ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতির দিকে রয়েছে। পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার উঁচু স্থান থেকে পানি অনেকটা নেমে গেছে। ফেনী শহরের প্রধান প্রধান সড়ক থেকে পানি প্রায় নেমে গেলেও শহরের নিম্নাঞ্চল এখনও বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। ফেনী সদর, সোনাগাজী ও দাগনভূঞার বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে রয়েছে। তবে পুরো জেলার গ্রামীণ সড়ক ও নিম্নাঞ্চল এখনও তলিয়ে রয়েছে।
ফেনীতে এবারের ভয়াবহ বন্যায় ত্রাণ বিতরণে সুষম বন্টন হয়নি ও অপেক্ষাকৃত বেশি দুর্গতদের উদ্ধারের তৎপরতায় অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে দুর্গতদের মাঝে। অনেকেই পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাননি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ভয়াবহ বন্যায় ফেনী শহরসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় পানি বাড়ি ছাদ ছুয়েছে। কোথায়ও কোথায়ও পানি ছাদের উপর দুই তলায় উঠে পড়ে। বন্যায় জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ৮ লাখ মানুষ।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও প্রবল বর্ষণে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ২৩টি স্থানের বাঁধ ভেঙ্গে ১৯ তারিখ দিবাগত রাতে ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজি উপজেলা প্লাবিত হয়। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পানি প্রায় ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতায় উঠে যায়। বাসিন্দারা কিছু বুঝে উঠে আগেই দুটি উপজেলা পুরোপুরি প্লাবিত হয়।
বন্যার পানি খুব দ্রুত জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়কের ৭ থেকে ৮ ফুট উচ্চতায় উঠে পড়ে। পুরো জেলা পরিণত হয় নদীতে। যে সড়কে সব সময় চলতো বিভিন্ন ধরনের গাড়ি সেখানে টানা ৫ থেকে ৬দিন ধরে চলে বড় বড় নৌকা ও স্পিডবোট।
বন্যার পর পুরো দেশ থেকে হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক হাজার খানেক বোট ও পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ নিয়ে দুর্গত এলাকায় যায়। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো উদ্ধার তৎপরতা ত্রাণ বিতরণের নামে। স্থানীয়দের অভিযোগ উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ বিতরণে বেশি ক্ষতিগ্রস্তরা হয়েছে অবহেলিত। সরকারের কোন বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে তারা পায়নি তেমন কোন সহযোগিতা। বেশি বিপদগ্রস্ত, ঝুঁকিপূর্ণদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি কেউ। দুর্গত এলাকায় বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় তারা যোগাযোগ করতে পারেননি কারো সাথে। স্বজনরা প্রশাসন, বিভিন্ন বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতা চেয়েও পাননি।
প্রতিবছর পরশুরাম ওফুলগাজীতে বন্যা হয়ে থাকলেও এবারের মতো বন্যা দেখনি কেউ। আগাম বার্তা না পাওয়ায় তারা বেশি বিপদে পড়েছেন বলে জানাগেছে। হঠাৎ ঘরবাড়িতে পানির উচ্চতা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি বাড়তে থাকায় তারা যে যার মতো ছুটাছুটি করে আশপাশের বহুতল ভবনে, মসজিদে ও বিভিন্ন বহুতল স্কুলে আশ্রয় নেয়। কেউ কেউ নিজ বাড়ির ছাদে ও চালে উঠে পড়ে। এসব এলাকায় সাধারণত একদিন বা দুই দিন বন্যার পানি থাকলেও এবার দীর্ঘস্থায় বন্যায় তারা প্রতিদিন মৃত্যুর সাথে লাড়াই করেছেন। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাওয়ার না পেয়ে তারা সাবাই অসুস্থ হয়ে যায়। এই জন্য প্রশাসনের সমন্বয়হীনতাকেই দুষছেন তারা।
স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, ফুলগাজী ও পরশুরামে উঁচু স্থান ছাড়া ভেতরের দিকে দুর্গম এলাকায় আসলে উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ দেয়া খুব বেশি সম্ভব হয়নি। জোয়ারের কারণে ও বিভিন্ন জায়গা তারা না চেনার কারণেই দুর্গম এলাকায় যেতে পারেনি। সেখানে যাওয়ার আসলে কোন পরিস্থিতি ছিলো না। পর্যাপ্ত পরিমান ত্রাণ আছে। বিতরণ ও করা হচ্ছে।
দুর্গতরা জানান, একটি স্পিডবোট বা সাধারণ বোটে যতজনের জায়গা হয় উদ্ধারকারীদের সংখ্যাও ছিলো প্রায় ততজন। তাহলে তারা কিভাবে উদ্ধার করবে। এজন্য তারা সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন।
বিডি প্রতিদিন/এএ