রবিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
নীল দরিয়া ঠিকই আছে

চলে গেলেন সারেং বৌ

চলে গেলেন সারেং বৌ

জন্ম : ১৯ জুলাই, ১৯৫০-মৃত্যু : ১৭ এপ্রিল, ২০২১

সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চিরতরে না ফেরার দেশে চলে গেলেন চলচ্চিত্রের সারেং বৌ খ্যাত কিংবদন্তি অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী। ১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ ছবির মাধ্যমে কবরীর অভিনয় জীবন শুরু। দক্ষ অভিনয়শৈলী দিয়ে চলচ্চিত্রের ‘মিষ্টি মেয়ে’ হয়ে ওঠা কবরীর জীবনের  নানা দিক তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

জীবদ্দশায় শেষ সাক্ষাৎকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে-

গত ২৬ মার্চ কিংবদন্তি অভিনেত্রী কবরী কথা বলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে। ২৭ মার্চ সেটি এই পত্রিকার শোবিজ বিভাগে প্রকাশ হয়। এটিই ছিল মিডিয়াকে দেওয়া তাঁর শেষ সাক্ষাৎকার। তাঁর জবানিতে ওঠে এসেছিল নানা প্রসঙ্গ। সেই সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

করোনাকালে জীবন কেমন কাটছে। জানতে চাইলে দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, ‘আসলে বলার কিছু নেই, এই মহামারী নিয়ে হতাশ হলেই সব শেষ। কাজে যেতে ভয় হয়। বেশির ভাগ সময় অনেককেই ঘরবন্দী হয়ে থাকতে হচ্ছে। বলা হচ্ছে মানুষ সচেতন হচ্ছে না বলেই করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। আমি বলব সচেতনতা তৈরির মতো সঠিকভাবে কাজ করছেন না দায়িত্বশীলরা। রেডিও-টিভিতে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে তা কি ঠিক হচ্ছে? বলতে গেলে ভয় মিশ্রিত প্রচারণা চালাতে গিয়ে মানসিকতা নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। টিভি-রেডিও খুললেই করোনা নিয়ে নেতিবাচক কথা শুনতে শুনতে একদিকে মানুষ আতঙ্কিত, অন্যদিকে বিরক্ত হচ্ছে। এর জন্য প্রয়োজন সরকার এবং জনপ্রতিনিধিদের এলাকাভিত্তিক কাউন্সেলিং। কারণ সবাই তো শিক্ষিত নয়। আবার করোনা প্রতিরোধে যা প্রয়োজন এবং শরীরের সক্ষমতা বাড়াতে যে খাদ্য দরকার দরিদ্র মানুষের পক্ষে তা কেনা সম্ভব নয়। সরকার এবং জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি বিত্তবানদেরও এদের সেবায় বিপুলভাবে এগিয়ে আসতে হবে। আমার পরিচালিত দ্বিতীয় ছবি ‘এই তুমি সেই তুমি’র কাজ করোনার কারণে বারবার বন্ধ রাখতে গিয়ে সময়মতো নির্মাণ শেষ করতে পারছি না। এখন বাসায় বসে দেশ-জাতি আর ব্যক্তিগত নানা বিষয় নিয়ে ভাবছি, কী করব বুঝতে পারছি না। এমন দম বন্ধ অবস্থায় লেখালেখিতেও মন বসছে না। করোনা আমাদের শিখিয়ে দিয়েছে প্রকৃতির ওপর কারও হাত নেই। প্রকৃতির বিপরীতে হাঁটতে গেলে প্রকৃতি এর নিষ্ঠুর প্রতিশোধ নেবেই। তাই সবার নিয়মতান্ত্রিক ও শৃঙ্খলিত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়া উচিত।’

 

কবরীর অপূর্ণ ইচ্ছা

কবরীর ইচ্ছা ছিল একবারের জন্য হলেও চুয়াডাঙ্গায় যাবেন। সেখানে তাঁর নামে ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘কবরী রোড’ দেখে আসবেন। সেই ইচ্ছা আর পূরণ হলো না তাঁর। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে বললে আমি যাব। নিজ খরচেই যাব। বেঁচে থাকতে রাস্তাটি দেখে যেতে চাই।’ তবে আর তাঁর যাওয়া হয়নি। নিজের চোখে দেখা হয়নি তাঁর জন্য এত বছর ধরে ভক্তদের ভালোবাসার অপূর্ব নিদর্শন। চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার নাম ‘কবরী রোড’। ৪০০ মিটার দীর্ঘ রাস্তাটি পৌরভবন ও সরকারি কলেজকে সংযুক্ত করেছে। কবরীর নামে ১৯৬৯ সালে সড়কটির নামকরণ হয়। ভক্তদের ভালোবাসায় ৫২ বছর ধরে রাস্তাটি টিকে আছে। এই রাস্তায় রয়েছে সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি অফিস, অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। খ্যাতিমান চিত্রগ্রাহক বেবী ইসলামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়। ১৯৬৯ সালে চুয়াডাঙ্গায় শুটিং হয়েছিল নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘ক খ গ ঘ ঙ’ সিনেমার, যার প্রধান চিত্রগ্রাহক ছিলেন বেবী ইসলাম এবং সহকারী চিত্রগ্রাহক মোরশেদ আহমেদ ওরফে তোকা মিয়া। সিনেমাটির শুটিং হয়েছিল মোরশেদ আহমেদের চুয়াডাঙ্গা শহরের বাড়িতে। এই বাড়ির অবস্থান কবরী রোডে। বাড়ির একটি অংশে ব্যবসায়ী আখের আলী স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ থাকেন। অপর অংশ ‘কবরী মেস’ নামে পরিচিত।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের আজীবন সম্মাননায় কবরী

দশম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে ২০১৯ সালে পাঁচ গুণী ব্যক্তিকে সম্মাননা প্রদান করে বাংলাদেশ প্রতিদিন। গুণী ব্যক্তিদের মধ্যে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে সম্মাননা গ্রহণ করেন অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী।

এই সম্মাননা গ্রহণের দিন কবরী দীর্ঘ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।  বাংলাদেশ প্রতিদিন পরিবারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক সবসময় গভীর ছিল।

যেভাবে মীনা পাল থেকে কবরী

১৯৬৪ সাল। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সুভাষ দত্ত নির্মাণ করবেন ‘সুতরাং’ নামের একটি ছবি। এ ছবির ‘জরিনা’ চরিত্রের জন্য একটি মেয়ে খুঁজছিলেন তিনি। ছবির সংগীত পরিচালক সত্য সাহা কবরীর সন্ধান দিলেন সুভাষ দত্তকে। সত্য সাহা সে সময় সুভাষ দত্তকে বলেছিলেন, চট্টগ্রামে একটি মেয়ে আছে, নাম মীনা পাল। তাঁর উচ্চতাও বেশি নয়। মঞ্চে কাজ করে। সুভাষ দত্ত সত্য সাহাকে নিয়ে বিমানে চট্টগ্রামে গেলেন। চট্টগ্রামের ডা. কামালের সঙ্গে কবরীর বাবার পরিচয় ছিল। ডা. কামালকে নিয়েই কবরীদের বাড়িতে গেলেন সুভাষ দত্ত। সেদিন বাড়ি ছিলেন না কবরী। ওই সময় তিনি ছিলেন ময়মনসিংহে। সুভাষ দত্ত ও সত্য সাহা মন খারাপ করে ফিরে এলেন ঢাকায়। চট্টগ্রামে আসার পর সত্য সাহাকে খবর দেন কবরীর বাবা। এবারে আর সুভাষ চট্টগ্রামে গেলেন না। কবরীর কিছু ছবি তুলে নিয়ে আসার জন্য ড. কামালকে তাঁদের বাড়িতে পাঠালেন। কথা মতো কাজ হলো। ঢাকা থেকে সুভাষ দত্ত খবর পাঠালেন যে কবরীর তোলা ছবিগুলো দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। তাঁর হাসি নাকি সুভাষের কাছে অসম্ভব সুন্দর মনে হয়েছে। কবরীকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য বলা হলো। কিন্তু কবরীর মা রাজি নন। তখন কবরীর বয়স ১৩ বা ১৪। কবরী জীবদ্দশায় বলেছিলেন- ‘মা কান্নাকাটি করে বাবাকে বললেন, আমার দুধের শিশুকে আমি দেব না। আমারও মা-ভাইবোনদের ছেড়ে ঢাকায় আসতে ভালো লাগছিল না। মায়ের কান্না দেখে আমিও কান্না শুরু করলাম। বাবা বুঝিয়ে বললেন, ওরা ডেকেছে। আগে মীনা যাক। যদি ভালো না লাগে, তাহলে চলে আসবে। এই বলে বাবা আমাকে নিয়ে বাড়ি থেকে রওনা হলেন।’ ট্রেনে করে চট্টগ্রাম থেকে রওনা হলেন কবরী। ঢাকায় এসে উঠলেন পুরান ঢাকার বিউটি বোর্ডিংয়ে। সেদিন সুভাষ দত্ত দাদার সামনে এসে দাঁড়ালেন কমলা রঙের একটা ফ্রক পরে। দাদা বললেন, ‘যাও তো শাড়ি পরে আসো।’ বলতেই চটপট করে শাড়ি পরে দাদার সামনে গেলেন তিনি। তারপর জানানো হলো ভয়েস টেস্ট করা হবে। স্টুডিওতে গেলেন। কথা শুনে দাদা বললেন, সবই ঠিক আছে, কিন্তু কথার মধ্যে তো চাটগাঁয়ের আঞ্চলিক টান আছে। কবরী বলেছিলেন, ‘দাদা আমাকে যেভাবে সংলাপ বলতে বললেন, আমি তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে সেভাবেই সংলাপ আওড়াতে থাকলাম। অবশেষে দাদা জানালেন, জরিনা চরিত্রের জন্য আমাকে তাঁর পছন্দ হয়েছে। তারপর শুরু হলো আমার নাম নিয়ে গবেষণা। দাদা সৈয়দ শামসুল হককে আমার একটা নাম ঠিক করে দেওয়ার জন্য বললেন। যে নামেরই প্রস্তাব আসে, দেখা যায় এই নামে কেউ না কেউ আছে। আবার কোনো কোনো নাম দাদার পছন্দ হয় না। একবার ঠিক হলো যে ‘করবী’ দেওয়া হবে। কেউ আবার বলল না, ‘কবরী’। দুটো নাম নিয়ে বেশ ভাবনাচিন্তা চলল। শেষতক ‘কবরী’ নামটাই টিকে গেল। আর ‘মীনা পাল’ থেকে আমি হয়ে গেলাম ‘কবরী’।’ কবরী নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে ফিরে যান চলচ্চিত্র জীবনের শুরুতে। তিনি বলতে শুরু করেন, যখন চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করি, তখন আমার বয়স মাত্র ১৩ বছর। ক্লাস সিক্সে পড়ি। সুভাষ দত্ত একটা কিশোরীর ভূমিকার জন্য খুঁজে আমাকে পেয়ে যান। সাংস্কৃতিক পরিবারে মানুষ হয়েছি। মা পুঁথি পড়তেন, ভাইবোনেরা নাচতেন-গাইতেন, ছোট ভাই তবলা বাজাতেন। আমি নাচ করতাম। তবে আগে অভিনয় করিনি। যখন অফার পেলাম, তখন বাবা খুবই উৎসাহিত হলেন। মা দিতে চাননি। তিনি বললেন, ওর পড়াশোনা নষ্ট হয়ে যাবে। পরিবার একটু রক্ষণশীল তো ছিলই। আমার মায়ের ছোটবেলায় বিয়ে হয়ে যায়। তিনি অনেক দূর পড়াশোনা করতে পারেননি। তাই তাঁর খুব শখ ছিল মেয়েকে পড়াবেন। আমি সুভাষ দত্ত, ফজলে লোহানী, খান আতা, জহির রায়হান থেকে অভিনয় শিখেছি।  এখন তো সে রকম শিক্ষকও নেই।

 

শোকাচ্ছন্ন চলচ্চিত্র পরিবার

মানুষ হিসেবে অতুলনীয়

সুচন্দা

সবাই চলে যাচ্ছে। চলচ্চিত্র জগৎটা অসীম শূন্যতায় ভরে যাচ্ছে। এই শূন্যতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। বড় কষ্ট হয় কবরীর জন্য। একজন নিবেদিতপ্রাণ অভিনেত্রী ছিলেন তিনি। মানুষ হিসেবেও তার তুলনা ছিল না। তার মতো একজন কর্মদক্ষ মানুষের আরও অনেক দিন বেঁচে থাকার প্রয়োজন ছিল। চলচ্চিত্রের বর্তমান দুর্দশায় তার অভিভাবকত্ব প্রয়োজন ছিল। চিত্রজগৎ এখন অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়েছে। সৃষ্টিকর্তা যেখানেই রাখেন তাকে যেন শান্তিতে রাখেন  এই দোয়াই করছি।

অসাধারণ এক অভিনেত্রী

ববিতা

কবরী আপা অভিনীত ‘সুতরাং’ ছবি দিয়েই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছিল। সেই ১৪ বছর বয়সে ছবিটিতে কী অসাধারণ অভিনয় ছিল, যা ভাবাও যায় না। কাজের প্রতি তার নিষ্ঠা অতুলনীয়। চলচ্চিত্রে তার ডেডিকেশন কখনো কেউ ভুলতে পারবে না। এ দেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তিনি বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল। কবরী আপার কাজ তাকে আজীবন বাঁচিয়ে রাখবে। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও পরিবারের প্রতি  সমবেদনা রইল।

শূন্যস্থান পূর্ণ হওয়ার নয়

শাবানা

কী বলব জানি না। কিছু বলার মতো ভাষা আমার নেই। এত বড় মাপের আর গুণী মানুষের শূন্যস্থান কখনো পূরণ হওয়ার  নয়। তার সঙ্গে অনেক ছবিতে কাজ করেছি আমি। তার ব্যবহার আর কাজ অনন্য। একটি পরিবারের মতো মিলেমিশে কাজ করতেন। জুনিয়রদের হাতে ধরে কাজ শেখাতেন। সৃষ্টিকর্তাকে বলব কবরী যেখানে থাকেন তাকে যেন শান্তিতে রাখেন। একে একে সবাই চলে যাচ্ছেন। রাজ্জাক ভাইও চলে গেলেন। ফারুক ভাই অসুস্থ। সবার জন্য দোয়া করা ছাড়া আর  করার কিছু নেই।

মানবিক গুণের মানুষ তিনি

আলমগীর

আমার জীবনের ছবির প্রথম নায়িকা তিনি। সেই ১৯৭২ সাল থেকে ৪৯ বছরের কর্মজীবনের মধুর সম্পর্ক আমাদের। বলতে পারেন একেবারে ভাইবোনের সম্পর্ক। উনি কেমন অভিনেত্রী ছিলেন তা বিচারের ধৃষ্টতা আমার নেই। মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মানবিক। এত বড় মাপের শিল্পী হওয়া সত্ত্বেও শুটিংয়ের সময় বিশেষ করে নতুনদের খোঁজ খবর নিতেন। একজন অসাধারণ ও উদার মনের মানুষ ছিলেন তিনি। তার সঙ্গে ২৫টির মতো ছবিতে কাজ করেছিলাম। তাকে ঘিরে অজস্র স্মৃতি জমে আছে। তার প্রতি রইল  বিনম্র শ্রদ্ধা।

অভিভাবক হারালাম

শাকিব খান

চলচ্চিত্রের পথপ্রদর্শকরা একে একে চলে যাচ্ছেন। সেই পথে পাড়ি দিলেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী কবরী আপা। চলচ্চিত্রের প্রাজ্ঞজনের একজন ছিলেন। তিনি  সোনালি অতীতের সমুজ্জ্বল সাক্ষী ছিলেন। নির্মাণেও সুনাম অর্জন করেছিলেন। ব্যক্তিজীবনে ছিলেন অত্যন্ত ব্যক্তিত্ববান মানুষ। কিংবদন্তি এই মানুষটির সঙ্গে আমার অসংখ্য স্মৃতি। আমাকে  স্নেহ করতেন। বিভিন্ন স্মৃতি শেয়ার করতেন। কবরী আপার মৃত্যুতে প্রিয় অভিনেত্রী পাশাপাশি একজন অভিভাবকও হারালাম। যেখানেই থাকুন,  ভালো থাকুন।

মেনে নেওয়া যায় না

শাবনূর

একজন উঁচু মাপের আর মানের অভিনেত্রীর মহাপ্রস্থান কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তারপরও জন্ম মানেই মৃত্যু অনিবার্য। সব মৃত্যুকে সহজে মেনে নেওয়া যায় না। কবরী আপার কোন গুণের কথা বলব আমি। তিনি ছিলেন অনাবিল গুণের সমাহার। তাঁর চলে যাওয়া মানে একটি নক্ষত্রের পতন। যে শূন্যতা দেশ ও চলচ্চিত্র জগতের জন্য অপূরণীয়। করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে ইহকালকে বিদায় জানালেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী কবরী। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। ওপারে ভালো  থাকবেন।

 

এক নজরে

জন্ম চট্টগ্রামে                

চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলায়  ১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব ও কৈশোরে বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম নগরীতে। তাঁর আসল নাম মীনা পাল। পিতা শ্রীকৃষ্ণ দাস পাল এবং মা শ্রীমতী লাবণ্য প্রভা পাল।

 বিয়ে                         

সত্তরের দশকে কবরী বিয়ে করেন চিত্ত চৌধুরীকে। এই বিয়ে বিচ্ছেদের পর ১৯৭৮ সালে তিনি বিয়ে করেন সফিউদ্দীন সরোয়ারকে। ২০০৮ সালে তাঁদেরও বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কবরী পাঁচ সন্তানের মা।

লেখিকা                     

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক, চলচ্চিত্র, ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন নিয়ে কবরী ২০১৭ সালে অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশ করেন তাঁর বই ‘স্মৃতিটুকু থাক’।

নির্মাতা              

২০২০ সালে কবরী দ্বিতীয় ছবি ‘এই তুমি সেই তুমি’র শুটিং শুরু করেন।  ২০০৫ সালে তিনি প্রথম ‘আয়না’ শিরোনামের একটি ছবি নির্মাণ করেছিলেন। নাটকও নির্মাণ করেন।

গীতিকার                 

সরকারি অনুদানে নির্মিতব্য ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবির মাধ্যমে গীতিকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ কবরীর। ‘তুমি সত্যি করে বলো তো’ শিরোনামের গানটিতে কণ্ঠ দেন সাবিনা ইয়াসমিন।

যত সম্মাননা                 

১৯৭৮ সালে ‘সারেং বউ’ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পান। এ ছাড়া বাচসাসসহ ২০১৯ সালে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকা তাঁকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করে।

 

উল্লেখযোগ্য ছবি

সুতরাং, জলছবি, বাহানা, আবির্ভাব,  যে আগুনে পুড়ি, দ্বীপ নেভে নাই, দর্পচূর্ণ, ক খ গ ঘ ঙ, বিনিময়, তিতাস একটি নদীর নাম, রংবাজ, মাসুদ রানা, সুজন সখী, সাধারণ মেয়ে, গুন্ডা, নীল আকাশের নিচে, ময়নামতি, আগন্তুক, আঁকাবাঁকা, কত যে মিনতি, অধিকার, স্মৃতিটুকু থাক, সারেং বৌ, বধূ বিদায়, আরাধনা, বেঈমান, অবাক পৃথিবী, কাঁচ কাটা হীরা, উপহার, মতিমহল, অরুণ বরুণ কিরণমালা, সাত ভাই চম্পা, হীরামন, দেবদাস, দুই জীবন, চোরাবালিসহ আরও অনেক ছবি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর