সোমবার, ৬ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

মৃত্যু প্রসঙ্গ ও কোরআনের দুটি আয়াত

সুমন পালিত

মৃত্যু প্রসঙ্গ ও কোরআনের দুটি আয়াত

পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত- ‘কুল্লু নাফসিন জায়েকাতুল মাউত’। যার শব্দার্থ সব প্রাণীকে এক দিন মৃত্যুস্বাদ পেতে হবে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষসহ সব প্রাণীর জন্য মৃত্যু এক অনিবার্য সত্য। কারোর পক্ষে মৃত্যুকে এড়ানো সম্ভব নয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, মরণরে তুঁহ মম শ্যাম সমান। মৃত্যুকে যত মহিমান্বিতভাবে দেখা হোক না কেন আসল সত্যি হলো কারও কাছেই তা কাম্য নয়। সুন্দর এ পৃথিবী থেকে কেউ চলে যেতে চায় না। তবু যেতে হয়-এটাই বাস্তবতা।

জীবনের প্রতি মানুষের রয়েছে গভীর মমত্ববোধ। এ মমত্ববোধের কারণেই মানুষ মৃত্যুকে এড়িয়ে চলতে চায়। দুঃখ, হতাশা, লজ্জা, ক্ষোভে মানুষ কখনো কখনো আত্মঘাতী হলেও সেটি তার স্বাভাবিক প্রবণতা নয়। মানুষ বেঁচে থাকতে চায় চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও। মৃত্যুকে ভয় করলেও কখনো কখনো নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও মানুষ এগিয়ে যায় কর্তব্য পালনে। যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের বেলায় এটি অহরহই ঘটে। আত্মসমর্পণের বদলে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দেওয়ার নিয়ম ভারতে রাজপুতদের মধ্যে বহুকাল ধরেই প্রচলিত ছিল। আপত্য স্নেহের কাছে নিজের জীবনও যে তুচ্ছ, এ প্রমাণ রেখেছেন মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর। পুত্র হুমায়ুন তখন রোগ শয্যায়। চিকিৎসকরা জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। সম্রাট বাবর পুত্রের জীবন ভিক্ষায় আল্লাহর দরবারে হাত পাতলেন। বললেন, হে আল্লাহ তুমি আমার জীবনের বিনিময়ে পুত্রের রোগ নিরাময় কর। বলা হয়, বাবরের এই দোয়া কবুল হয়েছিল। সেদিন থেকেই হুমায়ুন দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে থাকেন। পক্ষান্তরে সম্রাট বাবর রোগশয্যায় শায়িত হলেন। সে রোগ শয্যাতেই পতিত হন মৃত্যুমুখে।

মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির আগে সাধারণত বিকারগ্রস্ত হিসেবে দেখা যায়। মৃত্যুভয়ে তাদের বেশির ভাগই প্রলাপ বকতে শুরু করে। কিন্তু অসীম সাহসী কর্নেল তাহের শিখিয়ে গেছেন বীরের মতো কীভাবে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হয়। বীরোত্তম তাহের মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার। মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন তিনি পাকিস্তানে। সেখান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে একটি পা হারান। স্বাধীনতার পর সেনাবাহিনী থেকে তিনি অবসর নেন। জড়িয়ে পড়েন জনগণের মুক্তি আন্দোলনে। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল জিয়া অভ্যুত্থানকারীদের হাতে গ্রেফতার হন। বলা হয়, তিনি বন্দীদশা থেকে মুক্ত হতে বন্ধু তাহেরের সাহায্য চান। তাহের তখন সেনাবাহিনীতে না থাকলেও সাধারণ সৈনিকদের মধ্যে ছিলেন প্রচন্ড প্রভাবের অধিকারী। তাহের বন্ধুর কথায় সাড়া দেন। বন্দীবস্থা থেকে জেনারেল জিয়াকে মুক্ত করতে সাধারণ সৈনিকদের উদ্বুদ্ধ করেন। ফলে শুরু হয় ৭ নভেম্বরের সৈনিক জনতার অভ্যুত্থান। সে অভ্যুত্থানে মুক্ত হন জেনারেল জিয়া। সেনা প্রধানের পাশাপাশি তিনি উপসামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব নেন। জিয়ার ক্ষমতারোহণে কর্নেল তাহের সহায়তা করলেও দুজনের বন্ধুত্ব শুরুতেই হোঁচট খায়। তাহের ছিলেন আমূল পরিবর্তনের পক্ষপাতী। ট্র্যাডিশনাল সেনাবাহিনীর ব্যাপারে ছিল তার ঘোরতর আপত্তি। জেনারেল জিয়া তাহেরের সঙ্গে একমত হতে পারেননি। সেনা-শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাহেরকে গ্রেফতার করা হয়। বিচারে বিদ্রোহের অভিযোগে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়।

তাহেরকে বলা হয় রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সায়েমের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে। সে প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে মৌলভী এসে তাকে তওবা পড়তে অনুরোধ করেন। তাহের বলেছিলেন, আমি তো কোনো পাপ করিনি। তওবা পড়ব কেন? ফাঁসির আগে তিনি নিজ হাতে দাড়ি সেভ করেন। আয়েশ করে পাকা আম খান। কারাবন্দী বন্ধুদের সঙ্গে তামাশাও করেন। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় কারারক্ষীরা তাকে সাহায্য করতে চেয়েছিল। পঙ্গু তাহের তাদের ফিরিয়ে দেন। তিনি নিজেই ফাঁসির মঞ্চে ওঠেন। হাসিমুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন। মৃত্যুর আগে তার শেষ উচ্চারণ ছিল ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক’।

মৃত্যুকে তুচ্ছ করার এমন নজির ভূরি ভূরি। ধরা যাক সক্রেটিসের কথা। মিথ্যা অভিযোগে তাকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়। প্রহসনের বিচারে রায় হয়, হেমলেক পানে তাকে মরতে হবে। হাতে তুলে দেওয়া হয় বিষের পেয়ালা। সক্রেটিসের শিষ্যরা গুরুর হাতে বিষের পেয়ালা দেখে কেঁদে ওঠেন। তারা বলেন, শেষ পর্যন্ত মিথ্যা অভিযোগে আপনাকে মরতে হচ্ছে। সক্রেটিস হাসলেন। বলেন বৎস, তোমরা কি চাও অন্যায় করে আমি মৃত্যুবরণ করি? খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশুর মৃত্যু হয় ক্রুশবিদ্ধ হয়ে। ইহুদিদের ষড়যন্ত্রে তাকে ক্রুশে ঝুলানো হয়। যিশু অনুতাপহীনভাবে বরণ করে নেন সেই মৃত্যু। ক্রুশে বিদ্ধ হওয়ার পর তিনি প্রার্থনা করেন। বলেন, ঈশ্বর ওদের ক্ষমা কর। ওরা জানে না কী করছে?

মৃত্যু সম্পর্কে চীনা নেতা মাও সেতুংয়ের মূল্যায়ন মনে রাখার মতো। তিনি বলেছেন, কোনো কোনো মৃত্যু থাই পাহাড়ের মতো ভারী। কোনো কোনো মৃত্যু হাঁসের পালকের মতো তুচ্ছ। থাই পাহাড়ের মতো ভারী মৃত্যু বলতে মাও কী বুঝিয়েছেন? মৃত্যু কি কখনো পাহাড়ের মতো ভারী হতে পারে? মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, পারে। যে মৃত্যু মানুষকে কাঁদায়, যার মৃত্যু মানুষের হৃদয়ে শূন্যতার সৃষ্টি করে, যে মৃত্যু দেশ ও জাতির কল্যাণে সে মৃত্যু অবশ্যই পাহাড়ের মতো ভারী। এমন মৃত্যুবরণ করা অহংকারের বিষয় বলেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছে। মনে পড়ছে সেই কিশোরটির কথা। পাকিস্তানি এক সেনা অফিসারের মতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোহনপুরে পাকিস্তানি-বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা। সহযোদ্ধাদের খবর জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। শত নির্যাতনেও সে রাজি হয়নি।। অবশেষে তার বুকে পিস্তল ঠেকানো হয়। বলা হয়, না বললে গুলি করে হত্যা করা হবে। কিশোরটি বলেছিল, মাত্র এক মিনিট সময় দিন। তারপর সে নত হয়ে ভূমি থেকে এক মুঠি মাটি উঠাল। সে মাটি বুকে ছুঁয়ে পাকিস্তানি মেজরকে বলল-আমি প্রস্তুত। আমাকে এখন হত্যা করতে পার।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের মৃত্যুও ছিল একই মর্যাদায় উদ্ভাসিত। একাত্তরের ২৬ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী হানা দেয় তার বাড়িতে। তাদের কাছে মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন খুবই দামি টার্গেট। তাকে বলা হয়, পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দিতে। মোয়াজ্জেম রাজি হননি। ক্রুদ্ধ পাকিস্তানিরা গুলিতে ঝাঁজরা করে দেয় তার বুক। রোমান বীর জুলিয়াস সিজার মৃত্যুবরণ করেন অপঘাতে। সিজারের বন্ধু ও সভাসদ ছিলেন ব্রুটাস। তাকে তিনি বিশ্বাস করতেন। আপন লোক হিসেবেই জানতেন। ব্রুটাসের ছুরিকাঘাতেই নিহত হন এই রোমান বীর। মৃত্যুকালে সিজারের শেষ উচ্চারণ ছিল-ব্রুটাস তুমিও।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুও ঘটেছে এক বিশ্বাসঘাতকের হাতে। ইন্দিরার আমলে পাঞ্জাবের অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে সেনা অভিযান চালানো হয়। এ ঘটনা শিখদের ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত হানে। চরমপন্থি শিখরা ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করে বদলা নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে। তাদের এ জিঘাংসা গোপন ছিল না। ইন্দিরাজীকে বলা হয় শিখদের সম্পর্কে সতর্ক হতে। কিন্তু তিনি ছিলেন অসীম সাহসের প্রতিমূর্তি। একবার এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন-শিখ চরমপন্থিরা তো আপনার জীবনহানির হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে? ইন্দিরার বক্তব্য ছিল, তারা তা পারবে না। শিখ দেহরক্ষীদের দেখিয়ে তিনি জবাব দিয়েছিলেন- ওরাই তা হতে দেবে না। অদৃষ্টের কী পরিহাস, যে শিখ দেহরক্ষীদের তিনি এত বেশি বিশ্বাস করতেন-তাদের হাতেই ইন্দিরা গান্ধীকে প্রাণ দিতে হয়।

পবিত্র কোরআনে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি করা হয়েছে। বলা হয়েছে যারা ষড়যন্ত্র করে আল্লাহ তাদের প্রতিহত করেন। কাছের লোকের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। খন্দকার মোশতাক সম্পর্কে তাকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু এ ঘর শত্রুকে তিনি কখনো পর ভাবতে পারেননি। মোশতাকের ষড়যন্ত্রেই জীবন দিতে হয় শেখ মুজিবকে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বিশ্বাস করতে পারেননি তার বাবাকে মোশতাক চাচা হত্যা করতে পারে। রাষ্ট্রপতি জিয়া কি কখনো ভুলেও ভেবেছিলেন অতি কাছের লোকদের হাতে তাকে প্রাণ দিতে হবে? বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান পদে বসায়। তবে এ পদ তিনি ধরে রাখতে পারেননি। দুই মাস ১৭ দিন পর তিনি পদচ্যুত শুধু নয়, বন্দী হন। তিন দিন পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। বন্ধু তাহেরের সহায়তায় ফিরে পান আগের পদ। ক্ষমতার শীর্ষেও চলে যান তরতরিয়ে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে গভীর রাতে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত হন রাষ্ট্রপতি জিয়া। চট্টগ্রাম যাওয়ার আগে তাকে নাকি সতর্ক করা হয়েছিল কিন্তু তিনি তাতে কান দেননি। জিয়াকে হত্যার জন্য দায়ী করা হয় জেনারেল মঞ্জুরকে। কিন্তু রহস্যজনকভাবে গ্রেফতার অবস্থায় মঞ্জুর হত্যা অনেক রহস্য সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনার নেপথ্যে তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এরশাদের ভূমিকা চিরকাল রহস্য হয়ে থাকবে। জিয়া হত্যায় কোর্ট মার্শালে বেশ কয়েকজন সেনা অফিসারকে ফাঁসিতে ঝোলানো হলেও রাষ্ট্রপতি হত্যা মামলার বিচার হয়নি। জিয়ার পর উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার ক্ষমতায় এলেও তিনি ছিলেন মূলত অবরুদ্ধ। পেছন থেকে কলকাঠি নাড়িয়েছেন যিনি সেই এরশাদ পরবর্তীতে স্বরূপে আবির্ভূত হন। যে কারণে বলা হয়, সব ঘটনার পেছনেই সম্ভবত এই জেনারেলের হাত ছিল। এরশাদ পরবর্তীতে স্বীকার করেছেন, তিনি বহু আগে থেকে ক্ষমতা যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। তার করিৎকর্মা স্ত্রী রওশন নাকি তাকে এমন স্বপ্ন দেখতে উদ্বুদ্ধ করেন।

মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে বৈরাম খান এক অনন্য নাম। হুমায়ুনের মৃত্যুর পর আকবর যখন সিংহাসনে বসেন, তখন তিনি ছোট বালক। শত্রুর চ্যালেঞ্জের মুখে মোগলদের অস্তিত্ব প্রশ্নের সম্মুখীন। বৈরাম ছিলেন বাদশাহ হুমায়ুনের বিশ্বস্ত বন্ধু। বিপদের দিনের পরীক্ষিত সাথী। বৈরাম খানকে কিশোর সম্রাটের অভিভাবক মনোনয়ন করা হয়। আকবর তাকে ডাকতেন ‘খান বাবা’ বলে। বৈরাম খানের চেষ্টায় মোগল সাম্রাজ্য বিপদমুক্ত হয়। একের পর এক রাজ্য মোগলদের আনুগত্য স্বীকার করে। বয়সপ্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে আকবর রাজদ- হাতে নেন। তখনো তিনি বৈরাম খানকে অসীম শ্রদ্ধা করতেন। এটিই বৈরামের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। শুরু হয় ষড়যন্ত্র। আকবরের মন বিষিয়ে তোলার চেষ্টা চলে। একপর্যায়ে দুঃখ ক্ষোভে বৈরাম খান আকবরকে ছেড়ে যেতে চান। তাকে গ্রেফতার করা হয়। শুধু গ্রেফতার নয়, ষড়যন্ত্রকারীদের কুমন্ত্রণায় বৈরাম খানকে অন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে দয়া করে রাজকীয় ব্যবস্থায় তাকে হজে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। বৈরাম খানের ইচ্ছা ছিল, শেষ জীবনটা তিনি পবিত্র মক্কায় কাটাবেন। কিন্তু সে ইচ্ছা পূরণ হলো না। হজে যাওয়ার পথে ঘাতকদের হাতে প্রাণ হারান এই মোগল বীর।

জীবনের চেয়েও কি টাকার মূল্য বেশি? স্থূলবুদ্ধির লোকজনের কাছে  তা হতেও পারে। তুরস্কের নামি কুস্তিগির ছিলেন ইউসুফ ইসমাইল। ১৮৯৮ সালে তিনি আমেরিকায় যান। সে দেশের চ্যাম্পিয়ন কুস্তিগির আইভান লুইসকে হারিয়ে লাভ করেন বিপুল অর্থ। ইসমাইল সেগুলো স্বর্ণমুদ্রায় রূপান্তরিত করেন। আমেরিকা থেকে জাহাজে করে দেশে ফেরার পথে কোমরের বেল্টের সঙ্গে বাঁধা ছিল এই স্বর্ণমুদ্রা। সমুদ্রপথে আরেকটি জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ইউসুফদের জাহাজটি ডুবে যেতে থাকে। এ অবস্থায় বন্ধুরা পরামর্শ দেন স্বর্ণমুদ্রাগুলো সমুদ্রে ফেলে দাও তাহলে ভালোভাবে সাঁতরাতে পারবে। ইউসুফ তা শোনেননি। ভারী বোঝা নিয়ে এক কিলোমিটার সাঁতরানোর পর তিনি ডুবে মরেন। বলা হয়, কার মৃত্যু কখন ঘটবে তা জানার সাধ্য মানুষের নেই। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে হলেও কেউ কেউ নিজের মৃত্যু সম্পর্কে আগাম আভাস দিয়েছেন। অস্ট্রিয়ার নামি সংগীতজ্ঞ ছিলেন আরনল্ড স্কনবার্গ। ১৩ সংখ্যাটিকে আন লাকি থার্টিন বলে অভিহিত করা হলেও তার জীবনের সঙ্গে এই সংখ্যার অদ্ভুত সম্পর্ক ছিল। স্কনবার্গের জন্ম ১৮৭৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। তিনি বলতেন তার মৃত্যুর সঙ্গেও ১৩ সংখ্যাটির যোগ থাকবে। শেষ পর্যন্ত সে কথাটিই সত্য হয়। ১৯৫১ সালের ১৩ জুলাই স্কনবার্গ মৃত্যুবরণ করেন। রাত তখন ১১টা ৪৭ মিনিট। অর্থাৎ মধ্যরাতের ঠিক ১৩ মিনিট আগে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৬। এখানেও রয়েছে ১৩-এর প্রভাব (৭+৬=১৩)। অবাক করা মৃত্যুই বটে।

                লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক।

                ই-মেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর