ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের ছত্রকান্দা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা তারা মিয়ার ছেলে রাকিবুল ইসলাম মিলন (৪০)। তিনি চাকরি করতেন ঢাকায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে লিফটম্যান হিসেবে। চাকরির সুবাদে পরিচিতদের মাধ্যমে সম্প্রতি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবারের জন্য তদবির করে ত্রাণ হিসেবে কয়েক বান্ডিল টিন সহায়তার বরাদ্দ আনেন। মঙ্গলবার সকালে একটি পিকআপে করে নিজের পরিবারের সদস্যদের সাথে আশপাশের গ্রামের কয়েকজনকে নিয়ে সেই টিন আনতে যাচ্ছিলেন ফরিদপুরের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে।
কিন্তু পথে বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে মিলনের স্ত্রী সুমি বেগম (৩৩) ও দুই সন্তান আবু রায়হান (৬), আবু সিনান রুহানসহ (৫) ১৪ জন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মিলনের মা খুড়িয়া বেগম। দুর্ঘটনায় মর্জিনা বেগম (৭০) নামে মিলনের এক নানী শাশুড়িরও মৃত্যু হয়েছে। মর্জিনা বেগম একই গ্রামের ওহাব মোল্লার স্ত্রী।
রাকিবুল ইসলাম মিলনের মামাত ভাই নুরুজ্জামান খসরু বলেন, ‘ঢাকা থেকে কয়েকটি দরিদ্র পরিবারের জন্য ত্রাণের টিনের ব্যবস্থা করে সোমবার বিকেলে বাড়িতে আসে মিলন। সকালে ফরিদপুরে রওনা হয়। তার আগে গত রাতে সর্বশেষ কথা হয়েছিল তার সাথে। বলেছিল যে ত্রাণের টিনগুলো বুঝিয়ে দিয়ে ওই পথেই চলে যাবে ঢাকা। কিন্তু এটিই যে তার শেষ যাওয়া সেটি কেউ জানতো না।
খসরু আরো জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা তারা মিয়ার তিন ছেলের মধ্যে রাকিবুল ইসলাম মিলন মেজো ছিলেন। তার বড় ভাই ফরিদুল ইসলাম স্কুলশিক্ষক, আর ছোট ভাই হাবিবুর রহমান মাস্টার্স পাশ করে আলফাডাঙ্গা সদরে মোবাইল টেলিকমের দোকান করেন। আট বছর আগে আলফাডাঙ্গার বানা ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের রোকায়েশ মোল্লার মেয়ে সুমির সাথে তার বিয়ে হয়।
নিহত রাকিবুলের ফুফাত ভাই মকিবুল ইসলাম এভাবে পিকআপে যাত্রী চলাচলের ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ‘এভাবে সকলের সামনে পিকআপে ১৫-২০ জন মানুষ যাত্রা করল, অথচ কেউ কিছু বলল না! সড়কপথে এভাবে যাত্রী চলাচল নিষিদ্ধ হলেও কেউ সে আইন মানে না। আবার যাদের দেখভাল করার কথা তারাও কিছু বলে না।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের তেঁতুলতলা এ্যাবলুম হাইওয়ে রেষ্টুরেন্টের সামনে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে বাস-পিকআপ মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে ১১ জন নিহত হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, সেখানে মৃত্যু হয়েছে আরো তিনজনের। ঘটনার খরব পেয়ে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মেহেদী হাসান নিহতদের বাড়ি গিয়ে স্বজনদের শান্তনা দিয়ে শোক প্রকাশ করেন।
বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শহিদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন একই পরিবারের ৪ সদস্যসহ মোট ১৪ জন এ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে। এটা আসলেই হৃদয় বিদারক ঘটনা। শোকসন্তপ্ত পরিবারদের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল