শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা
গল্প

জনি সনির ঈদযাত্রা

রণজিৎ সরকার

জনি সনির ঈদযাত্রা

ঈদ উপলক্ষে যাচ্ছে বাড়ি। রাস্তায় ওদের নিজস্ব গাড়ি। ঈদ যাত্রায় রাস্তায় মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এ ঘরমুখো মানুষেরাই ভোগান্তিমুক্ত রাস্তা চায়।

অতিরিক্ত জ্যামে বসে বিরক্ত জনি। পাশে বসা ছোট বোন সনি। ওদের বাবার নাম গনি। আর মায়ের নাম মনি। জনি ভাবছে, জ্যামে গাড়ির দীর্ঘ লাইন কত দূর! পাশের গাড়ি থেকে শোনা যাচ্ছে শিশুর কান্নার সুর। গাড়ি থেকে রাস্তায় নেমে বিভিন্ন রকমের খাবার খাচ্ছে অনেক যাত্রী। গাড়ির দীর্ঘসারি দেখে কেউ কেউ মনে করছে এখানেই হবে রাত্রি। কেউ কেউ গাড়ির জানালা খুলে আরাম করে খাচ্ছে খোলা খাওয়া। আর কেউ কেউ দুশ্চিন্তায় ভাবছে, এখান থেকে কখন হবে যাওয়া।

বাবা মাকে সঙ্গে করে গাড়ি থেকে নামল জনি আর সনি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কেউ একজন বলছে আমরা কি আইনশৃঙ্খলা মানি। জনি আর সনির পরনে এক রঙের জামা। তাই দেখে একজন বলল, ‘কে কিনে দিয়েছেন তোমার এত সুন্দর জামা?’

মা বললেন, ‘তুমি তো বলেছ ঠিক সত্যি কথা। দুই ঈদের এটাই ঢাকা শহরের বাস্তবতা।’ রাস্তায় বিভিন্ন রকমের খাবার জিনিস ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছে শিশুরা। তাদের দেখে মায়ের উদ্দেশে জনি বলল, ‘আমরা কি দিন দিন হারিয়ে ফেলছি সত্যিকারের মানবতা। এদের মতো অনেকের জন্য এবার ঈদে কিছু করবে জন্মদাতা?’

জনি বলল, ‘আমাদের একমাত্র শ্রদ্ধেয় রণক মামা।’ লোকটি খুশি হয়ে বললেন, ‘তোমাদের মামার দেখছি রুচিশীল পছন্দ আছে বেশ, আমিও ভাগ্নে ভাগ্নির জন্য কেনাকাটা করেছি শেষ।’

জনি বলল, ‘মামার পক্ষ থেকে জানাই আপনাকে ধন্যবাদ।’

লোকটি বললেন, ‘আমাকে সময় দেওয়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।’

বাবা মায়ের হাত ধরে সনি জনি রাস্তার পাশ দিয়ে ঘুরে। গল্প করতে করতে নিজের গাড়ি থেকে চলে এসেছে বেশ দূরে।

জনি বলল, ‘বাবা, আমরা তো এখন নেই আমাদের গাড়ির কাছাকাছি।’

বাবা বললেন, ‘তাতে সমস্যা কোনো নেই গাড়ির সামনের দিকে আছি।’

সনি বলল, ‘এখন ঘুরছে না কোনো গাড়ির চাকা। ঈদে রাজধানী শহর ঢাকা থাকবে ফাঁকা।’

মা বললেন, ‘তুমি তো বলেছ ঠিক সত্যি কথা। দুই ঈদের এটাই ঢাকা শহরের বাস্তবতা।’

রাস্তায় বিভিন্ন রকমের খাবার জিনিস ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছে শিশুরা। তাদের দেখে মায়ের উদ্দেশে জনি বলল, ‘আমরা কি দিন দিন হারিয়ে ফেলছি সত্যিকারের মানবতা। এদের মতো অনেকের জন্য এবার ঈদে কিছু করবে জন্মদাতা?’

ভাইয়ের কথা শুনে বোন সনি বলল, ‘মানবসেবা করার জন্য এবার উদ্যোগ গ্রহণ কর মাতা।’

জনি বলল, ‘বাবা, অত্যন্ত দয়ালু, উদার হাতেম তাই নামের ছিলেন একজন দাতা।’

বাবা বুঝতে পারলেন, উদ্যোগটা বাস্তবায়ন করতে আমি একমাত্র ওদের মাথার ছাতা।

বাবা কিছু বলার আগে সনি বলল, ‘বাবা, এ ভোগান্তি থেকে কখন হবে যানজট নিরসন। চলমান অবস্থায় গাড়ি থাকলে ভালো হবে যাত্রীগণের মন।’

বাবা বললেন, ‘এই তো মনে হচ্ছে এক্ষুনি জ্যাম ছেড়ে ছুটবে গাড়ি। আমরা কিছু সময়ের মধ্যেই পৌঁছে যাব তোমাদের দাদা বাড়ি।’

এর মধ্যেই দাদা ফোন করে জনিকে বললেন, ‘অপেক্ষার পালা হচ্ছে না শেষ, বল তো তোমরা এখন আছ কত দূরে।’

জনি বলল, ‘আরও কিছু সময় অপেক্ষায় থাক, জ্যামের কারণে ধীরগতিতে আসতে হচ্ছে ধীরে।’

হঠাৎ রাস্তার ঘরমুখো মানুষের হৈচৈ। জ্যাম ছেড়েছে তাই নিয়ে রৈরৈ।

রাস্তায় নেমে আসার সবার মতো ওরাও দৌড়ে এসে উঠল গাড়িতে। এবারও মনে হয় না জ্যামে ছাড়া যেতে পারবে একটানা বাড়িতে। ভোগান্তিতে বিরক্ত হয়ে এখন সবার যাওয়ার ইচ্ছা খুবই তাড়াতাড়ি। জনি সনি গ্রামে গিয়ে দাদার সঙ্গে ঘুরবে বাড়ি বাড়ি। পথের ক্লান্তিতে জনি সনি ঘুমিয়ে পড়ল বাবা মায়ের কোলে। পথের দীর্ঘ লাইনের গাড়িগুলো চলছে ধীর গতিতে দোলে দোলে।

কিছু সময় পর ঘুম থেকে উঠে জনি বলল, ‘বাবা, আর কত দূর?’

বাবা বললেন, ‘কামারবাড়ি ব্রিজ পাড় হওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছি। তবে প্রায় চলে এসেছি আমাদের বাড়ির কাছাকাছি।’

বাড়ির কাছাকাছি আসার কথা শুনে খুশিতে জনি বলল, ‘রাস্তায় যানজটে আমাদের হয় অনেক ক্ষতি। যদি জানতাম জাদু তাহলে দেখাতাম কেরামতি।’

সনি বলল, ‘কেরামতি বাদ দিয়ে আমাদের সবার উচিত হবে গণপরিবহনের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করি।’

জনি বলল, ‘তুমি তো ঠিক কথা বলেছ, কর্তৃপক্ষ তা করছে না বলে মনে করি।’

কয়েক ঘণ্টা পর এসে থামল গাড়ি। অবশেষে জনি সনি পৌঁছাল দাদা বাড়ি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর