বনের ধারে থাকত এক গরিব কাঠুরে। তার একটাই মেয়ে-রুপা। সুন্দর এবং দয়ালু। বাবা কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করত, তাতে অল্প টাকাই পেত। ওই গ্রামে ছিল এক জাদুকরী গরু। দেখতে গরুর মতো হলেও সে আসলে মানুষের রূপ নিতে পারত। কিন্তু এক অভিশাপে আটকে ছিল গরুর শরীরে। দিনে ঘাস খেত, আর রাতে? জঙ্গলের পাশে মন খারাপ করে বসে থাকত।
এক দিন রুপা জঙ্গলে কাঠ কুড়োতে গিয়ে গরুটিকে দেখে। গরুটি দুখী চোখে রূপার দিকে তাকিয়ে ছিল। রুপা সেদিকে খেয়াল না করে কাঠ কুড়াতে ব্যস্ত। হঠাৎ সে শুনতে পেল কে যেন তাকে ডাকছে, আর বলছে ‘আমাকে সাহায্য কর।’ সে চারপাশে তাকিয়ে দেখে গরুটি ছাড়া আর কেউ নেই সেখানে।
তখন সে খেয়াল করে দেখল গরুটি আবার বলছে ‘আমাকে সাহায্য কর।’ প্রথমে সে অবাক হলো আর ভাবতে লাগল-গরু কি কখনো কথা বলতে পারে?
এরপর সে গরুটির কাছে জিজ্ঞেস করল- ‘ওমা তুমি কথা বলতে পার?’
সে আেরও দেখলো গরুটির চোখ দিয়ে অঝরো পানি ঝরছে।
তখন রুপা জিজ্ঞেস করল, তুমি এভাবে কাঁদছ কেন?
গরু উত্তর দিল, ‘আমি আসলে মানুষ। এক দুষ্ট জাদুকরের অভিশাপে গরু হয়ে আছি। যে মেয়ে আমাকে ভালবাসবে, কেবল তাকেই বিয়ে করলে অভিশাপ ভাঙবে।’
রুপা অবাক হলো, কিন্তু তার মায়াবী মন বলল, ‘আমি তোমার কষ্ট বুঝতে পারছি। যদি আমার ভালোবাসায় তোমার অভিশাপ ভাঙে, তবে আমি রাজি।’
তারপর রুপা গরুটিকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে এবং তার বাবাকে বিস্তারিত খুলে বলে।
পরের দিন গ্রামে হইচই পড়ে গেল-কাঠুরের মেয়ে গরুর সঙ্গে বিয়ে করছে! সবাই হাসাহাসি করল। কিন্তু রুপা গরুকে সবার সামনে মালা পরিয়ে দিল।
হঠাৎ আকাশে বজ্রপাত হলো, ঝড় বয়ে গেল। আর তারপরই বিস্ময়কর ঘটনা-গরুটি রুপ বদলাল। সোনার মুকুট মাথায় এক রাজপুত্র দাঁড়িয়ে রইল!
রাজপুত্র আনন্দে রুপার হাত ধরল, তুমি আমার জীবন বাঁচালে। এখন থেকে তুমি হবে আমার রানি।’
এই বলে রাজপুত্র রুপাকে নিয়ে তার রাজপ্রাসাদে ফিরে গেল।
গ্রামের সবাই অবাক হয়ে চেয়ে রইল। কাঠুরের কুঁড়েঘর থেকে রূপা হয়ে গেল এক রাজকন্যা।