শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
গল্প

কুকুর ছানার গল্প

অমিত কুমার কুন্ডু

কুকুর ছানার গল্প

একদিন এক কুকুর লোকালয় ছেড়ে পাহাড়ের পাদদেশে চলে এলো। মানুষের কোলাহল তার মোটেও ভালো লাগছিল না। মানুষ দেখতে পেলে ছানাদের ধরে নিয়ে যায়। গলায় শিকল পরিয়ে বাড়ি পাহারার কাজে লাগিয়ে দেয়। আবার বেওয়ারিশ বলে কখনো কখনো বিষ দিয়ে মেরেও ফেলে।

কুকুর পাহাড়ের পাদদেশে এসে এক পাহাড়ি কুকুরের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতালো। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম, প্রেম শেষ পর্যন্ত বিয়ে অবধি গড়াল। স্বামী-স্ত্রী দুজনে সুখে সংসার করতে লাগল। বছর ঘুরতেই তাদের কোলে এলো চার-চারটি কুকুরছানা। দুটো ছেলে বাবু। দুটি মেয়ে বাবু। ছেলে বাবুদের নাম রাখা হলো লালু ও কালু। মেয়ে বাবুদের নাম রাখা হলো জুঁই আর চামেলি। লালু-কালু, জুঁই-চামেলি নিয়ে সুখেই কাটছিল তাদের দিন।

একদিন বাচ্চাদের রেখে কুকুর দম্পতি গেল খাবারের খোঁজে। এসে দেখে লালু নেই। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও লালুকে পাওয়া গেল না। পর দিন আবার খাবার খুঁজে এসে দেখে কালু নেই। পাহাড়ের পাদদেশ তন্ন তন্ন করেও কালুকে পাওয়া গেল না। পর দিন একইভাবে জুঁই হারিয়ে গেল। তার পরের দিন হারাল চামেলি।

বাচ্চাদের হারিয়ে কুকুর দম্পতি পাগলপ্রায়। খায় না, নায় না। ঘুমায় না। কিছুই ভালো লাগে না তাদের। সারাক্ষণ মন খারাপ করে বসে থাকে দুজন। সারাক্ষণ কাঁদে।

হঠাৎ একদিন রাতে কুকুর দম্পতি দেখল পাহাড়ের উপরে আলো জ¦লছে। মস্ত বড়ো প্রাসাদ থেকে ঠিকরে বের হচ্ছে রঙিন আলো। সেখান থেকে ভেসে আসছে সংগীতের সুমধুর সুর। কুকুর দম্পতি অন্ধকার রাতে অনেক কষ্টে পাহাড় বেয়ে উঠল চূড়ায়। চূড়ায় পৌঁছে দেখে, সেখানে সোনার সিংহাসনে কুকুররাজা বসে আছেন। তার পাশে বসে আছেন কুকুর রানি। কুকুর রাজার প্রাসাদে রাজপুত্র রাজকন্যাদের আগমন হয়েছে। সেই আনন্দে আনন্দ অনুষ্ঠান হচ্ছে।

কুকুরদম্পতি দেখল তাদের লালু-কালু, জুঁই-চামেলি জরির পোশাক পরে রাজ আসনে বসে আছে। কত খাদ্য তাদের সামনে, কত ব্যঞ্জন। গায়ে বহু-মূল্যবান অলংকার। তবু তাদের মুখ ভার! তবু কীসের যেন দুঃখ তাদের মনে! কুকুরদম্পতি অনেক কষ্ট করে কুকুর রাজার সামনে গিয়ে হাজির হলো।

কুকুর রাজার সামনে করজোড়ে দাঁড়িয়ে বলল, মহারাজ, আপনি আমাদের ছেলেমেয়েদের এখানে এনেছেন কেন? আমরা কত খুঁজেছি।

কত কষ্টে আছি ওদের ছাড়া। আমরা ভেবেছিলাম! থাক ওসব কথা। এখন যখন পেয়েছি তখন বলুন তো মহারাজ, ওদের গায়ে এই দামি পোশাকই বা কেন? আমি তো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না মহারাজ!

কুকুরের কথা শুনে কুকুর রাজা বললেন, আমি নিঃসন্তান। অনেক চেষ্টা করেও আমাদের কোনো সন্তান হয়নি। তোমার চারটা মিষ্টি সন্তান দেখে আমার খুব ইচ্ছা হলো ওদের রাজবাড়িতে নিয়ে আসতে। তুমি তো দেখতেই পাচ্ছ কত যতেœ রয়েছে ওরা। আজ ওদের রাজপরিবারের একজন করে নেবার জন্যই এই আনন্দ আয়োজন। তোমরা বাড়ি ফিরে যাও। ওদের জন্য বৃথা চিন্তা কর না। ওরা এখন থেকে রাজপুত্র রূপেই পরিচিত হবে। কুকুররাজের সঙ্গে যখন কুকুরের কথা হচ্ছে, তখন লাফিয়ে লাফিয়ে চার ছেলেমেয়ে মা-বাবার কাছে এসে হাজির। তারা বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য কান্না জুড়েছে। কেউ তাদের কান্না থামাতে পারছে না। কুকুররানি এগিয়ে এসে ছানাদের গালে চুমু খেল। আদর করতে করতে বলল, তোমরা কেন ফিরে যাবে বাবারা, এখানে কি তোমাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে? বাচ্চারা বলল, না, অসুবিধা হচ্ছে না। কুকুর রানি বলল, কেউ কি তোমাদের বকেছে? কেউ কি তোমাদের মেরেছে?

বাচ্চারা আগের মতোই মুখ ভার করে বলল, না।

তাহলে কাঁদছ কেন বাবারা? কুকুররানি প্রশ্ন করে উঠল।

আমরা বাড়ি ফিরে যাব। আমরা মা-বাবার কাছে থাকতে চাই।

কুকুর রাজা বলল, তোমরা এত সুন্দর রাজপ্রাসাদ ছেড়ে ওই মাটির ঘরে থাকতে চাও কেন? কী অসুবিধা তোমাদের? আমাদের বলো। আমরা তোমাদের সব অসুবিধা দূর করে দেব।

বাচ্চারা বলল, আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসছে এই রাজপ্রাসাদে। এখানে সবই আছে। দামি খাবার। দামি পোশাক। ভালো ঘর। সেবা করার লোক। শুধু মায়ের ¯েœহ নেই। বাবার আদর নেই। আমরা এই রাজপ্রাসাদে থাকতে চাই না। অনেক বুঝিয়েও কুকুররাজা, কুকুররানি ছানাদের রাজপ্রাসাদে রাখতে পারলেন না। ছানারা মা-বাবার সঙ্গে মাটির ঘরেই ফিরে এলো। মাটিরঘরে খাবার, পোশাক, অলংকারের অভাব হলেও, তাদের আনন্দের কোনো অভাব রইল না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর