শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

কুহেলিকা করি উদঘাটন সূর্যের মতন

ওয়াহিদা আক্তার

কুহেলিকা করি উদঘাটন সূর্যের মতন

বাঙালি তাঁকে মেরে ফেলবে এটা বিশ্বাস করার চেয়ে মৃত্যুকে তিনি শ্রেয় মনে করেছিলেন হয়তো। এ কারণে পৃথিবীর তাবৎ পরাশক্তির গোয়েন্দা সংস্থা তাঁকে বারবার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া সত্ত্বেও তিনি হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, তারা আমার সন্তানের মতো, পিতাকে সন্তান কেন হত্যা করবে। বাংলার আদিগন্ত ফসলের খেতের মতো বিশাল সবুজ হৃদয়ের বঙ্গবন্ধু বিশ্বাসঘাতক সহচরদের চিনতে পারেননি।

বছর ঘুরে আবার এসেছে পিতা-মাতা ও পরিবার হারানো শোকের মাস। আগস্টজুড়ে বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে নিয়ে শোকগাথা, স্মৃতিচারণামূলক, বিশ্লেষণধর্মী লেখা জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার হবে। যারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাজ করেছেন তাদের স্মৃতিচারণামূলক সাক্ষাৎকার ও লেখা প্রকাশ হবে। প্রতিবারই এসব অনুষ্ঠান দেখে পৃথিবীর নৃশংসতম ও নিষ্ঠুরতম ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ভয়াবহতায় শরীর ও মন অবশ হয়ে যায়। গলার কাছে দলা পাকানো কান্নার অনুভূতি আসে যা মনের ভিতরে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি করে, ঘৃণা তৈরি করে। আর সেই প্রশ্নটি জাগে কেন এ হত্যাকান্ড? কারা ছিল এর নেপথ্য কুশীলব? অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশু রাসেলকে কেন প্রতিহিংসার শিকার হতে হলো এবং এ হত্যাকান্ডের সুবিধা কারা ভোগ করেছে?

স্বাধীনতা সংগ্রামের উপজীব্য নিয়ে জহির রায়হানের চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’ মূলত একটি প্রতীকী ছবি। সেখানে একটি ডায়ালগ ছিল- ‘সংসারের চাবিটা এখন কার হাতে’? মায়ের মতো বড় বোনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে ছোট বোনকে বিষ খাওয়ানোর। বিষয়টি আদালতে গড়ালে উক্ত ডায়ালগের মাধ্যমে ঘটনার নেপথ্যের নায়ককে খুঁজে বের করতে চাবির প্রতি আলোকপাত করা হয়। প্রকৃতপক্ষে অপরাধমূলক যে কোনো ঘটনার মোটিভ খুঁজতে সুবিধা কে নিচ্ছে অপরাধতত্ত্বে এ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।

১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠকন্যা শেখ হাসিনাকে ছোট দুটি বাচ্চা নিয়ে স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার বারবার অনুরোধে কিছুটা অনিচ্ছাসত্ত্বেও জার্মানিতে যেতে হয়। ছোট দুটি বাচ্চা একা সামলাতে পারবেন না ভেবে ছোট মেয়ে শেখ রেহানাকে বোনের সঙ্গে যেতে দেওয়া হয়। ১০ বছরের ছোট ভাই রাসেলও জিদ ধরেছিল হাসুপার সঙ্গে যাওয়ার। সেদিন বিমানবন্দরে পরিবারের সবাই গিয়েছিল। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব প্রাণপ্রিয় নাতি-নাতনিদের বিদায় দিতে গিয়ে অনেক কেঁদেছিলেন। এখন শেখ হাসিনার কাছে মনে হয় মায়ের সেদিনের কান্না ছিল অস্বাভাবিক। এই অশ্রুভেজা কাহিনি অনেকবার শুনেছি। আরও শুনেছি ‘ডটারস টেল’-এ বিস্তারিত। দুই বোনের সেদিনকার অনুভূতি তাঁরা ব্যক্ত করেছেন দেড় ঘণ্টায় এই চলচ্চিত্রে।

টেলিফোনের রিংটোন সেদিন অস্বাভাবিকভাবে বেজে বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূতের বাসায় খবরটি পৌঁছে দিয়েছিল। সেই ভয়ংকর রিংটোন শেখ হাসিনার বুকে এখনো বাজে। ঢাকায় ক্যু হয়েছে। কেউ বেঁচে আছে কি না তা শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা হওয়ার আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যাদ্বয় জানতে পারেননি। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর উদ্যোগে ভারত সরকার বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। একটি ছোট্ট বাসায় ছোট দুটি বাচ্চাসহ বেঁচে যাওয়া একমাত্র ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে আত্মপরিচয় লুকিয়ে শুরু হয় শেখ হাসিনা ও ড. ওয়াজেদ মিয়ার নির্বাসিত জীবনের সংসার। অস্বাভাবিক নিস্তব্ধতা নেমে আসে তাদের জীবনে। শুনেছি ঘটনার পর শেখ হাসিনা একদিকে চেয়ে বিষণ্ণ ও উদাস মনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করে দিতেন। বাচ্চাদের খাবার দেওয়ার কথাও তিনি ভুলে যেতেন। তাদের নতুন পরিচয় হলো তালুকদার পরিবার। মি. ও মিসেস তালুকদারকে বলা হলো সাবধানতার সঙ্গে থাকতে। অপরিচিত পরিবেশে সাবধানতার অর্থ হলো ঘরে বন্দী থাকা। সব মিলিয়ে আতঙ্কের মধ্যে বসবাস ছিল শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার নির্বাসিত জীবনে। ড. ওয়াজেদ মিয়া জীবনের শেষ পর্যন্ত এই ট্রমা থেকে বের হতে পারেননি।। খুব বেশিদিন যেতে হয়নি এর মধ্যেই শেখ রেহানা অনুভব করলেন এভাবে দিন যেতে দেওয়া যাবে না। দুই বোন পিতৃহত্যার বিচারের জন্য শপথ নেন নীরবে। শেখ রেহানা লন্ডন চলে গেলেন। পরিবারের মতে পূর্বনির্ধারিত পরিবারে শেখ রেহানার বিয়ে হলো। কিন্তু টিকিট কেনার সামর্থ্য না থাকায় শেখ হাসিনা বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারলেন না। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশের মাটিতে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চেয়ে জনমত সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হন ও প্রকাশ্যে বিশ্ববাসীর কাছে পিতা হত্যার বিচার চেয়ে আবেদন জানাতে থাকেন।

সজীব ওয়াজেদ জয়, সাময়া ওয়াজেদ হোসেন পুতুলসহ পরিবারের সব সন্তান শিশু বয়স থেকে এ ট্র্যাজেডির কথা শুনে শুনে বড় হয়েছেন। এখনো তারা জীবনের কোনো বাড়তি চাহিদা প্রকাশ করতে অনভ্যস্ত রয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনে জেলজুলুম-অত্যাচারের মধ্যে সন্তানদের লেখাপড়া কেমন ব্যাহত হয় তা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা জীবন দিয়ে ঠেকে শিখেছেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের অন্তর্মুখী চরিত্র এ কারণেই। এ ক্ষত থেকে বঙ্গবন্ধুর পরিবারে আজকে যে শিশুটি জন্ম নিচ্ছে সে-ও মুক্ত হতে পারছে না। ড. ওয়াজেদ মিয়া আমৃত্যু শেখ হাসিনার রাজনীতিতে কঠিন পথ পাড়ি দেওয়া, বারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে বেঁচে যাওয়া, হত্যা প্রচেষ্টার শিকার হওয়া- সবকিছু মিলিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকতেন। বাংলাদেশে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ নিষিদ্ধ ছিল। আরও নিষিদ্ধ ছিল জয় বাংলা সেøাগান ও রাজাকার বা পাক হানাদার উচ্চারণ। বঙ্গবন্ধুর গড়া রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে পিতার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে বিপৎসংকুল বাংলাদেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। লাখো মানুষ ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে দেশে স্বাগত জানায়। দুই হাত তুলে মহান আল্লাহর কাছে তিনি পিতা হত্যার বিচার চান। বাবার ভালোবাসার বাংলার দুঃখী মানুষের কাছে গিয়ে তিনি যেন বাবার ভালোবাসার স্পর্শ অনুভব করেন।

তখন খুনিরা প্রকাশ্যে বাংলাদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা রাষ্ট্রীয় মদদে ক্ষমতায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম উচ্চারণ নিষিদ্ধ। ইনডেমনিটি আইন করে আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার নিষিদ্ধ। তাদের সন্তানরা যে স্কুলে পড়ে জয় ও পুতুল সেই স্কুলে পড়ে দেখে শেখ রেহানা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে বাচ্চা দুটিকে ভারতের নৈনিতালে ভর্তি করে দিলেন। আর যা-ই হোক কোনো সন্তানের শিক্ষা যেন ব্যাহত না হয় সে প্রচেষ্টা নিলেন। এর মধ্যেই ধীরে ধীরে সংগঠন গোছানো, দেশে-বিদেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের জন্য জনমত গঠনের কাজ করতে থাকেন। পাশে পেয়ে যান বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করা অগণিত নেতা-কর্মী-সমর্থক। যারা দুঃসময়ে ৭ মার্চের ভাষণ বাজিয়ে বঙ্গবন্ধু ও জয় বাংলাকে বিস্মৃত হতে দেননি। শুরু হয় শেখ হাসিনার সংগ্রামের নিরন্তর পথচলা। আজও সেই চলা শেষ হয়নি।

অপরাধীরা যখন অপরাধ করে, যড়যন্ত্র করে তখন ভুলে যায় সৃষ্টিকর্তা অলক্ষ্যে সব দেখছেন, সব শুনছেন। কথায় আছে- তোমাকে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে। সেসব খুনির অহঙ্কারী উচ্চারণ আজ তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এভাবেই প্রকৃতির বিচার হয়। ইতিহাসের কোনো সীমা লঙ্ঘনকারী আজ পর্যন্ত পার পায়নি। বাংলাদেশ সৃষ্টির ৫০ বছরের মধ্যে ২১ বছরই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দল ক্ষমতার বাইরে ছিল। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ খুন, জেলজুলুম-অত্যাচার সব সহ্য করে বঙ্গবন্ধুর প্রাণের সংগঠনটি বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। আজ পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পাচ্ছে এর চেয়ে বড় প্রতিশোধ আর কী হতে পারে। খুনি মাজেদের স্বীকারোক্তি থেকে মনে হয়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের নীলনকশার শিকড় অনেক গভীরে। আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের বিভিন্ন লেখায়-বক্তৃতায় সেই শিকড় খুঁজে বের করার দাবি উঠছে।

মুক্তিযুদ্ধ চলা অবস্থায় প্রবাসী সরকারের মধ্যে দুটি ভিন্নমুখী গ্রুপ সক্রিয় ছিল। এক গ্রুপ বিশ্বজনমতের চাপ সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্ত করা ও চলমান জনযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মূল লক্ষ্য নিয়ে কাজ করত। অন্য একটি গ্রুপ পাকিস্তানের বদান্যতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মুক্তি ও পাকিস্তানের সঙ্গে একটি কনফেডারেশন হোক সে লক্ষ্য নিয়ে কূটনৈতিক অপচেষ্টা অব্যাহত রাখে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অবর্তমানে মুক্তিসংগ্রামের স্বাধীনতাযুদ্ধকে পরিচালনা ছিল খুবই দুরূহ। বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য কারও নেতৃত্ব তারা মানতে চাইত না। এ নিয়ে নেতৃবৃন্দের মধ্যে চাপা বিরোধ ছিল। ইচ্ছা হলেই কেউ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে পারত না। মুক্তিযুদ্ধকে কেউ যেন ভিন্ন মতে ও পথে প্রবাহিত করাতে না পারে সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হতো।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও পাকিস্তানের ভুট্টো আশা ছাড়েননি। বঙ্গবন্ধু মুক্তি পাওয়ার পর কোনোমতে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় কি না দেখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে দীর্ঘ নয় মাস জেলখানায় আটক রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। মূলত এ নয় মাস তাঁকে সূর্যের মুখ দেখতেও দেওয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, দেশে ফিরে না আসা পর্যন্ত তিনি কিছু বলবেন না। বিষয়টি তিনি ১০ জানুয়ারি, ১৯৭২ ভাষণে উল্লেখ করেছিলেন। মূলত যে গ্রুপটি পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন চেয়েছিল তাদের আশাভঙ্গের বেদনা থেকে তারা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ও পরবর্তী সময়ে বিরোধিতা করে এবং স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু যেন বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে না পারেন সে চেষ্টা অব্যাহত রাখে। খুনিরা কোনো দিন ভাবতে পারেনি এই বাংলাদেশে শেখ মুজিবের কোনো বংশধর আবার তাঁর আদর্শ নিয়ে দেশ শাসন করবে। তারা জানত শেখ মুজিব বেঁচে থাকতে তাঁকে ইলেকশনে হারানো যাবে না। শেখ মুজিব বেঁচে থাকতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষতা মানে রাষ্ট্র নিজে কোনো ধর্ম পালন করবে না কিন্তু রাষ্ট্রের প্রতিটি ধর্মাবলম্বী নাগরিক স্বাধীনভাবে বিনা বাধায় নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। শেখ মুজিবের কোনো উত্তরসূরি হিসেবে তাঁর পরে তাঁর যোগ্য পুত্ররা মানুষের ভালোবাসায় শেখ মুজিবের স্থান পূরণ করবে মনে করে ১০ বছরের শিশু রাসেলও খুনিদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। বঙ্গবন্ধুকে বিতর্কিত ও অজনপ্রিয় করতে প্রথমেই তারা পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য বিশেষ করে শেখ কামালকে টার্গেট করে অপপ্রচার চালাতে থাকে যা ছিল চরম মিথ্যাচার। সেই ঘিতে আগুন ঢেলে দেয় বঙ্গবন্ধুর দল থেকে বের হয়ে যাওয়া একটি দল। কালের পরিক্রমায় সবকিছু বের হয়ে আসছে।

খুনিদের সবচেয়ে হতাশার জায়গা হলো বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুভূতি ধারণ করা তাঁরই সন্তান শেখ হাসিনার রাজনীতিতে আসা। একই খুনি চক্র বংশপরম্পরায় ১৫ আগস্টের অসমাপ্ত কাজ হিসেবে একবার নয় দুবার নয় ১৯ বার শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এখনো প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে এখন অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়েছে। নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু হয়েছে। মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীতে টানেল, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পেয়ে মানুষের জীবনমানে উন্নয়ন হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বঙ্গবন্ধুর প্রাণপ্রিয় কৃষক, শ্রমিক ও দিনমজুর পেট পুরে খেতে পারছে। খাদ্যে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। আজ বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন খুব খুশি হতেন। বাঙালির পিঠ চাপড়ে বলতেন, ‘শাবাশ বাঙালি! তোরা এগিয়ে যা, আমি আছি তোদের সাথে।’

বাংলাদেশ যত দিন বেঁচে থাকবে তত দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মধ্যগগনে সূর্যের মতো দেদীপ্যমান থাকবেন প্রতিটি হৃদয়ে ও বাংলাদেশ নামক উন্নত রাষ্ট্রের পতাকার লাল বৃত্তে। রাসেল নেতৃত্ব দেবে শিশু-কিশোরদের আর কামাল-জামাল যুব সংগঠন ও ক্রীড়াঙ্গনের নেতৃত্বের প্রেরণার প্রতীক হিসেবে। মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ও সদ্যবিবাহিত বঙ্গবন্ধুর দুই পুত্রবধূর চরম আত্মত্যাগের কাহিনি ভারাক্রান্ত করবে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়। বঙ্গবন্ধু যেমন জীবন দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার মূল্য দিয়েছেন তেমনি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে রক্ত দিতে দ্বিধা করেনি ৩০ লাখ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর জেলখানায় হত্যাকান্ডের শিকার বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর জাতীর চার নেতাসহ অগণিত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী যারা দুঃসময়ে চরম নির্যাতন ভোগ করেও বঙ্গবন্ধুকে হৃদয় থেকে মুছে ফেলেননি। একটি পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের অবদানে একটি দেশের জন্ম, একটি দেশের স্বাধীনতা বিন্দু থেকে বৃত্তে রূপ লাভ করে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকায় স্থান করে নিয়েছে। সত্য কোনো দিন চাপা থাকে না, সত্য প্রকাশিত হবে, সত্য একদিন বের হয়ে আসবে, সত্যের জয় হবেই।

                লেখক : অতিরিক্ত সচিব।

সর্বশেষ খবর