নেত্রকোনা জেলায় ১৮ ঘণ্টার ব্যবধানে চাঞ্চল্যকর দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। দুর্গাপুর উপজেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে পৌর শহরের উকিল পাড়া গলির মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন শফিকুল ইসলাম (৪৫) নামের জামালপুরে কর্মরত পুলিশের এক এসআই।
আর আজ শুক্রবার সকালে নেত্রকোনা সদরের পৌর এলাকার বড়বাজারে অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক দিলীপ কুমার রায় (৭১) নিজ ঘরে খাটের নিচে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলে স্ত্রী ও স্বজনরা এসে উদ্ধার করেন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে পুলিশ এখনো কোনো হত্যার কারণ বলতে পারছে না।
![নেত্রকোনায় ১৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই খুন](https://cdn.bd-pratidin.com/public/news_images/share/photo/shares/online/2025/01/10/my190/Netrakona-Pic-Durgapur-S-I-.jpg)
এদিকে, দুর্গাপুরে শফিকুল হত্যাকাণ্ডে পাঁচ থেকে ছয়জনকে অজ্ঞাত আসামি করে শফিকুলের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে দুর্গাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। অন্যদিকে সদরের কলেজ শিক্ষকের ছেলে ঢাকা থেকে আসার পর মামলা করা হবে।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতদের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দুর্গাপুরের চন্ডিগড় ইউনিয়নের নোয়াগাও এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে শফিকুল ইসলাম জামালপুর থানায় কর্মরত ছিলেন। উপজেলা পৌর এলাকার বাগিচাপাড়ায় বসবাস করা স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ময়মনসিংহ যাওয়ার উদ্দেশ্যে ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছিলেন তিনি। শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহ যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনি একা হেঁটে যাওয়ার সময় তিন থেকে চারজন তরুণ ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে আহত করে।
ওই এলাকার একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, কোপানোর সময় শফিকুল ইসলাম দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু এলোপাতাড়ি কুপে আহত হয়ে পড়ে যান। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসার আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা কমপ্লেক্সে ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাচ্চু মিয়া জানান, সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। মামলা হয়েছে। আসামি ধরার চেষ্টা চলছে।
এদিকে, গত ১০ বছর আগে অবসরে যায়া আবু আব্বাস ডিগ্রি কলেজের কৃষিবিষয়ক শিক্ষক দিলীপ কুমার রায় নেত্রকোনা পৌর শহরের বড়বাজার এলাকায় নিজ বাসায় একাই থাকতেন। তার বাড়ি কুমিল্লা হলেও বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ি এলাকায় জায়গা কিনে নিজে বাসা করে থাকতেন। স্ত্রী ছেলের বাসায় ঢাকায় ছিলেন।
শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে এসে স্ত্রী দীপা রানী রায় বাসায় ডাকাডাকি করেন। একপর্যায়ে বাইরে থেকে তালা দেওয়া দেখে তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করেন। গিয়ে খুঁজে না পেয়ে খাটের নিচে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এসময় জীবিত রয়েছে এমন ভেবে সকলকে ডাকাডাকি করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নেত্রকোনা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার তাসমিয়া হোসেন অনন্যা বলেন, আমাদের এখানে সাড়ে ১১টার দিকে নিয়ে এলে আমরা মৃত পাই। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঘোষণা করা হয়। তবে শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বলা যাবে মৃত্যুর কারণ।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফর রহমান বলেন, বিভিন্ন আলামত সংগহ করা হচ্ছে। ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম এসে পর্যবেক্ষণ করবে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে কীভাবে খুন হলেন শিক্ষক।
এদিকে, এক রাতের ব্যবধানে এমন পরপর দুই খুনের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ