যুক্তরাষ্ট্রের অতীতের শাসকরা প্রমাণ রেখেছেন তারা এক কথার মানুষ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নন। মাথা না নোয়ালে ইরানকে স্তব্ধ করার হুমকি দিয়ে চলেছেন প্রথম থেকে। সে হুমকির বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে দিয়ে প্রক্সি যুদ্ধের মাধ্যমে। এ যুদ্ধে ইসরায়েল তার আরব মিত্রদের যে সহযোগিতা পাচ্ছে তাও সম্ভব হচ্ছে পেছনে মহাপ্রভু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কারণে। কিন্তু দেখেশুনে মনে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র আর অপেক্ষা করতে রাজি নয়। তারা বলেছে, নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ না করলে ইরানকে ধ্বংসের জন্য যুদ্ধবিমান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তেহরানে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর প্রস্তুতিও নিচ্ছে বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি। জি-সেভেনের বৈঠকে বিশ্ব শাসনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে যেসব প্রভাবশালী দেশ তাদের সম্মতিও পেয়েছে ওয়াশিংটন। ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হামলায় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাতে দেশটির পক্ষে এখন কোমর সোজা করে দাঁড়ানোই কঠিন। প্রাণঘাতী যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘের কোনো উদ্যোগ নেই। ইরানের মিত্র বলতে কেবল চীন ও রাশিয়া। তারা কোনো ঝুঁকি নেবে কি না ইতোমধ্যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। তেহরানের দুঃসময়ে তারা পাশে দাঁড়ালে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো বড় ধরনের সংঘাত ও ঝুঁকি এড়াতে হয়তো সমঝোতার পথে পা বাড়াত। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে বিশ্ববাণিজ্যে সংকট দেখা দেবে। ইরানের পতন হলে ফিলিস্তিনিরা যতটুকু প্রতিরোধের দেয়াল টিকিয়ে রেখেছে, তাও ধসে যাবে। এ প্রেক্ষাপটে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধের বিষয়টি প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী ইহুদিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে একা লড়তে গিয়ে ইরান আত্মহননের পথ নিলে সেটি বিশ্ববাসীর জন্য অকল্যাণ বয়ে আনবে। আমরা আশা করব ইরানের শাসকরা বাস্তবতার আলোকে এবং নিজেদের সুরক্ষার স্বার্থে কীভাবে সম্মানজনকভাবে
যুদ্ধ বন্ধ করা যায় সে প্রয়াস চালাবেন। চীন ও রাশিয়ার উচিত হবে নিজেদের স্বার্থে তাদের মিত্র দেশকে সহায়তা করা। বিশ্বশান্তির স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রকেও সুবিবেচনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে।