শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

আত্মায় তৃপ্তি আনে কোরআন পাঠ

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আত্মায় তৃপ্তি আনে কোরআন পাঠ

আল্লাহর পক্ষ থেকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাজিল হওয়া কিতাব কোরআনুল কারিম; যা তাঁর ওপর দীর্ঘ ২৩ বছরে নাজিল হয়েছে। এ কিতাবটির নাম, নাজিলের ভাষা, বিষয়বস্তু সবকিছুই অভিনব ও মোজেজাপূর্ণ। কোরআন ‘কারউন’ শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ দুটি। ১. জমা করা। এর তাৎপর্য হলো এই কিতাবে অতীতের সব আসমানি কিতাবের মূল শিক্ষা একত্রিত হয়েছে। এর মধ্যেই পৃথিবীর প্রলয় দিন অবধি মানবজাতির প্রয়োজনীয় শিক্ষা এবং হেদায়াত রয়েছে। (আল মুফরাদাতু ফি গারিবিল কোরআন, ৪১১ পৃষ্ঠা।) ২. বার বার পাঠ করা বা পঠিত গ্রন্থ। এই কিতাবটি কোটি কোটি মানুষ প্রতিনিয়ত পাঠ করছে। এত অধিক পঠিত কিতাব দুনিয়ায় দ্বিতীয়টি নেই। (আল ইতকান ফি উলুমিল কোরআন, প্রথম খণ্ড, ৫১ পৃষ্ঠা।) আল কোরআন সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কিতাব নাজিল হয়েছে পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে।’ (সূরা জুমার, আয়াত ১)। আল কোরআন পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যয়নকারী। ‘আর আমি তোমার প্রতি কিতাব নাজিল করেছি যথাযথভাবে, এর আগের কিতাবের সত্যয়নকারী ও এর ওপর তদারককারী হিসেবে।’ (সূরা মায়েদা, আয়াত ৪৮)। আল কোরআন লওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ। কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে, ‘বরং এটা মহান কোরআন, লওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ।’ (সূরা বুরুজ, আয়াত ২১-২২)। অপবিত্র অবস্থায় কোরআন স্পর্শ করা নিষেধ। কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই এটা সম্মানিত কোরআন, যা আছে এক গোপন কিতাবে, যারা পাক-পবিত্র, তারা ছাড়া অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না, এটা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে এসেছে।’ (সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত ৭৭-৮০)।

আল কোরআনের আরেকটি মর্যাদা হলো, এটি একটি চ্যালেঞ্জময় গ্রন্থ। কোরআন নিয়ে আল্লাহ চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করে বলেন, ‘বলুন, যদি মানব ও জিন এই কোরআনের মতো কিছু রচনার জন্য জড়ো হয় এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারীও হয়; তবু তারা কখনো এর মতো একটি কোরআন রচনা করে আনতে পারবে না।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৮৮)।

কোরআনের হেফাজতকারী আল্লাহ। কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে, ‘এই জিকির (কোরআন) আমিই নাজিল করেছি, আর আমি নিজেই এর হেফাজতকারী।’ (সূরা হিজর, আয়াত ৯)। কোরআনুল কারিম বিশ্ব মানবতার জন্য এক অফুরন্ত নিয়ামত। আল্লাহর বড়ই মেহেরবানি যে, তিনি আমাদের ওপর কোরআন নাজিল করেছেন। কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে, ‘বড়ই মেহেরবান তিনি (আল্লাহ) যিনি মাহবুবকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন।’ (সূরা আর রহমান, আয়াত ১-২)।

হজরত ওসমান ইবনে আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মাঝে ওই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে কোরআন শেখে ও অন্যকে শেখায়।’ (বুখারি)। হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী হলো আল্লাহর বাণী। আর সর্বশ্রেষ্ঠ পথ হলো মুহাম্মদ (সা.)-এর দেখানো আলোকিত পথ।’ (বুখারি)।

কোরআনের প্রতিটি হরফ অধ্যয়ন করলে নেকি লাভ করা যায়। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ পাঠ করল, এতে সে ১০টি নেকির অধিকারী হলো। (তিনি আরও বলেন,) আমি বলছি না যে, আলিফ-লাম-মিম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মিম একটি হরফ।’ (তিরমিজি)।

আল কোরআন তিলাওয়াতের এত ফজিলত হওয়ায় আমাদের আগেকার মানুষ বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করতেন। হজরত ওসমান (রা.) তিন দিনে এক খতম কোরআন পড়তেন। ইমাম বুখারি (রহ.)ও তিন দিনে এক খতম কোরআন পড়তেন বলে জীবনীকাররা উল্লেখ করেছেন। আমাদের মাজহাবের ইমাম হজরত আবু হানিফা (রহ.) প্রতি রাতে এক খতম কোরআন পড়তেন বলে বর্ণিত আছে।

পবিত্র কোরআন পাঠকারীর পিতা-মাতাকে কিয়ামতের দিন হাশরের মাঠে নূরের টুপি পরানো হবে। হজরত মুয়াজ আল জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে এবং বাস্তব জীবনে তার চর্চা করে, কিয়ামতের দিন তার মাতা-পিতাকে এমন একটি নূরের টুপি পরানো হবে, যার নূর দুনিয়ার সূর্যের আলোর চেয়ে বেশি হবে।’ (আবু দাউদ)। আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, কোরআন তার পাঠকারীর জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে।

তাই রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াতের নির্দেশ দিয়েছেন। আবু উমামা আল বাহিলি (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কোরআন তিলাওয়াত কর। কেননা, কিয়ামতের দিন কোরআন তার তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।’ (মুসলিম)। আমাদের প্রতেক্যের অবশ্যই কর্তব্য নিয়মিত কোরআন পড়া, আল কোরআনের চর্চা করা। নয় তো আমাদের অন্তর পরিত্যক্ত ঘরের মতো হয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কোরআন পড়ার, বোঝার এবং মানার তাওফিক দান করুন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

সর্বশেষ খবর