নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ও তিলকপুর দুই ইউনিয়নকে বিভক্ত করেছে ছোট যমুনা নদী। দুই ইউনিয়নের মানুষের মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা দড়িটানা নৌকা। প্রতিদিন অন্তত দেড় হাজার মানুষ দুই ইউনিয়নে যোগাযোগ করে একটি মাত্র নৌকার উপর ভর করে। যুগের পর যুগ পার হলেও দুর্ভোগের মুক্তি মেলেনি আজ পর্যন্ত।
এলাকাবাসীর দাবি, এই পারঘাটিতে একটি সেতু হলে যেমন ভোগান্তি কমবে, তেমনি গতি আসবে অর্থনীতিতে। বর্ষা মৌসুমে ছোট যমুনার পানিতে যখন টইটুম্বর, তখন এক ভয়ংকর রুপ ধারণ করে। আবার শুষ্ক মৌসুমে কমে আসে পানি। এই দুই মৌসুমে দড়িটানা নৌকার উপর ভর করে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয় দুই পাড়ের বাসিন্দাদের।
আবার ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে শিক্ষার্থীরা। বেশ কয়েকবার নৌকা ডুবে ঘটছে দুর্ঘটনা। নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে বই খাতা ও পোশাক ভিজে যায় শিক্ষার্থীদের। ছোট যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে বক্তারপুর গ্রাম। গ্রামে রয়েছে হাট-বাজার, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, একটি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়। এই গ্রাম থেকে দুই কিলোমিটার দূরে দক্ষিণে বাইপাস শিবপুরে এবং আরেকটি ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ত্রিমোহনীতে রয়েছে সেতু। বাধ্য হয়ে দুই পাড়ের বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন।
বক্তারপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, চাকলা নতুন হাটে নদীর ওপার থেকে লোকজন এসে বাজার করে নিয়ে আবার ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়। আমাদের একটা একান্ত ব্রিজের খুব দরকার। কারণ পাশে যে একটা ব্রিজ আছে, সেটা প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে। আরেকটা ২ কিলোমিটার দূরে। এতে করে শিক্ষার্থীরাও ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। চাকলা ঘাটে ব্রিজ হলে হাটটাও জাঁকজমক হবে। আবার অন্যদিকে ওপারের বাসিন্দারাও খুব সহজে পারাপার হতে পারবে।
চাকলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সোহেলী পারভীন বলেন, আমার বাড়ি ইকরতাড়া গ্রামে। মানে নদীর ওপারে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নৌকা দিয়ে পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসে। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বৃদ্ধি হওয়ার কারণে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা যখন পার হয়, তারা ঝুঁকির মধ্য দিয়ে পার হয়। অনেক সময় নৌকা ডুবির ঘটনাও ঘটেছে। এ অবস্থায় নদীর উপর একটা ব্রিজ নির্মাণ জরুরি।
চাকলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন-অর রশীদ বলেন, চাকলা উচ্চ বিদ্যালয় ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬০০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। যার অধিকাংশ নদীর ওপার থেকে অর্থাৎ ইকরতাড়া গ্রাম থেকে আসে। শিক্ষার্থীদের নদী পার হওয়ার সময় একটি নৌকা দিয়ে পার হতে হয়। নদী পার হওয়ার সময় বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে করে শিক্ষার্থীদের বই খাতা ভিজে যায়। তখন পাশের স্থানীয় বাসিন্দারা সহযোগিতা করে তাদের উদ্ধার করে। তা না হলে অনেক বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতো শিক্ষার্থীরা।
নওগাঁ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, নওগাঁ সদর উপজেলার ছোট যমুনা নদীর উপর চাকলা খেয়া ঘাটে স্থানীয় একটি ঘাট রয়েছে। এখানে খেয়া ঘাটের মাধ্যম দিয়ে শিক্ষার্থীরা পারাপার হয়। তবে বর্ষাকালে পার হতে বেশ কষ্ট হয়। এখানে আমাদের একটি ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। আসলে এগুলো ব্রিজ আমরা নির্মাণ করে থাকি স্থানীয় সাংসদ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অনুমতিক্রমে তাদের সাথে আলোচনা করে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই