জিলহজের ১০ তারিখ পশু জবাইয়ের মাধ্যমে মুসলমানরা কোরবানির উৎসব পালন করে। ঈদুল আজহা, হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার মতো যে ঐতিহাসিক নজির স্থাপন করে গেছেন, সে সুন্নত পালনার্থে মুসলিম জাতি আজও কোরবানি করে থাকে। উদ্দেশ্য একটাই- মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টি। এতেই বান্দার সফলতা নিহিত। কোরবানিকে আরবি ভাষায় ‘উজহিয়া’ বলা হয়। আভিধানিক অর্থ হলো, ওই পশু যা কোরবানির দিন জবাই করা হয়। শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে পশু জবাই করাই কোরবানি। কোরবানির তাৎপর্য হলো, ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রিয় বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ। বস্তুত মানব ইতিহাসের সর্বপ্রথম কোরবানি হজরত আদম (আ.)-এর দুই ছেলে হাবিল ও কাবিলের মাধ্যমে হয়েছিল। এ সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আদমের দুই ছেলের বৃত্তান্ত আপনি তাদের যথাযথভাবে শোনান, যখন তারা উভয়ে কোরবানি করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হয় এবং অন্যজনের কবুল হলো না।’ সুরা মায়িদা। কোরবানির বিধান যুগে যুগে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সব শরিয়তেই বিদ্যমান ছিল। কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি প্রতি সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি, যাতে আমি তাদের জীবনোপকরণস্বরূপ যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছি সেগুলোর ওপর তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’ সুরা হজ। প্রচলিত কোরবানি হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর অপূর্ব আত্মত্যাগের ঘটনারই স্মৃতিবহ। এ ঐতিহাসিক ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে কোরআন মজিদে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যখন ছেলে ইসমাইল বাবা ইবরাহিমের সঙ্গে কাজ করার মতো বয়সে উপনীত হলো, তখন ইবরাহিম বলল, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি, তোমাকে আমি জবাই করছি, এখন বল তোমার অভিমত কী। সে বলল, হে আমার বাবা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তা-ই করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম ছেলেকে কাত করে শায়িত করল, তখন আমি তাকে ডাক দিয়ে বললাম, হে ইবরাহিম! তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যিই বাস্তবায়ন করলে। এভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কৃত করি। নিশ্চয়ই এটি ছিল স্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তাকে মুক্ত করলাম এক মহান কোরবানির বিনিময়ে। আমি এর পরবর্তীদের স্মরণে রেখেছি। ইবরাহিমের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। এভাবে আমি সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কত করি।’ সুরা সাফফাত।
কোরবানির তাৎপর্য, গুরুত্ব ও ফজিলত : নেক আমলসমূহের মধ্যে কোরবানি একটি বিশেষ আমল। এ কারণে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় কোরবানি করেছেন। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি বর্জনকারী ব্যক্তির প্রতি তিনি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ ইবনে মাজাহ।
লেখক : খতিব, কাওলা বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা।