চাঁদাবাজি ছিল না এমন কোনো জায়গা নেই। ফুটপাতের দোকানি, কাঁচাবাজার থেকে শিল্প-কারখানা, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে শুরু করে সব যানবাহন এবং মহাসড়কে পণ্য পরিবহনের ট্রাক-লরি কেউ কি চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য থেকে মুক্ত ছিল? বাস্তব অবস্থা এমনই ছিল। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এখন রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ চলছে। ঢেলে সাজিয়ে পুনর্নির্মাণ চলছে দিকে দিকে। আন্তর্বর্তী সরকার সব অনাচারের বিরুদ্ধেই দৃঢ় অবস্থান ঘোষণা করেছে। শিক্ষার্থীরা এখনো পথে। জনতার সক্রিয় সহযোগিতা রয়েছে তাদের সঙ্গে। ডানে-বায়ে, সামনে-পেছনে রয়েছে সেনা সমর্থন। মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহনে চাঁদাবাজি বন্ধ হোক- এটা সবার প্রত্যাশা। পরিবহনে চাঁদাবাজি পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়, যার করাত গলা কাটে সর্বস্তরের জনগণের। দ্রব্যমূল্যের অন্যায় ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণের শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। শিল্প-কারখানায় হামলা-চাঁদাবাজি অর্থনীতির ওপর কুঠারাঘাত। দ্রব্যমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে ধরে রাখার বিকল্প নেই। শিল্প-কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে উদ্বেগমুক্ত নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন-পরিবেশ রক্ষার স্থায়ী কর্মাপন্থা প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে হবে। রপ্তানি ক্ষেত্রে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। গত মাসজুড়ে আন্দোলন-সংগ্রামে যে ক্ষেত্রে যেটুকু ক্ষতি হয়েছে- দ্রুত তা পূরণ ও পুষিয়ে নিতে সচেষ্ট হতে হবে। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা তিক্ত। যুগে যুগে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার অর্জন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হাতছাড়া হয়েছে। সততা-ন্যায্যতা-সুশাসনের অভাবে বহু গর্বের ধনও মানুষের কাছে ক্লিষে হয়ে গেছে। বাঙালি অনেক জীবনের দামে যা কেনে, অসচেতনতায় তা হারিয়েও ফেলে। সুবিধাভোগী মহল বারবার ভোল পাল্টে অপরাধ-অনাচার, দখল-দুর্বৃত্তায়ন, চাঁদাবাজির পেশাতেই থেকে যায়। রাজনীতির পান্ডা, জনপ্রতিনিধি, এমনকী পুলিশের মদতপুষ্ট দুরাচারী চক্র তাদের আশ্রয়-প্রশয় দিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়। এখন যাদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে প্রায় সব পেশার ক্ষেত্রেই। এদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। এই অপধারা চিরতরে বন্ধ করার পথটা খুঁজতে এবং খুলতে হবে। তবেই সার্থক হবে শত শহীদের আত্মবলিদান।