ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে নিজ হাতে গুলি করে প্রেমিকাকে হত্যা করা ছেলেকে রক্ষায় অভিনব কৌশল নেন মা। একদিকে মনপুরা দ্বীপে পালাতে নিজেই এগিয়ে দিয়ে আসেন, অন্যদিকে থানায় গিয়ে ছেলে হারিয়ে গেছে মর্মে অভিযোগ দেন তিনি। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে চৌকস গোয়েন্দাদের কৌশলে। অর্ধেক পথে গিয়ে ধরা পড়ে যায় ছেলে।
তৌহিদের মা ময়না বেগম গত ১ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ছেলে হারানোর অভিযোগ দায়ের করেন। অথচ ওইদিনই সন্ধ্যায় তিনি, তার মেয়ে ও মেয়ে জামাই খুন করে পালানো ছেলেকে সদরঘাট গিয়ে লঞ্চে তুলে দিয়ে আসেন। তাদের ৩ জনকে একসাথে সদরঘাটে সনাক্ত করে ডিবি। ওই সূত্রেই পরদিন ২ ডিসেম্বর ভোরে গ্রেফতার হয় তৌহিদ।
তৌহিদের মা ময়না বেগমের দায়েরকৃত অভিযোগে বলা হয়, ‘২৯ নভেম্বর বিকাল ৩টায় বাসা থেকে বের হয় তৌহিদ। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও সে বাড়ি ফিরেনি। এছাড়া ‘সকল জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি’ বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
সাহিদা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা ডিবি পুলিশের উপ পরিদর্শক মো. ইয়াসিন জানান, নিহত সাহিদা ইসলাম রাফার (২৪) একাধিক সম্পর্ক নিয়ে তৌহিদ শেখ তন্ময়ের (২৩) সাথে দ্বন্দ ছিলো। ঘটনার আগের দিন রাতে (২৯ নভেম্বর, শুক্রবার) সাহিদাকে ফোন করে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বেড়োতে বলে তৌহিদ। পরে লোকাল বাসে করে দুজনেই চলে আসে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাটে। রাতভর সেখানে ঘোরাঘুরির পর শনিবার (৩০ নভেম্বর) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে খানবাড়ি সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকায় আসেন তারা। সেখানে প্রেমিকা সাহিদা নিজেকে আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা দাবি করে প্রেমিক তৌহিদকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। আশপাশের লোকজন তাদের মধ্যে চিল্লাচিল্লি শুনে এগিয়ে আসতে থাকলে তৌহিদ ওই নারীকে নিয়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের সার্ভিস লেন ধরে পদ্মা সেতু উত্তর টোল প্লাজা থেকে ২০০ মিটার অদূরে দোগাছি ফুটওভার ব্রিজ পার করে। পথে কয়েক দফায় সাহিদাকে চড়থাপ্পড় মারে তৌহিদ। একপর্যায়ে আর রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সাথে থাকা থানা থেকে লুটকৃত পিস্তল দিয়ে প্রথমে এক রাউন্ড গুলি ছুড়লে সেটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরপরই আরও ৫ রাউন্ড গুলি ছুড়লে সেগুলো সাহিদার শরীরের বিভিন্ন অংশে বিদ্ধ হয়। মুহুর্তেই সড়কে উপুর হয়ে পড়ে মৃত্যু হয় সাহিদার।
এ হত্যা মামলায় তৌহিদকে মুন্সিগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করলে আমলী আদালত-৩ এর বিচারক ইফতি হাসান ইমরানের উপস্থিতিতে ১৬৪ ধারায় দীর্ঘ জবানবন্দি দেয় সে। এখন বিচার কার্য শুরু হয়েছে। মামলাটি আদালতের রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. ইয়াসিন জানান, হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি কেরাণীগঞ্জ ডোবা থেকে উদ্ধারের ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা হয়েছে। এছাড়া ওয়ারি থানা থেকে অস্ত্র লুটের ঘটনায় ওই থানায় দায়েরকৃত মামলায় তাকে আসামি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সব মিলিয়ে ৩ টি মামলার আসামি সে।
তিনি জানান, থানা থেকে যে অস্ত্রটি তৌহিদ লুট করে সেটি লাইসেন্সকৃত ব্যক্তি মালিকানাধীন অস্ত্র। কোন একজন ব্যক্তি অস্ত্রটি থানায় জমা রেখেছিলো। ওই ব্যক্তি চাইলে তার অস্ত্র লুটের দায়ে তৌহিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে। এতে তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা দাঁড়াবে ৪টি।
উল্লেখ্য, গত রবিবার সকালে নিহত সাহিদা ইসলাম রাফার মা জরিনা খাতুন শ্রীনগর থানায় প্রেমিক তৌহিদ শেখ তন্ময়কে প্রধান অভিযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওইদিন দুপুরে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর রাতে ময়মনসিংহ সদরের বেগুনবাড়ি এলাকায় জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয় সাহিদার।
বিডি-প্রতিদিন/শআ