বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভারতের নির্বাচনী বিতর্কে ফেরদৌস

♦ বিজেপি চেয়েছে গ্রেফতার ♦ ভিসা বাতিল ♦ কালো তালিকাভুক্ত

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ভারতের নির্বাচনী বিতর্কে ফেরদৌস

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভোটের প্রচারণায় অংশ নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ। বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের জেরে ফেরদৌসকে অবিলম্বে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশন। গতকাল দুপুরে কলকাতায় নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক দফতরে গিয়ে ফেরদৌসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে বিজেপি। ভিসা আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগে ফেরদৌসকে গ্রেফতারের দাবি জানায় তারা। ভারতের নির্বাচনে বিদেশি নাগরিককে কেন ব্যবহার করা হলোÑ তা জানতে চেয়ে কলকাতায় ফরেনারস রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসের (এফআরআরও) কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে একজন বিদেশি নাগরিক হয়ে অন্য দেশের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার কারণে ভিসা আইনে ফিরদৌসের বিজনেস ভিসা বাতিল করেছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করে তাকে দ্রুত ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ফেরদৌসকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে দেশে ফিরেছেন ফিরদৌস।
গতকালই মন্ত্রণালয়ের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশি নাগরিক ফেরদৌস আহমেদ ভিসা নীতি লঙ্ঘন করেছেন- ব্যুরো অব ইমিগ্রেশনের তরফে এই রিপোর্ট পাওয়ার পরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার বিজনেস ভিসা বাতিল করেছে। তার বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করে তাকে দ্রুত দেশে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। ফেরদৌসকে ব্ল্যাক লিস্ট (কালো তালিকাভুক্ত) করা হয়েছে।’
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার পর বিজেপির তরফে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করার পরই গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এফআরআরওর কাছে জানতে চেয়েছে, বাংলাদেশি অভিনেতা ফেরদৌস রাজনৈতিক প্রচারণায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েছিলেন কি না বা তিনি ভিসা আইন লঙ্ঘন করেছেন কি না।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনকে আর্জি জানিয়েছে বিজেপি। ১৪ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালের সমর্থনে একটি প্রচারণায় অংশ নেন ফেরদৌস। হুডখোলা গাড়িতে করে অভিনেতাকে সঙ্গে নিয়ে রোড শো করেন কানাইয়ালাল। ফেরদৌসের সঙ্গে একই গাড়িতে ছিলেন টালিগঞ্জের অভিনেতা অঙ্কুশ ও অভিনেত্রী পায়েল সরকার। করণদিঘি থেকে সেই রোড শো যায় ইসলামপুর পর্যন্ত। ফেরদৌসকে এও বলতে শোনা যায়, ‘তৃণমূল কংগ্রেস ও দিদিকে (মমতা) ভোট দেওয়া উচিত।’ ফেরদৌসের এই প্রচারণার খবর দুই বাংলাতেই গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়। কিন্তু বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে বিদেশি অতিথিকে নিয়ে ভোটের প্রচারণা করার ঘটনায় বিরোধী দলগুলো প্রশ্ন তুলতে শুরু করে।
রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রশ্ন তোলেন, ‘ভারতের একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কীভাবে বিদেশি নাগরিককে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে রোড শো করাচ্ছে! আগে কখনো এমনটা দেখিনি।’ দলের নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘আমরা জানি যে একজন বিদেশি নাগরিক ভারতের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন না। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস বাংলাদেশি নাগরিককে তাদের প্রচারণায় ব্যবহার করে তারা নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করছে। এই দলটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আর ভিসা আইনের আওতায় ফেরদৌসকে অবিলম্বে আটক করা উচিত।’ এদিকে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পরই কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশন থেকে ফেরদৌসকে ফোন করে জানতে চাওয়া হয়, কেন তিনি এখানে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন।
যদিও ফেরদৌসের তরফে জানানো হয়, যেহেতু তিনি এই বাংলায় একাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন, বাংলার প্রযোজক, পরিচালক বা অভিনেতা বন্ধুদের সঙ্গে তার একটা সুমধুর সম্পর্কও রয়েছে, সেই সূত্র থেকেই তিনি ওই প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু ফেরদৌসের ওই যুক্তিকে খুব একটা ভালোভাবে নেয়নি বাংলাদেশ উপহাইকমিশন।

সর্বশেষ খবর