শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

প্রাণী বিচিত্রা

প্রাণী বিচিত্রা

বনরুই আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। দেশি বনরুই বাংলাদেশে মহাবিপন্ন ও বিশ্বে কম শঙ্কাগ্রস্ত বলে বিবেচিত। ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণি আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত। পৃথিবীতে ৭ প্রজাতির বনরুই রয়েছে, তন্মধ্যে এশিয়ায় আছে তিন প্রজাতি আর এই তিনটিই বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

এরা প্রধানত চিরসবুজ ও আধা চিরসবুজ বনে বাস করে। দেশি ছাড়া অন্য দুটি প্রজাতি সব জায়গায় দেখা যায় না। চীনা প্রজাতিটি চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট এবং মালয় বনরুই শুধু সিলেটের বনজঙ্গলে বাস করে। অত্যন্ত লাজুক ও নিশাচর বলে এ দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যায় থাকা সত্ত্বেও প্রকৃতিতে বনরুইয়ের দেখা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। বাংলাদেশের স্তন্যপায়ী প্রাণিদের মধ্যে দেশি বনরুই দীর্ঘ ও সরু দেহের একটি প্রাণি। বনরুই ওজনে ২ থেকে ৯ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তিন প্রজাতির বনরুইয়ের মধ্যে আকারে দেশিগুলোই বড়। লেজ বাদে প্রায় ৬৬ সেন্টিমিটার লম্বা হয়; লেজটি হয় প্রায় ২০ সেন্টিমিটার। চীনা ও মালয়গুলো অপেক্ষাকৃত ছোট ও ছিপছিপে গড়নের হয়। ওজনে দেশি প্রজাতিটি ১০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। নাক ও দেহের নিচের দিক ছাড়া বাকি অংশ ১১-১৩ সারি শক্ত অাঁশে আবৃত থাকে। অাঁশের ফাঁকে ফাঁকে থাকে শক্ত লোম। লোমের পরিমাণ চীনাগুলোতে বেশি থাকে। দেশি বনরুইয়ের শরীরের রং হালকা বাদামি; আর চীনা ও মালয়গুলোর রং গাঢ় বাদামি। এ ছাড়া মালয়গুলোর অাঁশের রং কিছুটা সাদাটে হয়ে থাকে। তবে নাক ও অাঁশবিহীন অংশের রং কাঁচা মাংসের মতো লালচে হয়। ঘন অাঁশের কারণে মালয় ছাড়া অন্য দুই প্রজাতির বনরুইয়ের কান দেখা যায় না।

এরা অত্যন্ত অদ্ভুত প্রাণী। মাটিতে বাস করলেও গাছে চড়তে ওস্তাদ, বিশেষ করে চীনা ও মালয়গুলো। বনরুই যখন কুঁজো হয়ে দুলতে দুলতে চলে, তখন মনে হয় কোনো জীবাশ্ম বা ফসিল বুঝি জীবিত হয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। এদের দেহ, বিশেষ করে লেজ, অত্যন্ত নড়নক্ষম। লম্বা এই লেজটি কোনো গাছের ডালে জড়িয়ে বনরুই অত্যন্ত অলস ও ধীরগতিসম্পন্ন প্রাণী। সারা দিন গর্তে ঘুমিয়ে কাটায়। রাতে খাবারের খোঁজে বের হয়। খাবারের জন্য এরা মাটি শুঁকতে শুঁকতে এগোতে থাকে।

এ ছাড়া এরা মজার একটা কাণ্ড ঘটায়- নখ দিয়ে পিপীলিকার বাসা ভেঙে তার গায়ের অাঁশগুলো ছড়িয়ে দেয়। পিঁপড়াগুলো তার অাঁশের ভেতর ঢুকে পড়লে সে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পিঁপড়াগুলো পানি থেকে বাঁচতে ছোট গোলাকৃতি বা দানাদার হয়ে যখন পানিতে ভাসতে থাকে, তখন বনরুই তার সরু লম্বা জিভ দিয়ে সেগুলো মুখের ভেতর শুঁষে নেয়। সে জন্য প্রাণীটির নামকরণ হয়েছে পিপীলিকাভুক।

 

 

 

সর্বশেষ খবর