তারুণ্যের সমাবেশের কারণে রাজধানীসহ অন্যান্য শহরে যানজট ও নগরবাসীর সাময়িক দুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ায় আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে বিএনপির তিন সংগঠন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দুঃখ প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না।
এতে বলা হয়, তরুণদের ভোটাধিকার হরণ আজও একটি জাতীয় সংকট। এটি শুধু একটি সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নয়, বরং একটি প্রজন্মকে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণের মৌলিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার নিষ্ঠুর উদাহরণ। ইতিহাস সাক্ষী, অতীতেও এই দেশের তরুণরাই ভোটের অধিকার ছিনিয়ে এনেছিল-তারা রাজপথে লড়েছে, রক্ত দিয়েছে, অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। আজ আবার তারা সেই একই সংকটে দাঁড়িয়ে।
মোনায়েম মুন্না বলেন, দেশজুড়ে কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা শুধু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের একটি জাতীয় ঐক্যের ইঙ্গিত পাইনি, বরং স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছি নতুন প্রজন্মের সেই লড়াইয়ের পুনর্জাগরণ, যেখানে তরুণরা নিজেদের অধিকার রক্ষায় আবারও সংগঠিত হচ্ছে, কথা বলছে, এবং নিজ অবস্থান থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা জানে, ভোটাধিকার শুধু ভোট দেওয়ার বিষয় নয়, এটি ভবিষ্যৎ নির্মাণের শক্তি। এই জাগরণই একদিন একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক এবং উদার রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি রচনা করবে।
তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখার আলোকে দেশের তরুণ সমাজকে নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে এক মাসব্যাপী একটি ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল, যা গতকাল সমাপ্ত হয়। জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া ও ঢাকায় আয়োজিত দুই দিনব্যাপী প্রতিটি অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে অনুষ্ঠিত হয় তারুণ্যের রাজনৈতিক ভাবনা ও অর্থনৈতিক মুক্তি শীর্ষক সেমিনার এবং দ্বিতীয় দিনে ছিল তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ। এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল তরুণদের সৃজনশীলতা, দক্ষতা ও ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতি ও অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচন এবং তা জাতীয় উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে সংযুক্ত করা। লাখ-লাখ মানুষের সরব উপস্থিতিতে এবং তরুণদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে কর্মসূচিগুলো অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তরুণদের রাজনৈতিক অধিকার ও অংশগ্রহণের প্রতি অঙ্গীকার এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য তাদের দৃঢ় সংকল্প এই আটটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তা দৃঢ়ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ও সমর্থনের জন্য দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ-বিশেষ করে তরুণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, শ্রমিক, চাকরিজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উদ্যোক্তা, পেশাজীবী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। মুন্না বলেন, বিএনপি সবসময় তরুণদের কেবল ভোটার হিসেবে নয়, বরং রাষ্ট্র গঠনের স্থপতি ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে। এই ধারাবাহিক কর্মসূচি এবং এর পেছনে থাকা আদর্শ, আমাদের ভবিষ্যতের রাজনৈতিক দর্শন ও লক্ষ্যকে আরও স্পষ্ট করেছে।
যুবদল সভাপতি বলেন, বিএনপির এই আয়োজন ছিল একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির অংশ, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তরুণদের ক্ষমতায়ন ও নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ততা। আমরা বিশ্বাস করি, তরুণদের চিন্তা, প্রত্যাশা ও সমস্যার প্রতিফলন না থাকলে গণতন্ত্র টেকসই হতে পারে না। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ভবিষ্যতের রাষ্ট্রচিন্তায় তরুণদের সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করার যে প্রয়াস নেওয়া হয়েছিল, তা শুধু একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না এটি ছিল একটি বৃহৎ নীতিগত উদ্যোগ।
সংবাদ সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির উপস্থিত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/কেএ