‘আমি এহন ট্রলার ঘাট দিয়া ছারমু। নদীর মধ্যে যাইয়া বেইন্নাকালে আবার ফোন দিমু। হারা রাইত আমিও ঘুমাইছি। বেইন্নাকালে উইঠ্ঠা মোবাইলে কল দিলে হে আর ফোন ধরে না। আইজ সাত দিন হইয়া গেছে ফোন বন্ধ। কোন খবর নাই।’ কথাগুলো বলছিলেন নিখোঁজ জেলে সাইফুলের স্ত্রী নুরজাহান।
ছেলে সাইফুল আর সৎ ছেলে আসাদ নিখোঁজ থাকায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মা ফরিদা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার বাজান সাইফুল সাত মাস আগে বিয়া করছে। ঘরে বউডারে রাইখ্খা সাগরে মাছ ধরতে গেছে। রাইতে আমারে কয়, মাগো আমাগো এহন ট্রলার সাগরে নামবে। আমাগো লইগগা দোয়া করবা। বেইন্নাকালে তোমাগো লগে আবার কতা কমু। বাজান আমার হেই যে ফোন বন্ধ করছে আর পাই না।’
নিখোঁজ স্বামীর কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নুরজাহানসহ স্বজনরা। তাদের পরিবারে এখন চলছে শোকের মাতম। সাইফুল দুই বছর পর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি কাজিকান্দা গ্রামের দিদার মৃধার ইলিশ জালের ট্রলারে মাসে ১৮ হাজার টাকায় কাজ নিয়ে সাগরে যান। ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতের আগের দিন মঙ্গলবার কলাপাড়ার মহিপুর থেকে আরো ৮জনসহ মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। কিন্তু মঙ্গবারের পর পরিবারের কারো সাথে আর কথা হয়নি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গলাচিপা উপজেলার সদর ইউনিয়নের চরখালী গ্রামের সোহরাব মাতব্বরের ছেলে সাইফুল। আর তার আরেক ছেলে আসাদ থাকে রাঙ্গাবালীর মৌডুবী গ্রামে। সাইফুল ও আসাদ ২২ দিন আগে রাঙ্গাবালীর মৌডুবী গ্রামের দিদার মৃধার ট্রলারে মাছ শিকার করতে যান। গত মঙ্গলবার রাতে তারা কলাপাড়ার মহিপুর থেকে সাগরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। ঘূর্ণিঝড় মিধিলির পর আর তাদের কোন খোঁজ পাওয়া যায় নাই। এ বিষয়ে গলাচিপা থানায় সাইফুলের বড় বোন লিমা বেগম একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এদিকে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির খবর জানত না সাইফুলের পরিবার।
লিমা বেগম বলেন, এতদিন গ্রামবাসী প্রশাসনকে জানাতে না করেন। প্রশাসন জানলে ঝামেলা হতে পারে। এখন কোন উপায় না পেয়ে গলাচিপা থানায় জিডি করছি।
এ বিষয়ে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ শোণিত কুমার গায়েন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মিধিলিতে উপজেলার চরখালী গ্রামের সাইফুল নিখোঁজ হয়। ঘটনার পাঁচ দিন পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ বিষয়ে সাইফুলের বড় বোন লিমা বেগম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। আমরা বিষয়টি আমলে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ খবর নিচ্ছি।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল