্যাহত রেখেছেন।
মন্দির মণ্ডপগুলো পরিদর্শন করছেন জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম ও জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। পরিদর্শনকালে পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় ও শৃঙ্খল রাখতে আরো করনীয় বিষয়ে কাজ করছেন।
জানা যায়, বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলায় এবার ৭০৭টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। পুজা শুরু হওয়ায় ভক্ত, দর্শনার্থীরা আসছেন। প্রতিটি মণ্ডপে ভিড় বেড়েছে। দিনে রাতে বিভিন্ন মণ্ডপে ভিড় করছেন ভক্তরা। বগুড়ায় পূজা উদযাপনকে ঘিরে বগুড়া জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বরাবরের মতো শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে শহরের বিভিন্ন সড়কে যানজটমুক্ত, মাদকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক অবস্থায় থাকার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবং দুর্গাপূজাকে সার্বজনীন করে তুলতে বিভিন্ন সভা-সমাবেশও করা হয়েছে। মণ্ডপগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ বুঝে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
মণ্ডপে প্রবেশের সড়কে যেন যানজট সৃষ্টি না হয় সেজন্যও কাজ করছে পুলিশ সদস্যরা। নেয়া হয়েছে তিনস্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা। এদিকে বাহারি সাজে সাজানো হয়েছে পূজা মণ্ডপগুলো। রঙিন বাতি দিয়ে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। মণ্ডপ এর আশে পাশে বসেছে মেলা। দর্শনার্থীরা সে মেলা থেকে কেনাকাটা করছেন।
গত শুক্রবার ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। ২১ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ২২ অক্টোবর মহাঅষ্টমী, ২৩ অক্টোবর মহানবমী এবং ২৪ অক্টোবর দশমী তিথি প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় উৎসব দুর্গাপূজা। দেবী দুর্গা পুত্র কন্যাসহ কৈলাশে ফিরবেন ঘোড়ার পিঠে। এবছর দশভূজার আগমন ও গমন দুই-ই ঘোটকে বা ঘোড়ায়। ভক্ত অনুরাগীরা এখন ঢাকের শব্দে মেতে উঠেছেন।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রশিদ জানান, জেলার প্রতিটি পূজা মণ্ডপে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পূজা মণ্ডপগুলোতে থাকছে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়। প্রায় দেড় হাজার পুলিশ সদস্য ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। কেউ আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। থাকছে গোয়েন্দা নজরদারি। নিরাপত্তার জন্য মণ্ডপে মণ্ডপে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। এছাড়াও প্রতিটি মন্দিরে আনসার বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক রয়েছেন। সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছয় হাজারে বেশি সদস্য নিরাপত্তার জন্য কাজ করছেন।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে জেলার বিভিন্ন মণ্ডপ পরিদর্শন করা হচ্ছে। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পূজা সম্পন্ন হবে। নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর পাশাপাশি নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী গঠন ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের নির্দেশ মত কাজ হচ্ছে। সবার সহযোগিতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যদিয়ে বগুড়ায় উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হচ্ছে দুর্গাপূজা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মণ্ডপগুলোতে বেশ উৎসব দেখা গেছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল