মানব জীবনে জন্ম-মৃত্যুর মতো বিয়ে এক অবধারিত সত্য। গতকাল ছিল আমার ৩৫তম বিবাহবার্ষিকী। জীবনের অর্ধেকটা মায়ের কোলে হেলে-দুলে ছায়ায়-মায়ায়-কায়ায় একাকার ছিলাম। সবাই জানে আমার জীবন এক বিচিত্র উপাদানে ভরা। ছেলেবেলায় লেখাপড়ার কথা শুনলে জ্বর আসত। লেখাপড়া আকৃষ্ট করতে পারত না। আর গৃহশিক্ষক ছিলেন বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী। তিনি সত্যিই এখন একজন অত্যন্ত বড় মাপের বিদ্বান। তার জ্ঞানের অর্ধেক যদি পেতাম, অর্ধেক কেন চার ভাগের এক ভাগ পেলেও জগেক চমকে দিতাম। তিনি ৩০ পৃষ্ঠা লিখলে একবার কলম তোলেন না আর আমি এক পৃষ্ঠা লিখতে ৩০ বার কলম তুলি, ৩ বার কাটাছেঁড়া করি। তারপরও বলব তখন তিনি ভালো শিশু শিক্ষক ছিলেন। শিশুদের শেখানো বা পড়ানোর কৌশল তার জানা ছিল না। তিনি এখনো যা করেন তার নিজের মতো করে করেন। ভালো-মন্দ যাই হোক আমি যা করি রাস্তার মানুষের মতো করে তাদের জন্য করি। তিনি আমার জন্য কতটা কী করতে পারবেন জানি না, তবে এখনো আমি প্রয়োজনে তাদের জন্য জীবন দিতে পারি। এটা কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক এটাই আমি। আমার জীবন সত্যিই অন্যদের মতো নয়। ৩৫ বছর আগে ৩৬ বছর বয়সে নাসরীনকে বিয়ে করেছিলাম। এই বিয়ের স্বাভাবিক কোনো কারণ ছিল না। একেবারে প্রতিবেশী তাই চেনা ছিল। কিন্তু জানাজানি ছিল না। বিয়ের কথাবার্তা শুরু হয়েছিল ’৬৬ সালে কুমিল্লাতে। তারপর মা, বড় ভাই কত জায়গায় পাত্রী দেখেছেন, বেসুমার দেখাদেখি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রিয় বোন জননেত্রী শেখ হাসিনাও এক সময় আমার বিয়ের জন্য এত চেষ্টা করেছেন যা বলার ভাষা নেই। জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে সত্যিই সে এক কপাল। তাই হয়েছে। আমি ৩৬ বছরে বিয়ে করেছিলাম, আমার মেয়ের ২৭, ছেলের ৩২। এখনো কাউকে বিয়ে দিতে পারিনি। ছেলেমেয়ে কোনোটাই ল্যাংড়া আতুর নয়। কিন্তু কেন যে বিয়ে হচ্ছে না বা ওরা করছে না বুঝতে পারছি না। কয়েক বছর আগে আমার উদ্বেগের কথা শুনে রেহানা বলেছিল, ‘ভাই চিন্তা করবেন না। ছেলেমেয়ে আল্লাহর মাল। দেখবেন আল্লাহই সবকিছু করে দেবেন।’ সেই ভরসায় আছি। কিন্তু কেন যেন কিছুই হচ্ছে না।
দেখতে দেখতে আমাদের দুজনের কত দিন কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। স্ত্রীর কাছে তেমন চাহিদা ছিল না। এখনো নেই। আমি মাটির কুটিরে জন্মেছি। আমার স্ত্রী জন্মেছে সোনার চামচ মুখে। আজ সোনার চামচ নেই তাই বলে রাস্তায় পড়েনি। কিন্তু আমি যে হাট-ঘাট পেরিয়েছি তার কোনো ঘাটেই সে নাকানি-চুবানি খায়নি। তাই কমবেশি ভাবনার দূরত্ব, অনুভূতির ব্যবধান সব সময়ই ছিল। আস্তে আস্তে অনেক কিছু দূর হলেও চলার মতো সহনশীল হলেও মা যেমন বুঝতেন, বাবা যেমন বোঝার চেষ্টা করতেন তেমনটা হয়তো আমার স্ত্রী পারে না। একজন নিগুণ মানুষ তিনি। তবে চাহিদা খুবই কম। দেড়-দুইশ টাকার স্যান্ডেল আর সুতির শাড়ি তার চাই-ই চাই। সোনা-দানার প্রতি লোভ নেই, গাড়ি-বাড়িও না। ভাইবোনের চাকরি-বাকরি, এটা ওটা ওসব নিয়ে কোনো দিন বিরক্ত করেনি। তবে সবকিছু সে যেভাবে ভাবে আমি হয়তো সেভাবে ভাবি না অথবা আমি যা যেভাবে ভাবি সে হয়তো সেভাবে ভাবে না। এসব খটাখটি উত্তেজনা মনের ওপর চাপ খুব একটা কম যায়নি। ৫৫-৫৬ বছর মাকে পেয়েছি, বাবাকেও পেয়েছি ৫০ বছর। সেদিক থেকে নিঃসন্দেহে আমি ভাগ্যবান। রাজপুত্রের মতো ছেলে যাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজের সন্তানের চাইতে কম যত্ন করেননি। প্রবাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তিনি আমার ছেলেকে যত্ন করতেন, ‘নিজের থাকুক শতপুত তারপরও ভাইপুত।’ কুঁড়ি ফুলের মতো সুন্দর এক মেয়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কোলে ওকে আরও সুন্দর দেখাত। সেসব ছবি এখনো আমাদের নাড়া দেয়। ছেলেমেয়েদের কোলে নেওয়া, সময়মতো খাওয়ানো এসবে আমার স্ত্রীর অনেক ত্রুটি ছিল। আমি কষ্ট পেতাম। আমার কষ্ট বুঝলেও না হয় সান্ত্বনা ছিল। কিন্তু তেমন কিছুই বুঝত না। ছেলেমেয়ের মুখের দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁত কামড়ে থাকতাম। অনেক সময় মা বলতেন, ‘ডান্নু যমজ। তাই দুর্বলতা তো থাকবেই। তুই বড় হয়েছিস। আল্লাহ তোকে বড় করেছে। বড়র দায়িত্ব তো তোকে পালন করতেই হবে।’ চেষ্টা করেছি পালন করার। কিন্তু কষ্ট হয়েছে। এরমধ্যে রাজনৈতিক কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আমার দল গঠনের দিনে ১০২ জন আহত হয়। সভা থেকে ফিরে আমার মেয়ে রাগে-দুঃখে বৈঠকখানা থেকে জননেত্রীর ছবি নামিয়ে ফেলে। বিয়ের পর জননেত্রী মায়ের হাতের বালা আমার স্ত্রীর হাতে পরিয়ে দিয়েছিলেন। সেসব খুলে ফেলে দিতে চেয়েছিল। এ নিয়ে কোলাহলও হয়। মাথায় হাত বুলিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলাম, একটা রাজনৈতিক বিরোধের কারণে অত বড় একজন মহীয়ষী নারী যার ত্যাগ তিতিক্ষায় আমাদের নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হয়েছেন, আমি সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধা এর কিছুই তো হতে পারতাম না। তার একটা জিনিস ফেলে দেবে? ওই বালা হাতে রাখতে না চাও যত্ন করে রেখে দাও। যিনি দিয়েছিলেন একদিন তার হাতে দিয়ে এসো। কিন্তু অমর্যাদা কর না। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা তার সন্তান কামাল-জামাল-রাসেল-হাসিনা-রেহানার চাইতে আমাদের আলাদা করে দেখেননি। কতবার খাইয়েছেন সান্ত্বনা দিয়েছেন তার কি কোনো মূল্যই থাকবে না? আমি কৃতজ্ঞ আমার স্ত্রীর প্রতি। আমার কথা সে হৃদয়ঙ্গম করেছে। এরপর আর কোনো অশান্তি হয়নি। হাতের বালা সযত্নে আছে। বরং ঘরের লক্ষ্মী ঘরে আছে।
২০০৫ সালের ৪ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আমার মা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। চোখ থাকতেও পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। বুকের ভিতর গুমরে মরা কান্না কোনোমতেই ভুলতে পারতাম না। মা হারা শূন্যতার সে যে কী জ্বালা লিখে বোঝানো যাবে না। একেক জনের জ্বালা একেক রকম। কারও জ্বালা কারও সঙ্গে মেলে না। ছেলেমেয়ে স্ত্রী নিয়ে, দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ছোটাছুটি ঠিকই করেছি। কিন্তু ভিতরের কান্না থামেনি। একটা শক্তিহীন প্রাণহীন দেহ বয়ে বেড়িয়েছি। কোনো দিকে আলো দেখতে পাইনি। হঠাৎই আমার সমস্ত অন্ধকারে আলো, শূন্যতায় প্রশান্তির আধার হয়ে কুশিমণি আসে আমার ঘরে। কত সময় বুকে উঠে পা মুখে দিয়ে আদর করেছে, গলা ধরে আহ্লাদ করেছে। আমার স্ত্রী ধীরে ধীরে মা হয়েছে। আমি আমার মায়ের মধ্যে মায়ের যে গুণাগুণ দেখেছি বিয়ের পর আমার স্ত্রীর মধ্যে তা দেখিনি। কিন্তু ছোট্ট এক টুকরা মাংস কুশিমণি আমাদের বুকে এসে আমার স্ত্রীকে মা বানিয়েছে, স্ত্রী বানিয়েছে, নারী বানিয়েছে। কুশি মামণির এখন ১৩ বছর। এই ১৩ বছর নানা দুঃখ-দৈন্য-অভাব-অভিযোগ, রাজনৈতিক চাপের পরও শুধু কুশির কারণে পরিবারে যে প্রশান্তি বিরাজ করছে তা যদি আরও ২০ বছর আগে থেকে করত তাহলে আমি এবং আমরা আরও অনেক ভালো থাকতাম। একটা মানুষ আর একটা মানুষের জীবনে কত বড় সম্পদ, একটা মানুষ একটা জাতির জীবনে কতবড় সম্পদ তা যেমন বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে উপলব্ধি করেছি, কুশিকে দিয়ে আমি আমার ব্যক্তি জীবনে একইভাবে হৃদয়ঙ্গম করেছি। একজন কাউকে ভালোবাসতে পারলে কোটি মানুষের প্রয়োজন পড়ে না, আকাশজোড়া ক্ষমতার প্রয়োজন পড়ে না, সামান্য ভালোবাসা হলে হৃদয়-মন আনন্দে ভরপুর হয়ে থাকে। কোনো জটিলতা কুটিলতা স্পর্শ করে না। আল্লাহ রসুল যেমন শয়তানের হাত থেকে, শয়তানের শয়তানি থেকে তাঁর বান্দাকে রক্ষা করেন, ঠিক তেমনি পারিবারিক ভালোবাসা মানুষকে অনেক শক্তিশালী হৃদয়বান ধীরস্থির করে। পাঠকের কাছে প্রার্থনা, আমার স্ত্রী, পরিবার-পরিজনের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন আমাদের তার ছায়াতলে রাখেন। যতক্ষণ বেঁচে থাকি দেশের কল্যাণে যেন কাজ করতে পারি— আমিন।
সেদিন দেশের প্রবীণ নাগরিক প্রখ্যাত আইনবিদ, বিশিষ্ট সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দেশের ভূত-ভবিষ্যৎ এবং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ সময় আলোচনা হলো। তার শেষ বয়সে দেশের কল্যাণে সবকিছু ত্যাগ করার প্রবল আগ্রহ আমাকে যারপরনাই উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছে। কথায় কথায় এক সময় বাসাইল পৌর নির্বাচনের প্রসঙ্গ এসেছিল। তিনি সেখানে আশাবাদ ব্যক্ত করলেন। সরকার এবং নির্বাচন কমিশন অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন না করে তারা মুখে চুনকালি মাখবেন না বলেই তার বিশ্বাস। আমিও বাসাইলে নির্বাচনী প্রচারে বেশ কয়েকদিন গেছি। এ পর্যন্ত পরিবেশ মোটামুটি ভালোই আছে। তবে শুনছি, থানার ওসি আওয়ামী লীগের ক্যানভাসার। জিনিসটা সবার চোখেই খারাপ লেগেছে। কমিশনার প্রার্থী অনেক, তবে মেয়র প্রার্থী তিনজন। ধানের শীষের মো. এনামুল করিম অটল, নৌকার আবদুর রহিম আহমেদ ও গামছার রাহাত হাসান টিপু। নৌকার প্রার্থী কোনো দিন আওয়ামী লীগ করেনি, এবারই প্রথম। স্বাধীনতার পর গণবাহিনী ছিল। কাউলজানির কলিবুর রহমান বাঙালী, দেউপাড়ার রিয়াজ কমান্ডার, ফুলকীর মোস্তফা বীরপ্রতীক এবং ত্রিরঞ্জ মাদ্রাসা মাঠে দিনদুপুরে ১৬ জন নিরীহ মানুষ হত্যার সঙ্গে গণবাহিনী জড়িত। এদের প্রধান ছিলেন হুরমুজ বিএসসি। তিনি নেই, এরা আছেন। এই রহিম প্রথম চাকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। গতবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন না পেয়ে ঘোড়া মার্কা নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। হেরে গিয়ে এবার কীভাবে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে এলেন সে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই জানেন। ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৬৯তম জন্মদিনে আওয়ামী লীগ সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যা বলেছেন এ যে দেখছি আসল আওয়ামী লীগ মেরে ভাড়াটিয়ার কর্তৃত্ব। নৌকার প্রচারে শোনা যাচ্ছে এক ভোট পেলেও পাস—এটা কি সম্ভব? এক ভোট পেলে কেউ পাস করে? অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ‘আমাদের যেন বদনাম না হয়। অন্য দলের লোকজন এনে দল ভারী করবেন না। বিপদের সময় তাদের পাওয়া যাবে না।’ সেখানে কী করে জনাব আবদুর রহিম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেল সে এক আশ্চর্য ব্যাপার। ভোটাররা জনাব রহিমকে ভোট দেবেন বলে মনে হয় না। প্রকৃত আওয়ামী লীগ হলে কিছু বেশি ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী অটল একজন নিবেদিত কর্মী। প্রায় সব জায়গাতে বলেছে, ‘গতবার আমি জিতেছিলাম। আমার ভোট নিয়ে গেছে।’ তাই ভোটাররা কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেছে, ‘এবার যে নেবে না তার গ্যারান্টি কী? তাই তাকে ভোট না দেওয়াই ভালো।’ বেশ কয়েক জায়গায় এসব শুনে বিএনপি নেতাদের কাছে আবেদন করেছিলাম, দেশে প্রভাবমুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। কথায় কাজ হবে না, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাই সাধারণ মানুষের কামনা দয়া করে আপনারা আপনাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করুন। দেখা যাক কী করে জনাব আবদুর রহিম ঘোড়া নিয়ে নৌকায় উঠে ভোটে জিতে। শুনেছি, বিএনপি নেতৃবৃন্দ আমার আবেদনের যৌক্তিকতা অনুভব করেছেন। তারা তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে সুষ্ঠু ভোটের জন্য সব নেতা-কর্মীকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আহ্বান করেছেন।
গামছার প্রার্থী রাহাত হাসান টিপু একজন উঠতি যুবক। শাজাহানের ছেলে আবদুস সাত্তার মিয়ার নাতি। ’৬২-’৬৩ সালে হুলিয়া মাথায় বঙ্গবন্ধু তিন দিন আবদুস সাত্তার মিয়ার বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন। তার নাতিকে আমরা গামছা দিয়েছি। গামছার প্রার্থী রাহাত হাসান টিপু হবে বাসাইলবাসীর সেবক, খাদেম ও পাহারাদার। রাতে পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লা-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে বলবে, ‘বস্তিবাসীরা ঘুমাও। আমি তোমাদের পাহারাদার, আমি আছি।’ পালপাড়া, ব্রাহ্মণ পারিল, বর্ণি কিশোরী, কুমারজানী, মাইজখারা, বাসাইল পুবপাড় বাসস্ট্যান্ড সব জায়গাতে মানুষের মধ্যে বিপুল সাড়া। তাই আশা করি ভোটাররা যাতে তার ইচ্ছেমতো প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে এটা নির্বাচন কমিশন এবং সরকার নিশ্চিত করবে। মনে রাখবেন, গায়ের জোরে জেতার চাইতে হারা ভালো। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মাননীয় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আরও অন্য সরকারি উচ্চ মহল কথা দিয়েছেন সুষ্ঠু নির্বাচনে ভোটারের ভোট প্রয়োগে তারা কোনো প্রতিবন্ধকতা সহ্য করবেন না। তাদের দলের কোনো কর্মী যদি অন্যায় না হোক কিছু করে তার বিচার হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও নাকি এমনটাই চান। বাসাইল পৌরসভার ভোটের মধ্য দিয়ে দেশে প্রভাবমুক্ত ভোটের পরিবেশ ফিরে আসুক কায়মনে তেমনটাই প্রত্যাশা করি।
ঈদের পর ঢাকা ফিরেছি। চন্দ্রায় একজন পুলিশ ছাড়া আর কোথাও কোনো ট্রাফিক দেখিনি। দেশে যে দেখবার মতো কেউ আছে মনে হলো না। মনে হলো আমরা নিস্ব-রিক্ত এতিম। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মহাসড়কে সিএনজি, ব্যাটারির গাড়ি বন্ধ করেছিলেন। সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতারা যত্রতত্র চার চাকার লেগুনা নামিয়েছে। তারই এক বড় শিকার স্বাধীনতার এক বীরযোদ্ধা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আমাদের প্রিয় মনিরুল হক চৌধুরী। হাতের বাহুতে চোট পেয়ে এই পরিণত বয়সে কী নিদারুণ কষ্টই-না করছেন। বয়সী মানুষের এমন কষ্ট সত্যিই বেশ পীড়া দেয়। আর সে মানুষ যদি প্রিয় মানুষ হয় তাহলে সে পীড়ার সীমা থাকে না। তবু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি লাখো কোটি শুকরিয়া, দয়াময় তাকে রক্ষা করেছেন। রাস্তাঘাটে শৃঙ্খলা থাকলে এমন হওয়ার কারণ ছিল না। এলোপাতাড়ি আশপাশের রাস্তা নিয়ে আমার বলার কিছু না থাকলেও মহাসড়কে নানা গতির গাড়ি চলা উচিত নয়। লাইসেন্স এবং প্রশিক্ষণ ছাড়া স্টেয়ারিং ধরতে দেওয়া উচিত নয়। ঘুমাতে ঘুমাতে গাছের সঙ্গে গাড়ি লাগিয়ে ২৫ জনকে মেরে ফেলা ৩০ জনকে আহত করা এসব অভাবনীয়। কতটা বেপরোয়া হলে নষ্ট বাসের পিছনে আশ্রয় নেওয়া যাত্রীদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিতে পারে। এটা ভাবা যায়? মাঝে মাঝে ভাবী সত্যিই কি সরকারের লোকজনের এসবে কোনো কষ্ট হয় না? আজ কর্তৃত্ব নেতৃত্ব যাদের তারা কি এতই হৃদয়হীন? কেন সামান্য প্রতিকারের চেষ্টা করেন না। মানুষের জীবনের চাইতে তো বড় কিছু নেই। আমাদের যখন সুযোগ ছিল ক্ষমতা ছিল আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। এখন যাদের ক্ষমতা তাদের তো আন্তরিকভাবে করা দরকার। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরে এক দিনে দেড়শ জনের জীবনহানি, ৫০০-এর ওপর আহত এসব ভাবা যায়? কত চেষ্টা করি মন শান্ত রাখতে। কিন্তু এসব কারণে কেন যেন কিছুতেই মন শান্ত রাখতে পারি না।
লেখক : রাজনীতিক।
www.ksjleague.com