মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

কন্যাসন্তান সৌভাগ্যের প্রতীক

আবদুল্লাহ আল-মামুন আশরাফী

কন্যাসন্তান সৌভাগ্যের প্রতীক

সন্তান মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামতগুলোর অন্যতম। সন্তান পৃথিবীতে আসার ক্ষেত্রে মা-বাবা হচ্ছেন একটি বাহ্যিক মাধ্যম। কিন্তু সন্তান তৈরিতে মা-বাবার কোনো ক্ষমতা নেই। সন্তান একমাত্র প্রজ্ঞাময় মহাজ্ঞানী আল্লাহতায়ালার দান। তাঁর কুদরতের এক অপূর্ব নিদর্শন। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে সন্তান দান করেন। কাউকে পুত্র দেন, কাউকে দেন কন্যা। আবার কেউ সন্তানহীনতার দুঃসহ জ্বালা নিয়ে জীবন নদী পাড়ি দিতে বাধ্য হন। এটি আল্লাহতায়ালার সৃষ্টির এক নিগূঢ় রহস্যাবৃত বিষয়। কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদের দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল।’ সুরা শুরা, আয়াত ৪৯-৫০।

এ আয়াতের বার্তা সুস্পষ্ট। সন্তান একমাত্র আল্লাহর দান। এখানে সৃষ্টির কোনো হাত নেই। যাকে চান তাকেই তিন পুত্র কিংবা কন্যা সন্তানের নিয়ামত দান করেন। পুত্র কন্যা দুটোই মূল্যবান নিয়ামত। তবে বিভিন্ন আয়াত, হাদিস ও সালাফের উক্তির আলোকে বোঝা যায় কন্যাসন্তান সৌভাগ্যের প্রতীক। মেয়েরা মা-বাবার জীবনে কল্যাণের বার্তা নিয়ে আসে। দেখুন আয়াতে আল্লাহতায়ালা প্রথমে কন্যাসন্তানের কথা উল্লেখ করেছেন। তাই কোনো কোনো আলেমের ভাষ্য, কন্যাসন্তানের বিশেষ মর্যাদার দিকে ইঙ্গিত রয়েছে আয়াতটিতে। বিখ্যাত মুফাসসির আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ আল কুরতুবি (রহ.) (মৃত্যু ৬৭১ হি.) তাঁর তাফসির গ্রন্থে উল্লেখ করেন, হজরত ওয়াসিলা ইবনে আসকা (রহ.) বলেছেন, ‘যে নারীর গর্ভে প্রথম কন্যাসন্তান জন্ম নেবে সে নারী পুণ্যময়ী।’

কন্যাসন্তানের জন্মগ্রহণে আনন্দিত হওয়া কোরআনের শিক্ষা। কন্যাসন্তান জন্ম নিলে যারা খুশি হয় না, লজ্জাবোধ করে কোরআনে তাদের নিন্দা করা হয়েছে। প্রাক-ইসলাম যুগে আরবের লোকেরা কন্যাসন্তানকে অশুভ মনে করত। কারও কন্যাসন্তান জন্ম নিলে লজ্জায় তার চেহারা মলিন হয়ে যেত। অনেকে বর্বরতার সীমা অতিক্রম করে কন্যাসন্তানকে জীবন্ত দাফন করার মতো লোমহর্ষক হিংস্রতায় মেতে উঠত।

আল কোরআনে এহেন নীচ বর্বর আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তাদের কাউকে কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয় তখন তাদের মুখ কালো হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে, না হলে তাকে মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে। শুনে রাখ, তাদের ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট।’ সুরা নাহল, আয়াত ৫৮-৫৯।

কোরআন-সুন্নাহর এ দীপ্তিময় নির্দেশনাগুলোর আলোকে এ কথা সূর্যালোকের মতো প্রতীয়মাণ হয় যে কন্যাসন্তান কোনো বোঝা নয়। নয় অশুভ লজ্জার কারণ। বরং তারা সৌভাগ্যের প্রতীক। বরকত আনয়নকারী। কন্যাসন্তান চিরসুখের সুনির্মল ঠিকানা জান্নাতের বার্তাবাহী।

লেখক : খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ, টঙ্গী, গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর