শয়তান মানুষের চিরশত্রু। মানব সৃষ্টির সূচনা থেকেই মানুষ ও শয়তানের মধ্যে এই শত্রুতা চলে আসছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত তা থাকবে। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, 'নিশ্চয় শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু'। (সূরা বাকারাহ আয়াত-৩১৬)।
আদি পিতা আদম ও আদি মাতা হাওয়া (আ.)-এর জান্নাত থেকে দুনিয়ায় অবতরণের বাহ্যিক হেতু ছিল শয়তানের পাতা ফাঁদ। সে নিজেকে তাদের হিতাকাঙ্ক্ষী রূপে প্রকাশ করে আল্লাহ এবং আল্লাহর নামে শপথ করে আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খেতে তাদের প্রলুব্ধ করে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, অতঃপর তাদের লজ্জাস্থান, যা পরস্পরের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল তা প্রকাশ করার জন্য শয়তান তাদের কুমন্ত্রণা দিল। সে বলল, তোমাদের রব এ বৃক্ষের কাছে যেতে নিষেধ করেছেন এর কারণ আর কিছুই নয়, তোমরা যেন ফেরেশতা হয়ে না যাও অথবা এখানে চিরন্তন জীবন লাভ করতে না পার। সে তাদের উভয়ের কাছে শপথ করে বলল, আমি তোমাদের অন্যতম একজন হিতাকাঙ্ক্ষী (সূরা আরাফ, আয়াত-২০-২১)।
এভাবে শয়তানের কুমন্ত্রণায় জড়িয়ে পড়ার ফলে আল্লাহ আদম ও হাওয়া (আ.)-কে জান্নাত থেকে দুনিয়ায় নামিয়ে দিয়েছেন এবং ঘোষণা দিয়েছেন তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না- কেননা সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাকারাহ আয়াত-১৫৮)।
অন্যত্র বলেন, 'হে মুসলিমগণ! তোমরা পূর্ণরূপে ইসলামের মধ্যে প্রবিষ্ট হও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু (সূরা বাকারাহ আয়াত-২০৮) সূরা ইয়াসিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেছেন, হে বনি আদম আমি কি তোমাদের সতর্ক করে দিইনি যে, তোমরা শয়তানের দাসত্ব কর না, কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা ইয়াসিন, আয়াত-৬০)। তা ছাড়া আদম (আ.)-কে সৃষ্টির পর আল্লাহর নির্দেশ মতো সেজদা না করায় আল্লাহতায়ালা শয়তানকে বিতাড়িত ঘোষণা করেন। আল্লাহ বলেন, তুই এখান থেকে বেরিয়ে যা, কারণ তুই বিতাড়িত; (সূরা হিজর আয়াত-৩৪)। অতঃপর শয়তান দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় যে, মানুষকে আমি কখনো স্বস্তিতে থাকতে দিব না। এরশাদ হয়েছে, ইবলিশ বলল, হে আমার রব। আপনি যে আমাকে বিপথগামী করলেন তজ্জন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের জন্য পাপ কাজ শোভনীয় করে তুলব এবং আমি তাদের সবাইকে বিপথগামী করব, তবে আপনার একনিষ্ঠ বান্দা ব্যতীত। (সূরা হিজর আয়াত-৩৯-৪০)। অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে, 'সে শয়তান বলল, আমি অবশ্যই আপনার সরলপথে মানুষের জন্য ওতপেতে বসে থাকব।' (সূরা আরাফ আয়াত-১৬)। সেই সূত্র ধরে আজ পর্যন্ত শয়তান মানুষকে বিভিন্ন প্রকার প্রতারণা ও কূটকৌশলের জালে আবদ্ধ করে নানা ধরনের অপরাধ-অপকর্মে লিপ্ত করতে এবং কেয়ামত অবধি প্ররোচনা ও ধোঁকা প্রদানেই লিপ্ত থাকবে। সুতরাং পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী শয়তানই হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু এবং সব পদস্খলনের হোতা। সে মানুষের জীবনপথের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে ওতপেতে বসে থাকে মানুষকে বিপথগামী করার জন্য। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, জিনা-ব্যাভিচার, জুলুম, নির্যাতন, হত্যা-লুণ্ঠন, শোষণ-নিপীড়ন ও নির্লজ্জতা-বেহায়াপনাসহ সমাজে যত ধরনের অপরাধ-অপকর্ম সংঘটিত হচ্ছে, তা সবই চির অভিশপ্ত শয়তানের প্ররোচনায় হচ্ছে। শয়তানের বন্ধুত্ব গ্রহণের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, শয়তান সম্বন্ধে এ নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে, যে কেউ তার সঙ্গে বন্ধুত্ব গ্রহণ করবে শয়তান তাকে পথভ্রষ্ট করবে এবং তাকে পরিচালিত করবে প্রজ্বলিত আগুনের শাস্তির দিকে (সূরা হজ, আয়াত-৪)।
অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে, 'যে আল্লাহকে পরিত্যাগ করে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে নিশ্চয় সে প্রকাশ্যে ক্ষতিতে পতিত হয়। (সূরা নিসা আয়াত-১২৯)। শয়তান থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের পাত্র হওয়া ও তার কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা করা। আল্লাহতায়ালা তার বিশেষ অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, 'যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা না থাকত তাহলে অল্পসংখ্যক ছাড়া তোমরা সবাই শয়তানের অনুসরণ করতে। (সূরা নিসা আয়াত-৮৩)। অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, 'যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে তাহলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।' (সূরা হা-মীম সেজদা আয়াত-৩৬)।
সব শেষে মহান প্রভুর সমীপে ফরিয়াদ, হে প্রভু, আমাদের অভিশপ্ত শয়তানের ধোঁকা ও প্ররোচনা থেকে রক্ষা করুন এবং চির সুখ-সমৃদ্ধ জান্নাতের পথে পরিচালিত করুন। আমিন!