সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলায় নিহত ১৫ পুলিশ সদস্যের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন ওসি, পাঁচজন এসআই, একজন এএসআই ও আটজন কনস্টেবল রয়েছেন।
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আব্দুল হান্নান মিয়া জানান, সিরাজগঞ্জ পুলিশ লাইনে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার বেলা ১২টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নিহত ১৩ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ছাড়া ঢাকায় রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত দুইজনের মরদেহ সেখান থেকেই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, নিহতদের ময়নাতদন্ত করা হয়। ৪ আগস্ট এনায়েতপুর থানায় আন্দোলনকারীদের হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এসব পুলিশ সদস্যরা নিহত হন।
নিহতরা হলেন-চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদরের মহারাজপুর গ্রামের মাহতাব মন্ডলের ছেলে ও এনায়েতপুর থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক, পাবনার সুজানগর উপজেলার ভাদরভাগ গ্রামের শাহাদত হোসেন খানের ছেলে এসআই রইজ উদ্দিন খান, একই উপজেলার মানিকহাট গ্রামের প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসের ছেলে এসআই প্রনবেশ কুমার বিশ্বাস, নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার জলঢাকা বাজার এলাকার খলিলুর রহমান মন্ডলের ছেলে এসআই মো. তহছেনুজ্জামান, দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার দেবকুন্ডা গ্রামের মনছুর আলী মোল্লার ছেলে আনিছুর রহমান মোল্লা, নওগা সদরের কোমায়গাড়ি গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে এএসআই ওবায়দুর রহমান, পাবনা সুজানগর উপজেলার খয়রান গ্রামের সেকেন্দার আলী মল্লিকের ছেলে কনস্টেবল আরিফুল আযম, একই উপজেলার বড়ুখাপুর গ্রামের আবু জাফরের ছেলে কনস্টেবল রিয়াজুল ইসলাম, নওগার পত্নীতলা উপজেলার আমন্তপুর গ্রামের তোজাম্মেল হক শাহের ছেলে কনস্টেবল রবিউল আলম, পাবনার সাথিয়া উপজেলার হাঁড়িয়া গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে কনস্টেবল হাফিজুল ইসলাম, পাবনার ফরিদপুর উপজেলার আগপুংগলী গ্রামের আল আমিন মোল্লার ছেলে কনস্টেবল আব্দুস সালেক, রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের লোকমান আলীর ছেলে কনস্টেবল লোকমান আলী ও একই উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে কনস্টেবল শাহিন উদ্দিন।
ঢাকায় রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত দুইজনের মধ্যে এসআই নাজমুলের নাম জানা গেলেও অপর কনস্টেবলের নাম পরিচয় বিস্তারিত জানা যায়নি।
সিরাজগঞ্জের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থানার পরিদর্শক শাহিনুল আলম বলেন, ওইদিন সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় তিন দফায় হামলা চলানো হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চেয়েছিলেন কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় যে যার মতো দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন কর্তব্যরত প্রায় ৪০ জন পুলিশ সদস্য। তাদের কেউ থানার ছাদে, কেউ পাশের বাড়িতে, কেউ শৌচাগারে, কেউবা জঙ্গলে আশ্রয় নেন। কিন্তু সেখান থেকেই খুঁজে এনে একে একে ১৪ জনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে হামলাকারীরা।
তিনিও আরও জানান, হামলার সময় থানা কার্যালয়ে নিচ তলায় থাকা আমরা ৯ পুলিশ সদস্য কৌশলে ভবনের ছাদের ওপরে গিয়ে পানির ট্যাংকের নিচে লুকিয়ে পড়ি। হামলাকারীরা প্রথমে থানা কার্যালয়ের নিচতলায় মূল ফটকে অগ্নিসংযোগ করায় তারা আর ওপর ওঠেনি। আমরা সেই পানির ট্যাংকের নিচে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯ পুলিশ সদস্য অবস্থান করতে থাকি। সন্ধ্যায় সেনা সদস্যদের গাড়ির হুইসেল শুনে আমরা সেখান থেকে বের হই। তাদের কাছে সাহায্য চাইলে তারা আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমার সঙ্গে থাকা পুলিশ সদস্যদের সবাই শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই