শুক্রবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ছাত্রলীগকে অস্বীকার করে স্বাধীনতার ইতিহাস হয় না

নূরে আলম সিদ্দিকী

ছাত্রলীগকে অস্বীকার করে স্বাধীনতার ইতিহাস হয় না

নিত্য প্রবাহিত স্রোতস্বিনী নদীর মতো আমাদের জীবন ধীর, মন্থর ও অবিচল গতিতে ধেয়ে চলেছে সম্মুখে। সাদা চোখে দেখলে শান্ত -স্নিগ্ধ প্রশান্তই মনে হবে এ জীবনযাত্রাকে। কিন্তু একটু গভীরে তলিয়ে দেখলে অথবা এর গভীর অতলান্ত পর্যালোচনা করলে এ নিস্তব্ধতা, এ নিথর বৈচিত্র্যহীনতা দুঃসহ ও যন্ত্রণাময়ই। সমাজ ও রাজনৈতিক জীবনের গভীরে কেউ যদি পানকৌড়ির মতো ডুব দেন, তবে শান্তি, স্বস্তি ও পরিতৃপ্তির মণিমুক্তা কুড়িয়ে আনতে পারবেন না। অনেক সংগ্রামের পথপরিক্রমণের মধ্য দিয়ে, অনেক বুকের তাজা-তপ্ত রক্তক্ষরণের ভিতর দিয়ে যে গণতন্ত্রের উন্মেষ, বিকাশ ও ব্যাপ্তি- সে গণতন্ত্রই আজ মুমূর্ষুপ্রায় অবস্থায় ইনটেনসিভ কেয়ারে। অসংখ্য নক্ষত্র যেমন দিনের আলোর গভীরে লুকিয়ে থাকে, সূর্য না থাকলে আকাশ যেমন দীপ্তিময় হয় না, পাতাল যেমন প্রদীপ্ত সূর্যরশ্মিতে উদ্ভাসিত হয় না, সূর্যের বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মি-বিবর্জিত এ ধরণির কোনো অংশ যেমন শোভিত হয় না তেমনি বিরোধী শক্তি ছাড়া সরকারের কোনো পদ্ধতিকেই পুরোপুরি গণতান্ত্রিক বলা যায় না।

বুকের তাজা লাল টকটকে রক্তের চড়ামূল্যে কেনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সেই ভাষা আন্দোলনের রক্তে রঞ্জিত পথ ধরে বিশাল বিস্তীর্ণ ও কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করেছে বাংলার জাগ্রত জনতা। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে নির্যাতন-নিগ্রহের পথ অতিক্রম করে দুর্গম দুস্তর পথের যাত্রী এই বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার তীরে নোঙর করে। এ দুস্তর তরণির হাল ধরেছিলেন দুঃসাহসী নাবিক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু সেই তরণির দুর্বার দুস্তর পথে অবিশ্রান্তভাবে দাঁড় বেয়েছে ছাত্রলীগের অগণিত-অসংখ্য কর্মী। অনেক নির্যাতনের কালবোশেখি ঝড় এ দুর্গম পথের দুঃসাহসী যাত্রীদের ওপর বয়ে গেছে। তবু নাবিকের লক্ষ্য ছিল স্থির, প্রত্যয় ছিল সুদৃঢ়, চেতনা ও মননশীলতা ছিল অনির্বাণ। তারা শেকল পরার ছলে শেকল ভেঙেছে বারবার।

’৬৬-এর শিক্ষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৬৬-এর স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধিকার আন্দোলন, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে উত্তরণের সেই উদ্গত-উদ্যত-উদ্ধত আত্মপ্রকাশের বহ্নিমান মুহূর্তগুলোর সঙ্গে আমার একটি নিবিড় ও সক্রিয় সম্পৃক্ততা ছিল- এটি ভাবতে আজও আমার শিরায় শিরায় শিহরণ জাগে, রক্তে নাচন ধরায়। অনুভূতির পরতে পরতে আত্মপরিতৃপ্তির সুরমূর্ছনা তন্ময়তার সৃষ্টি করে। বুক ফাটা চিৎকার করে নতুন প্রজন্মকে বলতে ইচ্ছা করে আমার পূর্বসূরিরা বর্ণমালার আন্দোলনের সূচনা করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনার উন্মেষ ও বিকাশের যে রক্তরঞ্জিত পতাকাটি আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, সেই পতাকাটি নিয়ে ’৬২-এর পর অনেক ঝঞ্ছাবিক্ষুব্ধ ও কণ্টকাকীর্ণ পথ আমরা দুর্জয় দুঃসাহসে অতিক্রম করেছি। কিন্তু পতাকাটি বহন করে কখনই ভূলুণ্ঠিত হতে দিইনি। আমরা পথ চলতে গিয়ে শুধু কারাগারের নির্মম নিষ্ঠুর নিঃসঙ্গতার যন্ত্রণাই নয়, অনেককেই ব্যক্তিগত জীবনে আপনজনকে হারানোর নিদারুণ দুঃসংবাদও শুনতে হয়েছে।

কারাগারের নির্মম, নির্জন ও নিষ্ঠুর প্রকোষ্ঠে বসে আমি মায়ের মৃত্যুসংবাদ শুনেছি, আমি প্যারোল চেয়ে প্যারোল পাইনি। আর পাঁচটি মানুষের মতো যে মায়ের স্নেহে ও সান্নিধ্যে আমার জীবন গড়ে উঠেছে, অতি শৈশবে যে মাতৃদুগ্ধ পান করে আমি প্রতিপালিত হয়েছি, কৈশোরের দুরন্ত এবং অশান্ত ও অবিন্যস্ত দুষ্টুমির যন্ত্রণা যে মাকে সহ্য করতে হয়েছে, যে মা মৃত্যুকালীন আমাকে একনজর দেখার জন্য হৃদয়ের সমস্ত আকুতি নিয়ে পথের দিকে চেয়ে থেকেছেন, সেই মা মৃত্যুকালীন তাঁর শেষ ইচ্ছাটুকু পূরণ করতে পারেননি। আমাকে একপলক দেখার সুযোগ পাননি। বাবার কাছে জেলগেটে মায়ের মুমূর্ষু অবস্থার সংবাদ শুনে তৎকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলাম, আমার আজীবন কারাদণ্ডের বিনিময়ে হলেও আমাকে মায়ের মৃত্যুকালীন তাঁর শিয়রের পাশে একটুখানি বসার জন্য, মৃত্যুকালীন তাঁর মুখে একটু পানি দেওয়ার জন্য আমাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হোক। এর বিনিময় হিসেবে আমাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও আমি পরিতাপ করব না, প্রতিবাদও করব না। ’৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর কারাগারের নিষ্ঠুর প্রকোষ্ঠ থেকে অবমুক্তি পেয়ে ছাত্রলীগের একজন নির্ভীক ও অকুতোভয় কর্মী হিসেবে দুঃখের এই করুণ কাহিনি অবিশ্রান্তভাবে বলে বেড়িয়েছি।

আমার প্রজন্মকে সাক্ষী রেখে নতুন প্রজন্মকে আমি বলতে পারি, তখনকার দিনে প্রায় প্রতিটি জনসভায় আবেগাপ্লুত কণ্ঠে হৃদয়ের যন্ত্রণার আবির-মিশ্রিত ভাষায় আমি উল্লেখ করতাম- আমার প্যারোল আবেদনের দরখাস্তে আমি উল্লেখ করেছিলাম, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিনিময়ে হলেও আমাকে প্যারোলে মৃত্যুপথযাত্রিণী মায়ের পাশে যেতে দেওয়া হোক। আমি মায়ের মুখে এক ফোঁটা পানি দিতে চাই। আমার মৃত মায়ের জানাজা পড়তে চাই, আমি তাঁর লাশ কবরে নামাতে চাই। আমার মা ঐশ্বর্য-প্রাচুর্য-বৈভব- কিছুই আমার কাছে চাননি। শুধু জীবনের অন্তিমলগ্নে আমাকে একনজর দেখতে চেয়েছে। আমাকে তাঁর শেষ ইচ্ছাটি পূরণ করার সুযোগ দেওয়া হোক। বাংলাদেশের সেদিনের বাউলের এই চারণকথা, দুঃখ-বেদনার অন্তর্ভেদী মর্মান্তিক পাঁচালি আমার প্রজন্মের অনেকেই শুনেছেন। স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশের জনসমুদ্রের বুকে দাঁড়িয়ে আমি বক্তৃতা করিনি, দুঃখভারাক্রান্ত কবিয়ালের মতো বিয়োগান্ত পাঁচালি গেয়েছি। তখনকার বিশাল জনসভায় দাঁড়িয়ে আমি বেদনাপ্লুত কণ্ঠে যখন দুঃখের পাঁচালি গাইতাম, তখন আমার দুই চোখ অবিশ্রান্ত অশ্রুধারায় ভরে যেত। আমি কাঁদতাম, গণসমুদ্রের ফেনিল চূড়ায় ভিসুভিয়াসের মতো জ্বলে ওঠা জনগণও অঝরে কাঁদত। শত কান্না, অজস্র বিগলিত অশ্রু, কারাগারের নিঃসঙ্গতার যন্ত্রণা আমাদের কখনই পথভ্রষ্ট করতে পারেনি। কারাগারের নিষ্ঠুর ও নির্জন প্রকোষ্ঠে বসে মায়ের মৃত্যুসংবাদ শোনার মতো অনেক মর্মান্তিক দুঃসংবাদ শুনতে হয়েছে অনেক রাজবন্দিকেই। কিন্তু কেউই কখনো কোনোভাবেই আত্মসমর্পণ করেননি। স্বাধীনতার দিগন্তবিস্তৃত পথ থেকে কেউ কখনো বিচ্যুত হননি। এ আত্মত্যাগের মহিমাই আন্দোলনের বুকে প্রাণসঞ্চার করেছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে সম্মুখের দিকে প্রত্যয়দৃঢ় চিত্তে এগিয়ে যেতে উদ্দীপ্ত করেছে, উজ্জীবিত করেছে, উদ্বেলিত করেছে।

সেদিনের সেই পথপরিক্রমণের সূর্যস্নাত আলোকরশ্মি সমস্ত পথিককে প্রজ্বলিত অগ্নিশিখায় পথ হাঁটতে শিখিয়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ, বিকাশ, ব্যাপ্তি ও সফলতার আন্দোলনের গর্ভেই সৃষ্টি হয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের মৃত্যুঞ্জয়ী অনুপ্রেরণা। নিরস্ত্র বাঙালি লড়তে শিখেছে সশস্ত্র ও পৈশাচিক পাকিস্তানি সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে। শুধু লড়তে শিখেছে বললেই সত্যের পূর্ণ মর্যাদা প্রদান করা হবে না, বরং পাশবিক শক্তির কাছ থেকে বিজয়ও ছিনিয়ে এনেছে। বুকনিঃসৃত লাল টকটকে রক্তে বাংলার দো-আঁশ মাটিকে সিক্ত করেছে, তাদের বুক-নিংড়ানো ছোপ ছোপ রক্তে বাংলার সবুজ দূর্বাগুলো রক্তপলাশের রূপ নিয়েছে। যে মা আমার ঢেঁকিতে পাড় দিতেন, মাঝরাতে উঠে ধান সিদ্ধ করতেন, যে মা আমার জর্দা দিয়ে পান খেয়ে দেয়ালের গায়ে পিক ফেলতেন- এই মা আমাদের আপন হাতে নিপুণভাবে সাজিয়ে রণাঙ্গনে পাঠিয়ে দেন। বিশ্বের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এ এক বিরল ঘটনা। পৃথিবীর কোনো স্বাধীনতা আন্দোলনেই জনগোষ্ঠীর এত বিরাট অংশের অবদান, অস্তিত্ব ও অংশগ্রহণের দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায় না। আজ আমি জীবনসায়াহ্নে। অতীতের জাজ্বল্যমান ঘটনাগুলো আজও আমার রক্তে শিহরণ জাগায়, হৃদয়ের অনুভূতিগুলো ময়ূরের মতো নেচে ওঠে। আমার উদ্গত-উদ্যত-উদ্ধত সত্তায় একটি প্রত্যয়বোধের জন্ম দেয়- আমাদের হাতে পূর্বসূরিদের তুলে দেওয়া পতাকা ভূলুণ্ঠিত হয়নি। বরং দীপ্ত গৌরবে পত পত করে উড়েছে। সমস্ত পৃথিবী বিস্মিত নয়নে আশ্চর্যান্বিত হয়ে বিমোহিত হৃদয়ে অবলোকন করেছে সশস্ত্র হিংস্র ও পাশবিক শক্তির বিরুদ্ধে শান্তিপ্রিয়, দৃঢ় ও নিরস্ত্র বাঙালির গৌরবময় ঐতিহাসিক বিজয়।

আমাদের প্রজন্মের দায়িত্ব আমরা পূর্ণ সফলতায় সম্পূর্ণভাবে পালন করেছি। আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের এ অভিযাত্রায় ইতিহাসের প্রয়োজনেই অগ্রভাগে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। কিন্তু তাঁর পশ্চাতে দুর্জয়, দুঃসাহসী অযুত নিযুত বাঙালি এবং ছাত্রলীগের নির্ভীক ও মৃত্যুঞ্জয়ী সেনানীর প্রতীতি ও প্রত্যয়ের প্রদীপ্ত সূর্য যে আলোকরশ্মি ছড়িয়েছিল সেই সীমাহীন আত্মত্যাগ এবং বাঙালি ও লড়াকু ছাত্রলীগ কর্মীদের দুর্বার গতিময়তাকে অস্বীকার করা সম্ভব কেমন করে? এ আন্দোলনের মূর্তপ্রতীক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তবু এটিই ইতিহাসস্বীকৃত যে স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধিকারের বিস্তীর্ণ অভিযাত্রার মিছিলের প্রদীপ্ত অগ্নিমশাল সঙ্গে নিয়ে এ দেশের মানুষকে পথ চিনিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নির্ভীক ও মৃত্যুঞ্জয়ী কর্মীরা।

আমাদের প্রজন্মের অনেকেই আজ আর নেই। অনেকেই মৃত্যুর দুয়ারে কড়া নাড়ছে। এ জীবনসায়াহ্নের অন্তিম পাদপীঠে দাঁড়িয়ে নতুন প্রজন্মকে উদাত্ত কণ্ঠে আমরা বলতে চাই- স্বাধীনতার যে সূর্যটিকে আমরা পরাধীনতার বক্ষ বিদীর্ণ করে ছিনিয়ে এনেছি, সেই সূর্যটিকে অমলিন রাখার দায়িত্ব আজকের প্রজন্মের। ব্যক্তিতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র ও গোষ্ঠীতন্ত্রের মেঘে সেই অর্জিত স্বাধীনতার সূর্যকে তোমরা ঢেকে যেতে দিও না। গণতন্ত্রের যে বিজয় তোমাদের পূর্বসূরিরা অর্জন করেছে, সেই গৌরবের স্রোতধারায় তোমরা জীবনের তরণিকে প্রবাহিত করবে। সেদিনের প্রজন্মের স্বাধীনতার যে অর্জন, তার অগ্রভাগে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিন্তু সেই ঝঞ্ছাবিক্ষুব্ধ সমুদ্রের বুকে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার তরণিকে সাফল্যের সৈকতে নোঙর করতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ছাত্রলীগের যে কর্মীরা সফল হয়েছে- সে সফলতাকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করে ধরে রাখার দায়িত্ব তোমাদের। পৃথিবীকে চমকে দেওয়া সেই বিস্ময়কর বিজয়ের উত্তরসূরি যারা, তাদের দেশ বিনির্মাণে সুতীক্ষè দক্ষতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ ঐশ্বর্যমণ্ডিত বাংলাদেশ নতুন প্রজন্মের প্রযত্নে আগামী প্রজন্মের জন্য শান্তির নীড় স্নিগ্ধ সমীর রচনা করবে- এটি আমি সুদৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

জীবনসায়াহ্নে এসে আমি বিস্ময়ভরে লক্ষ্য করছি, রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদ্যাপিত হচ্ছে কিন্তু কোথাও কোনোভাবেই স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এমনকি ছাত্রলীগের অবদান উল্লিখিত হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতা আন্দোলনের মুখ্য ব্যক্তিত্ব এবং এ অগ্রযাত্রায় তিনিই অগ্রনায়ক কিন্তু একজন ব্যক্তির কণ্ঠ যত বিদারীই হোক না কেন, বহু কণ্ঠ ছাড়া যেমন দৃপ্ত মিছিল হয় না, স্লোগান উচ্চারিত হয় না, তেমনি বঙ্গবন্ধুর একার দ্বারা তো স্বাধীনতার এ মহাযজ্ঞ সম্পন্ন করা সম্ভব ছিল না। এ মহাযজ্ঞে সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ ছিল, তবে ছাত্রলীগই অগ্রভাগে ছিল প্রজ্বলিত মশাল হাতে নিয়ে। ভাষা আন্দোলনের গৌরব যেমন বরকত, সালাম-সম্পৃক্ত ছাত্রলীগ ও ছাত্রসমাজের, ঠিক তেমনি স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবের গর্বিত অংশীদার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তথা ছাত্রলীগ। যারা ইতিহাস নির্মাণ করেছে, তাদের অস্বীকার করে ইতিহাস বর্ণনা করা যায় না। আজ চাটুকার মোসাহেবদের স্মরণ রাখা উচিত, ছাত্রলীগকে অস্বীকার করে বা পাশ কাটিয়ে স্বাধীনতার ইতিহাস বর্ণনা করার কোনো প্রচেষ্টা ঔদ্ধত্য মাত্র।

ছাত্রলীগই বঙ্গবন্ধুকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছে, জনতার হৃদয়ের কন্দরে অধিষ্ঠিত করেছে। আমি বাংলার নগরে-বন্দরে জনসমুদ্রের ফেনিল চূড়ায় অভিষিক্ত হয়ে বারবার বলেছি, বহুবার বলেছি- এ অর্ধশতাব্দী উদ্যাপনের গৌরবোজ্জ্বল মুহূর্তে ঐতিহাসিক সূত্রটিকেই তুলে ধরে উচ্চকণ্ঠে বলতে চাই- বঙ্গবন্ধু এ আন্দোলনের কর্ণধার ছিলেন এবং ছাত্রলীগই তার রূপকার। বঙ্গবন্ধুকে বটবৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করলে মাটিতে প্রোথিত তার শিকড় হলো ছাত্রলীগ। বঙ্গবন্ধুকে আকাশের সঙ্গে তুলনা করলে তার প্রদীপ্ত সূর্যরশ্মি ছাত্রলীগ। বঙ্গবন্ধুকে সমুদ্রের সঙ্গে তুলনা করলে তার উচ্ছ্বসিত ঊর্মিমালা হলো ছাত্রলীগ। বঙ্গবন্ধু নিজেই তো বারবার বলেছেন- ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাস’।

লেখক : স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা।

 

সর্বশেষ খবর