সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

টিভি নাটকে মুক্তিযুদ্ধ

টিভি নাটকে মুক্তিযুদ্ধ

টিভি নাটকে মুক্তিযুদ্ধের ছায়া বেশ গভীর। আগে নাটকের গল্প এবং নির্মাণে বেশ জীবন্ত হয়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধ প্রেক্ষাপট। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ বেশ দূরবর্তী কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনার মতো উঠে আসে। কিন্তু কেন? এ নিয়ে বিশিষ্টজনদের মন্তব্য তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ ও আলী আফতাব

 

আমজাদ হোসেন

যুদ্ধের পর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চমৎকার অনেক গল্প-উপন্যাস রচিত হয়। যা দিয়ে তখন সমৃদ্ধ নাটক নির্মাণ সম্ভব হতো। এখন সে ধরনের মানসম্মত লেখা আর কেউ লেখে না। তাই মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবচিত্র ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয় না। তা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের মতো বিশাল একটি ঘটনার সার্বিক চিত্র পর্দায় তুলে ধরতে যে আয়োজন দরকার তাতে বড় মাপের অর্থের প্রয়োজন। সেই বাজেট টিভি চ্যানেলগুলো দেয় না। লোকেশনের কথা বলতে গেলে আগের সেই বাড়িঘর আর পরিবেশ এখন আর নেই। তারপরও শুধু রাস্তা বা গাছতলায় দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের নাটক নির্মাণ সম্ভব। কিন্তু ভালো গল্পের অভাবে তাও করা যাচ্ছে না।

 

আলী যাকের

 যে কোনো বড় ঘটনার তাত্ক্ষণিক রিয়েকশন প্রকাশ করতে গেলে তাতে আবেগের প্রাধান্য থাকে বেশি। তাই এগুলোর স্থায়িত্ব সুদূরপ্রসারী হয় না। আর অনেক দিন পরের রিয়েকশন হয় গবেষণালব্ধ। কারণ ঘটনা তখন হয়ে যায় দূর থেকে দেখা। এতে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। ফলে এগুলো দীর্ঘ সময় ধরে পৃথিবীতে বেঁচে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের বিষয় নিয়ে নির্মিত তখন আর এখনকার নাটকের পার্থক্য এখানেই। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় চেতনা। তাই এ বিষয়টি নিয়ে বেশি পরিমাণে মানসম্মত নাটক নির্মাণ দরকার।

 

মামুনুর রশীদ

আমাদের সময়কার মুক্তিযুদ্ধের নাটক আর এখনকার মুক্তিযুদ্ধের নাটকের মধ্যে পর্থক্য থাকাই স্বাভাবিক। আমরা মুক্তিযুদ্ধের নাটক করেছি মুক্তিযুদ্ধ দেখে। আর এখনকার পরিচালকরা শুনে শুনে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক করে।

আমি মনে করি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এক একটা দিন এক একটি গল্প হতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন সরাসরি যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন বা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করেছেন তাদের রচনা নিয়ে নাটক তৈরি করা। আর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক নির্মাণের জন্য বড় বাজেট দরকার। তাহলে যুদ্ধের উপাত্ত যথাযথভাবে তুলে ধরা সম্ভব হবে।

 

ফেরদৌসি মজুমদার

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এখন নাটক নির্মাণের পরিমাণ কমে গেছে। যা কাম্য নয়। এই যুদ্ধ হচ্ছে জাতীয় অস্তিত্ব্বের পরিচয়। মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে নির্মিত নাটকের আবেদন কখনো কমে না। কারণ এটি হচ্ছে সত্যিকার ঘটনার বাস্তবচিত্র। বিষয়টি নিয়ে ২০ বছর আগে মঞ্চায়িত ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ নাটকের কথাই যদি বলি তাহলে দেখা যায় নাটকটির আবেদন এখনো একই। এটি এখনো দর্শকের হৃদয়ে জীবন্ত হয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। পরবর্তী প্রজন্মের জানার জন্য মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ঘটনা তাদের সামনে তুলে ধরতে বেশি পরিমাণে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক নির্মাণ হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

 

আবুল হায়াত

 আগে টিভিতে মুক্তিযুদ্ধের যে নাটক নির্মাণ হতো তাতে যুদ্ধের হুবহু চিত্র দেখতে পেতাম। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দিকটিই বেশি প্রাধান্য পায়। যেমন যুদ্ধাপরাধীসহ নানা বিষয়। দুটিই অর্থবোধক ও যথার্থ বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়বস্তু নিয়ে নাটক সব সময়ই নির্মাণ হবে। এটি হচ্ছে বাঙালি জাতির গৌরব আর অহঙ্কারের বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট যেহেতু বিশাল তাই বিষয়টি নিয়ে নাটক নির্মাণে বাজেটও লাগবে বড় অঙ্কের। যা এখন পাওয়া যায় না। ফলে সার্বিক চিত্র ফুটিয়ে তোলা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতে দর্শক দায়সারাগোছের নাটক দেখতে গিয়ে বিরক্ত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দর্শককে এ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ও পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরার সুযোগ দিতে হবে। কারণ নাটকের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা ও চেতনাকে চিরঞ্জীব করে রাখতে হবে।

 

ড. ইনামুল হক

এ সময়ের নির্মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটকগুলো দেখার চেষ্টা করি। অনেকে ভালো করছে। তবে অনেক নাটকের গল্পের মধ্যে কিছু ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। আমরা যুদ্ধপরবর্তী সময়ে নাটক নির্মাণ করেছি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নানা প্রেক্ষাপট নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধকে কাছ থেকে দেখে নাটকের গল্প লিখেছি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এক একটি নাটক একেকটি যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। নতুনদের বলব মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক নির্মাণ করতে হলে প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। তবেই ভালো নাটক নির্মাণ করতে পারব। ভালো নাটকের জন্য গল্প অবশ্যই একটি প্রধান বিষয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর