শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

আবৃত্তি প্রসারে সাংগঠনিক চর্চা

আবৃত্তি প্রসারে সাংগঠনিক চর্চা

তিন দশকের অধিক বাংলাদেশে সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চা চলছে। সংখ্যার বিচারে অন্যান্য শিল্পমাধ্যমের চেয়ে আবৃত্তি অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি গড়তে এর সাংগঠনিক শক্তির যথাযথ ব্যবহার আমরা করতে পারছি না। অভিযোগ রয়েছে, সংগঠনগুলো মানসম্মত প্রযোজনা মঞ্চায়নের মাধ্যমে আবৃত্তির দর্শক তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারছে না। এই সংকট উত্তরণে আবৃত্তি শিল্পীদের সাংগঠনিক চর্চা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ; এ বিষয় নিয়ে আবৃত্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু বিশিষ্ট আবৃত্তিকারের বক্তব্য তুলে ধরেছেন— পান্থ আফজাল

 

রফিকুল ইসলাম

(সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ)

আবৃত্তি চর্চার প্রসারে সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন মূলত বিভিন্ন আবৃত্তি সংগঠনগুলো দায়িত্ব নিয়ে থাকে। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আবৃত্তিকে একটি শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ। ব্যক্তিগত চর্চায় অনীহা থাকে কিন্তু সাংগঠনিক চর্চায় থাকে না। হ্যাঁ, আবার দলের মধ্যে ইগো সমস্যা, নেতৃত্ব নিয়ে দলাদলি, সিনিয়র-জুনিয়র বিতর্ক, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব বা বিভিন্ন কারণে দল ভেঙে নতুন দল হয়।   

 

আহকাম উল্লাহ

(সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ)

একটা শিল্প বিকাশের জন্য সাংগঠনিক চর্চা খুবই গুরুত্ব বহন করে। সবাই একসঙ্গে কাজ করলে এর ইম্প্যাক্ট কতটুকু আর একক বা ব্যক্তিগতভাবে করলে এর ইম্প্যাক্ট কতটুকু—এটা সহজেই অনুমান করা যায়। এখন কিন্তু বাংলাদেশে সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চা বেড়েছে। দেশব্যাপী বছরজুড়ে নানা উৎসব হচ্ছে। বহু ছেলেমেয়ে সেখানে অংশগ্রহণ করছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। আসলে যে কোনো শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে সুসংগঠিত থাকাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সুসংগঠিত থাকলে শিল্প এগিয়ে যায়।

 

মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল

(যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ)

বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের প্রায় ৪০০টি সংগঠন আছে (সহযোগী সংগঠণসহ)। আর আবৃত্তি চর্চার জোয়ার শুরু হয়েছে কিন্তু সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চার মাধ্যমেই। সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চার আগে এটা কিন্তু পৃথক শিল্প ছিল না। ১৯৮০ সালে সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চার শুরু হয়। আবৃত্তি অনুষ্ঠানে এখন কিন্তু নাটকের দর্শকের চেয়ে কম দর্শক হয় না! গোলাম মোস্তাফা, সৈয়দ হাসান ইমাম, আশরাফুল আলম, আসাদুজ্জামান নূর, নরেন বিশ্বাস, রফিকুল ইসলাম, গোলাম সারোয়ারসহ অনেকে মিলে এটাকে শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে সাংগঠনিক চর্চার গুরুত্ব এক্ষেত্রে অগ্রগণ্য।

 

শিমুল মুস্তাফা, আবৃত্তিশিল্পী

আবৃত্তি প্রসারে সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেখেছে। সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চার মাধ্যমেই আবৃত্তি চর্চার প্রক্রিয়াগুলো সবাই শিখতে পারে। আর ভাঙন? বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এটা একটা সাধারণ বিষয়। যে কোনো কারণেই সংগঠন ভাঙতে পারে। সাংগঠনিক দোষ, আবৃত্তিকারের দোষ, ইগো সমস্যা, যোগ্য নেতৃত্ব, ব্যক্তি স্বার্থ-নানা কারণে হতে পারে। দুজন লোক থেকে দুজন হলেই এই সমস্যা হয়। ভাঙন আসলে একটা চারিত্রিক দোষ।

 

মাহিদুল ইসলাম, আবৃত্তিশিল্পী

প্রাথমিক পর্যায়ে আবৃত্তি শেখা বা প্রশিক্ষণের জন্য সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু একটা স্তর অতিক্রম করার পর ব্যক্তিগত চর্চা খুবই জরুরি। কারণ, তখন নিজেকে এবং এই শিল্পকে জনপ্রিয় করতে ব্যক্তিগত চর্চার দরকার হয়। শুরুটা সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চায় হোক, এরপর নিজের বিকাশের জন্য ব্যক্তিগত চর্চা। আর দেশ ভাঙে সংগঠন ভাঙবে না! এই ভাঙাটাকে বিভাজন বলাটাই ভালো। তবে ভাঙনটা ইতিবাচক হলে ঠিক আছে। আবৃত্তির জন্য সাংগঠনিক চর্চার পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন।

 

সৈয়দ শহীদুল ইসলাম (কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র)

এটা আসলে ডিপেন্ড করে দলগুলোর ওপর। তবে, শুদ্ধভাবে উচ্চারণ শিখতে বা কথা বলতে সাংগঠনিক চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে অনেকেই ব্যবসায়িক চিন্তা করে। এখন যেভাবে সমন্বয় পরিষদ চলছে সেটা সবার কাছেই ফুলফিল না, আরও ভালো কিছু উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারত। ভালো উদ্যোগ নিলে সাংগঠনিক চর্চাও ভালো হয়। ভাঙন আমার কাছে খারাপের দিক।

সর্বশেষ খবর