বন্যার পানি আসার দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও বন্দিদশা থেকে মুক্তি মেলেনি লক্ষ্মীপুরবাসীর। এখনো পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ। এ অবস্থায় দখল দূষণে মৃত প্রায় ১১০টি নদ-নদীর দুরবস্থাকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, স্থানীয়দের বাধার কারণে একাধিকবার চেষ্টা করেও দখলমুক্ত করতে পারেনি তারা। এসব খাল-নদীর নাব্যতা ফেরাতে রাজনৈতিক সহায়তা আর আদালতের উপর জোর দিচ্ছেন সচেতন নাগরিকরা।
সরেজমিন জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মেঘনার কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা জনপদ লক্ষ্মীপুর। জেলায় রয়েছে ছোট বড় অন্তত ১১০টি খাল-নদী। এর মধ্যে অন্যতম ডাকাতিয়া, রহমতখালি, ভুলুয়া ও ধীরেন্দ্র খাল। নোয়াখালি ও ফেনীর বন্যার পানি এসব নদী হয়ে মেঘনায় মেশার কথা থাকলেও এবার তা হয়নি।
বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ স্থাপনা, আর প্রায় ২৫০০ বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ করে ফেলা হয়েছে। এতে দখল-দূষণে এসব খাল-নদী নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। একই সাথে অবিরাম বৃষ্টির এসব পানি ৫ থেকে ৬ ফুট বেড়ে জলাবদ্ধতা ও বন্যায় পরিণত হয়েছে।
দ্রুত ভেসে গেছে ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, পুকুর ও জলাশয়।
এতে পানিবন্দি হয়ে চরম ভোগান্তিতে মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছেন জেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৮ লাখ মানুষ। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অব্যাহত রয়েছে বন্যা। এখনো পানিবন্দি রয়েছে ৩ লাখ মানুষ। মৎস্য, কৃষি ও প্রাণী সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে চলমান বন্যায়। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলার আড়াই লাখ কৃষক পরিবার, জেলার মৎস্য চাষি ও খামারিরা।
এদিকে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও ছাত্র সমন্বয়কদের যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ খুলে দেওয়া হযেছে। বহুস্থানে কচুরিপানা ও আবর্জনা পরিষ্কার করে পানির প্রবাহ ঠিক করলেও এখনো ধীরগতিতে নামছে পানি।
লক্ষ্মীপুর সনাক সভাপতি অধ্যাপক জেড এম ফারুকী বলছেন, খাল-নদীর নাব্যতা ফেরানো এখন সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সহায়তা আর আদালতের নির্দেশনা অত্যাবশ্যকীয়। আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গঠনে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদুজ্জামান খান বলেন, আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু বাধার মুখে খাল-নদী দখল-দূষণে কার্যকরী পদক্ষেপে ব্যর্থ হয়েছি। জমির মালিকানা ও আইনি কিছু জটিলতা রয়েছে। এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন এ কর্মকর্তা।
বিডি প্রতিদিন/এমআই