উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় গাইবান্ধার বিভিন্ন চর এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কাপাসিয়ার লালচামার ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ৩৯ মিটার এলাকায় জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলছে। অথচ ভাঙছে ২০০ মিটার এলাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই জিওব্যাগ ও জিওটিউব কোনো কাজে আসছে না। ইতোমধ্যে কাপাসিয়া ইউনিয়নের ১০০টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সেই সাথে ২০০ পরিবার ও হাজার একর ফসলি জমি ভাঙনের মুখে রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজকুমার বিশ্বাস উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের লালচামার গ্রামের ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ভাঙনের মুখে পরিবারগুলো তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে।
তিস্তায় পানি বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নৌকা ছাড়া এক চর হতে অন্য চরে যাওয়া-আসা করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের লালচামার গ্রামে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে শুধুমাত্র ভাঙন কবলিত পরিবারগুলাকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী। প্রতিবছর তিস্তায় পানি বাড়ার সাথে সাথে শুরু হয় নদী ভাঙন। চলতে থাকে বছরব্যাপী।
নদী পাড়ের মানুষের দাবি, স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘদিনেও স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধ, ড্রেজিং, নদী খনন ও সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি সরকার। যার কারণে প্রতিবছর পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি, হাজারও একর ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে নদী গর্ভে। সরকার কোটি টাকা খরচ করে ব্লক, জিওব্যাগ এবং জিওটিউব ফেলেও ভাঙন ঠেকাতে পারছে না।
কাপাসিয়া ইউনিয়নের ভাটিকাপাশিয়া লালচামার গ্রামের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩৯ মিটার এলাকায় জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলছে। কিন্তু ওই এলাকায় প্রায় ২০০ মিটার জুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। তার দাবি, ৩৯ মিটারে জিওব্যাগ ফেলে কোনো কাজ হবে না। ভাঙন ঠেকাতে গেলে গোটা ভাঙন কবলিত এলাকায় জিওব্যাগ ফেলতে হবে।
হরিপুর লখিয়ার পাড়া গ্রামের বাসিন্দা সোলেমান মিয়া বলেন, প্রতিবছর নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি, আবাদি জমি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। একজন চরবাসীকে মৌসুমে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ বার ঘরবাড়ি সরাতে হচ্ছে। কিন্তু আজও স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধের কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না।
কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জু মিয়া বলেন, তার ইউনিয়নের উত্তর লালচামার গ্রামে তিস্তার তীব্র ভাঙনে ১০০টি পরিবারের বসতবাড়ি ও শতাধিক একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্কুল, মসজিদসহ ভাঙনের মুখে শতাধিক পরিবার তাদের বসতবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে।
হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, নদী খনন, ড্রেজিং, স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধকল্পে বহুবার চাহিদা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু আজও কোনো ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র ভাঙন রোধে প্রাথমিকভাবে জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলা হচ্ছে। স্থায়ীভাবে ভাঙন ঠেকানো নাহলে চরবাসীর দুঃখ কোনোদিনও দূর হবে না। ভাঙনে প্রতিবছর পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি এবং হাজার একর ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজকুমার বিশ্বাস বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারি শুধুমাত্র শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, কাপাসিয়া ইউনিয়ন ও পুটিমারি এলাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডে সাবমিট করেছি। এটার বিষয়ে আগামী সপ্তাহে মিটিং হবে, মন্ত্রণালয়ে যাবে, স্টেপ বাই স্টেপ। এটা মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনা। এটার অনুমোদন পেলে ওইসব এলাকায় স্থায়ীভাবে সিসি ব্লক দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, জরুরি হিসেবে যেসব এলাকায় বসতবাড়ি রয়েছে, এসব বসতবাড়ি ভাঙন রোধে ৩৯ মিটার এলাকায় জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলা হচ্ছে। পুরো কার্যক্রমের জন্য কথা বলতে ঊর্ধ্বতন স্যারের সাথে দেখা করতে আসছি, যা সিদ্ধান্ত হবে তা জরুরিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই