দুর্ঘটনা হ্রাস এবং মানুষের জীবন রক্ষায় চালক, চালকসহকারীসহ সাধারণ যাত্রীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মহাসড়কের নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়ন। পাঁচ জেলার মহাসড়কের নিরাপত্তায় কাজ করতে গিয়ে গত এক বছরে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে সাড়ে ৩৩ হাজার মামলা দায়ের এবং প্রায় ১১ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করেছে। তবুও এখনো নিরাপদ হয়ে উঠেনি মাহাসড়ক। দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৯০ জন এবং আহত হয়েছে ৪২০ জন।
জানা যায়, হাইওয়ে পুলিশ গঠনের পর রাজশাহী বিভাগের ১৬ জেলা নিয়ে কাজ শুরু হয়। পরে রংপুর বিভাগ গঠন হলে হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়ন করা হয়। বগুড়া রিজিয়নে রাজশাহী বিভাগ ধরা হলেও কার্যক্রম আছে ৫টি জেলায়। জেলাগুলো হলো বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর ও রাজশাহী। আর কার্যক্রম নেই চাপাঁইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলায়। এই তিন জেলায় সড়ক মহাসড়কের নিরাপত্তায় জেলা পুলিশ বিভাগ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। পাঁচ জেলার মধ্যে বগুড়া সীমানার হাইওয়ে পুলিশের দুই ক্যাম্প মিলিয়ে ১০৮ কিলোমিটারজুড়ে নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে, মহাসড়কের উপর অবৈধ যানবাহন চলাচল না করা, যানবাহন চলাচলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখা, হাট-বাজার, যানবাহনের অবৈধ স্ট্যান্ড সরিয়ে ফেলা, দোকানপাট ও ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ, পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি বন্ধ, যাত্রীদের হয়রানি যেন না করা হয়, প্রতিবন্ধকতা দূর করা, চোর ডাকাত গ্রেফতার, নিরাপদ ও শৃঙ্খলার সঙ্গে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল করা। এসব নিয়মের অনিয়ম হলে আইন অনুযায়ী মামলা ও জরিমানা প্রয়োজনে সচেতনতার মাধ্যমে মহাসড়ক নিরাপদ রাখার কাজ করে যাচ্ছে।
হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়ন সূত্রে জানা যায়, গত ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পাঁচ জেলার বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত টহল, চেকপোস্ট ও মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে কাজ করছে। এ সময়ের মধ্যে চালক লাইসেন্স ব্যতীত মোটরযান গণ পরিবহন চালানোর অভিযোগে ২ হাজার ৮০৬টি মামলা দায়ের করা হয়। রেজিস্ট্রেশন না থাকায় ৬০টি মামলা, ফিটনেস না থাকায় ১১ হাজার ১৩৫টি মামলা, মোটরযানের বাহ্যিক পরিবর্তন করায় ৪৫টি মামলা, অতিরিক্ত ওজন পরিবহনে ৩৩৯টি মামলা, অতিরিক্ত গতিতে চলায় ৪ হাজার ২১৭টি মামলা, কালো ধোয়া নির্গত হওয়ায় ১ হাজার ৯৬১টি মামলা, নিষিদ্ধ ঘোষিত যানবাহন চালানোর জন্য ১৫ হাজার ৫৪টি মামলাসহ বিভিন্ন আইনে মোট মামলা দায়ের করা হয় ৩৩ হাজার ৫০৩টি। এরমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩১ হাজার ৬০০টি মামলার। মামলা ও জরিমানা খাত থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ১০ কোটি ৯৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫২৫ টাকা। গত এক বছরে মোট দুর্ঘটনা হয়েছে ৩৯৫টি। এতে নিহত হয়েছে ২৯০ জন আর আহত হয়েছে ৪২০ জন। মামলা দায়ের হয়েছে ৩৪০টি।
হাইওয়ে পুলিশের এই কাজ করে যাওয়ার পরেও মহাসড়ক নিরাপদ হয়ে উঠেনি। চালক, হেলপার ও সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবেই এখনো ঘটছে দুর্ঘটনা, হারাচ্ছে প্রাণ। মহাসড়কের কোথাও কোথাও এখনো বসে হাট বাজার, বসে দোকান পাট। ইচ্ছেমত যানবাহন পার্কিং করায় লেগে থাকে যানজট। কোন কোন বাসস্ট্যান্ডে হয়রানির শিকার যাত্রীরা। মহাসড়ক দিয়ে ট্রাকগুলো এখনো চলছে ওভারলোডিং নিয়ে।
হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার আলী আহম্মেদ হাশমি জানান, বগুড়া শহরের প্রবেশপথ মহাসড়কের বনানী, সাবগ্রাম, লিচুতলা, মাটিডালিসহ বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকলে সেসব যানবাহনের নামে মামলা প্রদান করা হচ্ছে। মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। নৈশকালিন মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে নিয়মিত টহল ব্যবস্থা রয়েছে। বগুড়া সীমানায় দু’টি হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকার ভিত্তিতে এই ক্যাম্প গড়েছেন। বগুড়ায় যে দুটি হাইওয়ে ক্যাম্প রয়েছে তা হলো শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্প। এর এলাকা সিরাজগঞ্জের বগুড়া বাজার থেকে বগুড়া শহরের বনানী পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার। আর অপরটি বগুড়ার কুন্দারহাট থেকে গাইবান্ধার রহবল পর্যন্ত ৫৮ কিলোমিটার।
গত এক বছরে রাজস্বখাতে আয় হয়েছে ১০ কোটি ৯৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫২৫ টাকা। আর বিভিন্ন আইনে মোট মামলা দায়ের করা হয় ৩৩ হাজার ৫০৩টি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত