দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে জমে থাকা আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার খালাসে রেকর্ড হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকাল আটটা থেকে শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এ বছরের সর্বোচ্চ ৫ হাজার ২০১ টিইইউস (২০ ফুট লম্বা) কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছে।
স্বাভাবিক সময়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টিইইউস ডেলিভারি হতো বন্দর থেকে। ৫৩ হাজার টিইইউস ধারণক্ষমতার বিপরীতে বর্তমানে বন্দরে কনটেইনার রয়েছে ৪০ হাজার ২৭২ টিইইউস। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক।
তিনি জানান, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ পুরোপুরি চালু হওয়ায় বন্দরের কার্যক্রম পূর্ণগতিতে চলছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দুর্বৃত্তদের সহিংসতার কারণে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া, কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে ধীরগতি এবং রাজপথে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল না করায় বন্দরে কনটেইনার জটের সৃষ্টি হয়েছিল। বৃহস্পতিবার কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছে বেশি। আশাকরি শুক্রবারও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি কনটেইনার ডেলিভারি হবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বন্দরমুখী লরি, প্রাইমমুভার, কাভার্ডভ্যান ও ট্রাকের জট লেগেছিল প্রতিটি গেইটসহ বন্দরের ভেতরে। রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় বন্দর এলাকার সাধারণ যাত্রীদের। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে ছিলেন যানজটে। তবে পণ্যবাহী গাড়ির শ্রমিকরা ছিলেন উৎফুল্ল। প্রায় এক সপ্তাহ পর তাদের অনেকে ভাড়া পেয়েছেন।
বন্দরের পাশাপাশি দেশের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আহরণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসেও আমদানি রপ্তানির চালান শুল্কায়ন হয়েছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি। বুধবার ৮ হাজার ১৫৩টি আমদানি-রপ্তানি চালান শুল্কায়ন হয়েছে। শুল্কায়নের জন্য অনলাইনে নথি জমা দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ৩৪৫টি চালানের।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, করোনাকালের মতো বন্দর, কাস্টমস, অফডক, এনবিআর ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সম্মিলিত উদ্যোগে বন্দরের কনটেইনার জট দ্রুত কমে আসবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের উচিত দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে জাহাজ থেকে কনটেইনরা নামার পর ফ্রি টাইম চার দিন শেষে যে স্টোর রেন্ট, পোর্ট ডিউজসহ বিভিন্ন ফি গুনতে হয় তা মওকুফের ব্যবস্থা করা।
বেসরকারি ডিপো মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার শুক্রবার রাতে জানান, ২১টি কনটেইনার ডিপোতে বর্তমানে ৬ হাজার ৩০০ টিইইউস রপ্তানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার আছে। এগুলো পর্যায়ক্রমে বন্দরে শিপমেন্টের জন্য পাঠানো হবে। এ ছাড়া ডিপোগুলোতে আমদানি পণ্যবোঝাই ১১ হাজার এবং খালি কনটেইনার আছে ৪৯ হাজার টিইইউস।
তিনি জানান, সপ্তাহে সাত দিন যদি একই গতিতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি হয় তবে জট দ্রুত নিরসন হবে। স্বাভাবিক সময়ে দেখা যায়, সোম থেকে বৃহস্পতিবার বন্দর কাস্টমসে বেশি কাজ হয়। এর বিপরীতে ডিপোগুলোতে সাত দিনই কাজ হয়। যদিও এবার সমস্যাটা হয়েছে ইন্টারনেট বন্ধ থাকা এবং মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় বন্দর থেকে ডেলিভারি না হওয়ার কারণে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ