নমরুদ, ফেরাউনের অত্যাচার-নির্যাতনের করুণ ইতিহাস সম্পর্কে বিশ্ববাসী অবহিত আছে। অবহিত আছে আবু জেহেল, আবু লাহাব ও এজিদের নির্মমতা সম্পর্কে। তারা কেউ আজ পৃথিবীতে নেই। সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে তাদের চিরবিদায় হয়েছে। রয়ে গেছে বিশ্ববাসীর অন্তরে তাদের কালো ইতিহাস। আল্লাহতায়ালা ছাড় দেন। কিন্তু ছেড়ে দেন না। এসব ইতিহাস সর্বকালের অহংকারীদের জন্য শিক্ষণীয়, সতর্কবার্তা। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই তোমার পালনকর্তার ধরা বড়ই কঠিন।’ (সুরা বুরুজ-১২)।
ফেরাউন দাম্ভিকতার সীমা লঙ্ঘন করেছিল। সে নিজেকে বড় খোদা হিসেবে দাবি করেছিল। আল্লাহতায়ালা ফেরাউনের পরিণতি অত্যাচারীদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কোরআনে সবিস্তারে উল্লেখ করেছেন। তার লাশটিও কোনো জড় ও জীব গ্রহণ করেনি। পরবর্তীদের শিক্ষা গ্রহণের জন্য রয়ে গেছে মিসরের পিরামিডে। ‘এবং সে বলল, আমিই তোমাদের বড় পালনকর্তা। অতঃপর আল্লাহ তাকে পরকালে ও ইহকালে শাস্তি দিলেন। যে ভয় করে তার জন্য অবশ্যই এতে শিক্ষা রয়েছে।’ (সুরা আন নাজিয়াত- ২৪-২৬)।
বদরের প্রান্তে মক্কা নগরীর অত্যাচারী দাম্ভিকদের করুণ পরিণতি হয়েছিল। প্লেগ রোগের মাধ্যমে আবু লাহাবকে তিলে তিলে ধ্বংস করা হয়েছিল। অত্যাচার নির্যাতন করে পৃথিবীর কোনো দাম্ভিক পার পায়নি। আল্লাহতায়ালা জুলুম অত্যাচার সহ্য করেন না। মহান আল্লাহতায়ালা ফরমান, ‘অত্যাচারীরা যা করেছে সে বিষয়ে আল্লাহ উদাসীন ভাবিও না, আসলে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদের অবকাশ দেন, যেদিন সব চক্ষুস্থির (চূর্ণবিচূর্ণ) হয়ে যাবে।’ (সুরা ইবরাহিম-৪২)। ইসলাম ধর্মে সব ধরনের অত্যাচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। অত্যাচারে সহযোগিতা, অত্যাচারীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখা নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ অত্যাচার নির্যাতনে আনন্দ উল্লাস করা। ইসলামে পশু পাখি, গাছ-বৃক্ষ এবং যে কোনো প্রাণের ওপর অত্যাচার করা নিষিদ্ধ-হারাম। হাদিসে কুদসিতে মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘হে আমার বান্দা! আমি নিজের ওপর জুলুম-অত্যাচার হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্য তা হারাম করেছি। অতএব, তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম-অত্যাচার কর না।’ (সহিহ মুসলিম, হা. ৬৭৩৭)।
জুলুম অত্যাচার একটি সামাজিক ব্যাধি। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র এটি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। শারীরিক, মানসিক, আর্থিক বা যে কোনো পন্থায় অবিচার ও নির্যাতন করাকে জুলুম-অত্যাচার বলা হয়। মানুষের অধিকার হরণ করা ও ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা বড় ধরনের জুলুম। জুলুম অত্যাচারের ফলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়। ছিন্ন হয় সম্প্রীতির বন্ধন। নেমে আসে অভিশাপ ও অধঃপতন। অতএব প্রতিটি মানুষকে যাবতীয় অন্যায়-অনাচার ও অত্যাচার নির্যাতন নিজে পরিহার করা এবং অপরকে তা থেকে প্রতিহত করা সময়ের বড় দাবি।
‘মহানবী (সা.) বলেন, অত্যাচারী হোক বা অত্যাচারিত হোক, তোমার মুসলিম ভাইকে সাহায্য কর। জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসুল! আমি তো অত্যাচারীকে সাহায্য করব, অত্যাচারীকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি? তিনি বললেন, তাকে অত্যাচার থেকে নিবৃত্ত কর, এটাই অত্যাচারীর প্রতি তোমার সাহায্য।’ (সহিহ বুখারি, মুসলিম হা. ২৪৪৩)।
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা