মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধ আবারও তীব্রতর হয়ে উঠেছে। একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে ভূমিকম্পনের মতো অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। এ অবস্থায় সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি নাফ নদীতে টহল জোরদার করেছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড।
সীমান্ত এলাকার স্থানীয়রা জানান, টানা কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর বুধবার রাত থেকে শুরু হয় দুই পক্ষের এই যুদ্ধ। গত সোমবার বিকাল পাঁচটা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যায়। এছাড়া বুধবার রাতে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপের আশপাশের পাঁচটি এলাকা সুধাপাড়া, মংনিপাড়া, সিকদারপাড়া, উকিলপাড়া দখল করে নেয়। মর্টারশেল ও ড্রোন হামলা চালিয়ে গ্রামগুলো থেকে লোকজনকে উচ্ছেদ করা হয়। তাতে অনেকে হতাহত হন। গভীর রাতে আরাকান আর্মি মংডুর টাউনের অভ্যন্তরে থাকা সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির পৃথক দুটি ব্যাটালিয়নকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে রেখেছে বলে জানা গেছে। সেনা ও বিজিপি সদস্যরা আরাকান আর্মির অবস্থান লক্ষ্য করে ছুড়ছে মর্টারশেল, আর্টিলারি ও মিসাইল।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, টানা ছয় মাসের বেশি সময় ধরে মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়ছে আরাকান আর্মি। ইতোমধ্যে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপের আশপাশে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৫টি সীমান্তচৌকি, রাচিডং-বুচিডং টাউনশিপের বেশ কয়েকটি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি দখলে নিয়েছে। মাসখানেক ধরে মংডু টাউন এবং পাশের পাঁচটি গ্রাম সুধাপাড়া, মংনিপাড়া, সিকদারপাড়া, উকিলপাড়া, নুরুল্লাপাড়া দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে আরাকান আর্মি। গ্রামগুলো রোহিঙ্গা অধ্যুষিত। গ্রামগুলোর বিপরীতে (পশ্চিমে) নাফ নদীর এপারে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের খাংগারডেইল এলাকার বাসিন্দার শহিদুল ইসলাম বলেন, যেভাবে হঠাৎ মিয়ানমার ওপারে থেমে থেমে বোমার বিকট শব্দে কাঁপছে আমার বাড়ি। এ রকম শব্দ কোনোদিন শুনি নাই। মনে হয়েছে আমার বাড়ি ভেঙে পড়ে যাচ্ছে। আতঙ্কে ঘুমাইতে পাচ্ছি না।
টেকনাফ পৌরসভার জালিয়া পাড়ার বাসিন্দা মোঃ সেলিম বলেন, বুধবার রাতে মিয়ানমার ওপারে যেভাবে মর্টারশেলের শব্দ হয়েছিল। মনে করেছিলাম ভূমিকম্পে বাড়ি ঘর ভেঙে যাচ্ছে। বজ্রপাতের মত বিকট শব্দ হচ্ছে।
সাবরাং মন্ডল পাড়ার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এমন বিকট শব্দ আগে কখনো শুনিনি। গভীর রাতে মিয়ানমারের গোলাগুলির শব্দে বাড়ির ভিতরে পর্যন্ত থাকা যাচ্ছে না। ভোর পর্যন্ত বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে। মনে হচ্ছে মর্টারশেল নিজের বাড়ির ত্রিসীমানায় বিস্ফোরণ হচ্ছে।
সাবরাং ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ফয়েজ আহম্মদ বলেন, বুধবার মধ্যরাতে এমনভাবে বিকট শব্দ হয়েছে মনে হয় বিল্ডিং ভেঙে পড়ছে। মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব কম তাই আমরা তাদের গোলাগুলির শব্দে ঘুমাতে পারছি না।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, সীমান্ত দিয়ে কাউকে অনুপ্রবেশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। অনুপ্রবেশের সময় বেশি কিছু রোহিঙ্গাকে নাফনদী থেকে পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল