রবিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ফের হুমকির মুখে সিনেমা হল

আলাউদ্দীন মাজিদ

ফের হুমকির মুখে সিনেমা হল

আবারও হুমকির মুখে পড়ল সিনেমা হল। গত বছর দেশে করোনা মহামারী দেখা দিলে লকডাউনের কবলে পড়ে প্রায় ৯ মাস সিনেমা হল বন্ধ থাকায় এর মালিকদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকারও বেশি। বেকার হয়েছেন সিনেমা হলে চাকরিরত শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী। অর্থের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এখনো তারা। সিনেমা হল মালিকরাও নানাভাবে অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছেন। এক সময় করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটায় সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারের নির্দেশে সিনেমা হল খুললেও মানসম্মত ও পর্যাপ্ত ছবির অভাবে সিনেমা হলের ব্যবসা ভঙ্গুরই থেকে যায়। এ পরিস্থিতি থেকে উন্নতির জন্য সরকার একদিকে আর্থিক প্রণোদনা অন্যদিকে সিনেমা হল উন্নয়নে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার তহবিল প্রদানের উদ্যোগ নেয়। একই সঙ্গে দেশীয় ছবির অভাব পূরণে বিদেশি ছবি আমদানির বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন ছিল। যখন সিনেমা হল বাঁচাতে সবকিছুই ইতিবাচক পথে এগোচ্ছিল তখনই বৈশ্বিক মহামারী করোনা আবার মরণ কামড় বসাল গত মার্চ মাস থেকে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার বাধ্য হয়ে গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সিনেমা হলসহ অনেক সেক্টরের কর্মকান্ড সীমিত করে ১৮ দফা প্রজ্ঞাপন জারি করে। এ অবস্থাতেও ছবি মুক্তি অব্যাহত ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটলে গত বুধবার পাঁচ জেলায় জরুরি ভিত্তিতে সিনেমা হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। জেলাগুলো হলো চট্টগ্রাম, নরসিংদী, ফরিদপুর, শেরপুর ও চাঁদপুর। করোনা ঠেকাতে স্থানীয় জেলা প্রশাসকরা সরকারের দেওয়া ১৮ দফা নির্দেশনার পাশাপাশি সিনেমা হলসহ সব বিনোদন কেন্দ্র দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। দীর্ঘদিন পর জেলাগুলোর হল মালিকরা নতুন ছবি মুক্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বিশেষ করে অনেক দিন ধরে বন্ধ থাকা ২০টি হল নতুন করে খোলার কথা ছিল ২ এপ্রিল থেকে। তখনই করোনার কারণে এই বন্ধের ঘোষণায় অসহায় হয়ে পড়েন সিনেমা হল মালিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতারা। এই হতাশা আরও বেড়ে যায় এবং আবারও চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েন সিনেমা হল মালিকরা যখন দেশে করোনা বৃদ্ধির কারণে সরকার বাধ্য হয়ে গতকাল এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করে। আগামীকাল থেকে এই লকডাউন কার্যকর হচ্ছে। এ অবস্থায় চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, করোনার কারণে সরকার বাধ্য হয়ে লকডাউন ঘোষণা করেছে। মানে করোনা আমাদের সিনেমা ব্যবসাকে আবারও অস্তিত্ব সংকটের মুখে ঠেলে দিল। এখন আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে বারবার এভাবে সিনেমা হল বন্ধ হলে যে কটি সিনেমা হল খোলা আছে সেগুলোর মালিকরা হয়তো বাধ্য হয়ে আর এই ব্যবসা চালাতে চাইবেন না। ফলে দেশে সিনেমা ব্যবসা একেবারেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একান্ত আবেদন, প্রথমত সিনেমা হলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বাঁচাতে আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করা এবং সিনেমা হল উন্নয়নের জন্য ঘোষিত ১ হাজার কোটি টাকার তহবিল দ্রুত প্রদান করা হোক। একই মত পোষণ করে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘শত ঝড়ঝঞ্ঝা পেরিয়ে  দেশের সিনেমা হলগুলোকে আবার মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর প্রচেষ্টা ফের বাধার মুখে পড়ল।

গত বছর করোনার কারণে সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেলে প্রায় ৯ মাসে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকার লোকসান গুনেছেন হল মালিকরা। এ অবস্থায় একদিকে সরকারের কাছে আবেদন, আর্থিক প্রণোদনা ও সিনেমা হল উন্নয়নের জন্য ঘোষিত তহবিলের অর্থ দ্রুত প্রদান করা হোক। অন্যদিকে সিনেমা হল মালিকদের কাছে অনুরোধ, আপনারা ধৈর্য ধারণ করুন। সিনেমা হল একেবারে বন্ধ করে দেবেন না। সরকার এবং সবার সহযোগিতায় সব সংকট কাটিয়ে আবার সিনেমা হল মালিকরা ঘুরে দাঁড়াবেন বলে আমার বিশ্বাস।’

সর্বশেষ খবর