মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

কাভার গানে জনপ্রিয়তা পেতে চান শিল্পীরা

আলী আফতাব

কাভার গানে জনপ্রিয়তা পেতে চান শিল্পীরা

বর্তমানে গান প্রকাশের বড় একটি মাধ্যম ইউটিউব। প্রতি বছর অসংখ্য গান প্রকাশ এখানে। কিন্তু হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো গান আর এখন হচ্ছে না- এমন অভিযোগ কেবল শ্রোতাদেরই নয়, অভিযোগ তুলেছেন সংগীতাঙ্গনের শীর্ষস্থানীয় সংগীত শিল্পীরাও। গীতিকার, সুরকার এবং কণ্ঠশিল্পীর অভাব না থাকলেও অভাব রয়েছে মৌলিক গানের। নতুন শিল্পীরা যেন কাভার গান করেই জনপ্রিয়তা পেতে চায়। অন্যদিকে পুরনো শিল্পীদের মধ্যেও রয়েছে এর অভাব। আবার অনেক শিল্পীর অভিযোগ, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন শিল্পীদের ক্ষেত্রে কাভার গানকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। অন্যদিকে নামকাওয়াস্তে অসংখ্য কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার আর ঘরে ঘরে গড়ে ওঠা স্টুডিওগুলোতে তৈরি হচ্ছে মানহীন গান। মানহীন, প্রাণহীন এসব গান শ্রোতারা যেমন গ্রহণ করছেন না, তেমনি শিল্পীরাও নতুন গানে নির্ভরশীল হতে পারছেন না।  ঘুরেফিরে পুরনো গানগুলোই ফিরছে মুখে মুখে। যে কোনো প্রতিযোগিতা, কনসার্ট, লাইভ প্রোগ্রাম সব জায়গায়ই রয়েছে পুরনো গানের কদর।

আর এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। 

 

মনে হয় ঘুরেফিরে একই সুর, একই গানের কথা শুনছি

গাজী মাজহারুল আনোয়ার

বর্তমানে গানে স্থায়িত্ব কম। এখন গানের কথায় ও সুরে তেমন কোনো ভিন্নতা পাই না। মনে হয় ঘুরেফিরে একই কথা ও সুরে গান শুনছি। কিন্তু আগের গানে তা ছিল না। গানের কথা, সুর ও শিল্পীর কণ্ঠ সবমিলিয়ে দারুণ লাগত। নতুন অনেক শিল্পীকে এখন আমি চিনি না। তার একটা প্রধান কারণ হতে পারে তাদের কোনো নতুন গান নেই। কিন্তু এখন গান হচ্ছে অনেক; তবে, গানের গভীরতা নেই। আজ শুনলে কাল ভুলে যাওয়ার মতো।

 

গানের প্রতি ভালোবাসা সাধনাও কমে গেছে

আলম খান

এখন খুব কম গানই স্থায়িত্ব পাচ্ছে। ঘরে ঘরে স্টুডিও, জনে জনে শিল্পী।   অনেকে এক গানেই ভাইরাল হচ্ছে। গানের প্রতি ভালোবাসা-সাধনাও কমে গেছে। নতুন শিল্পীদের নতুন গান করার আগ্রহ নেই বললেই চলে। কিন্তু একটা সময় শিল্পীরা গানের  পেছনে সময় ব্যয় করত।

গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীরা প্রতিনিয়ত গান নিয়ে বসত। গানের কথা ও সুর নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণের পর শিল্পীর কণ্ঠে উঠত। সবার প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর গান তৈরি হতো। সে জন্যই তখনকার গানগুলো এত জনপ্রিয় হয়ে কালজয়ী হয়ে আছে।

 

প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে মৌলিক গানের  অভাব রয়েছে

রুনা লায়লা

আমাদের দেশে অনেক মেধাবী শিল্পী আছে। তবে তাদের যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না।  তারপরও কেউ কেউ নিজের মেধা বিকাশের জন্য নিজের মতো করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের সাধুবাদ জানাই। আবার এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই, এ প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে মৌলিক গানের খুব অভাব রয়েছে। নির্দিষ্ট কয়েকটি গানের বাইরে আমাদের করা গানগুলো বেশি গেয়ে থাকে। এটা খারাপ কিছু নয়। তবে শ্রোতাপ্রিয়তা পায় এমন নতুন ও কালজয়ী গান তো করতে হবে। তা না হলে, আমাদের গান এগোবে কী করে? আমি মনে করি, শিল্পীদের মৌলিক গানের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

 

এখন গান শোনার চেয়ে দেখাটাই যেন মুখ্য বিষয়

সৈয়দ আবদুল হাদী

গান এখন সম্পূর্ণ বিনোদন হয়ে গেছে। গানের চেয়ে দেখাটাই যেন মুখ্য বিষয়। এখন গান যেমন তেমন হোক শিল্পীরা জোর দিচ্ছে ভালো একটি মিউজিক ভিডিওর দিকে।

মাঝে মধ্যে এসব ভিডিওর সঙ্গে গানের কোনো মিল থাকে না। আমাদের সময় আমরা ভাবতাম গান কীভাবে শিল্পসম্মত করা যায়। এখন ভাবা হয় কীভাবে গান হিট করা যায়। ভালো কী মন্দ এর বিচার তো বর্তমানে করা যায় না। এখন স্থূলতার সঙ্গে শিল্পের সম্পর্ক নেই। আর মৌলিক গানের কথা তো বাদই দিলাম।

 

এখন গানের ভাষায় আগের মতো দরদ থাকে না

কুমার বিশ্বজিৎ

গানের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আফসোস হয়। মৌলিক গানের অভাব। এ সময়ের শিল্পীদের মধ্যে ভাইরাল-তারকা হওয়ার প্রবণতা কাজ করে। কিন্তু আমরা ভাইরাল হওয়ার পেছনে ছুটিনি। গানের পেছনে ছুটেছি। আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে গীতিকবিদের যত্ন হচ্ছে না। যার ফলে এখনকার গানের ভাষায় আগের মতো দরদ থাকে না। এখন যেন প্রতিটি ঘরে ঘরে স্টুডিও। যিনি গীতিকার, তিনিই সুরকার এবং তিনিই গায়ক। এই করে তো আর গান হয় না।

 

আমরা সব সময়ই নতুন শিল্পীদের প্রাধান্য দিয়েছি

ধ্রুব গুহ (কর্ণধার ধ্রুব মিউজিক)

পুরনো গানের জনপ্রিয়তা সব সময় থাকবে। তার মধ্যেও শিল্পীদের মৌলিক গান করতে হবে। আমি আমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে সব সময় নতুন শিল্পীদের গান প্রকাশের বিষয়টি প্রধান্য দিয়েছি। পাশাপাশি মৌলিক গান করার ব্যাপারেও তাদের উৎসাহ দিয়েছি। আপনারা হয়তো জানেন, ধ্রুব মিউজিক স্টেশন থেকে ‘আমার গান’ শিরোনামের একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি আমরা। এই প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আমরা সারা বাংলাদেশ থেকে নিজের লেখা, সুর করা বেশ কিছু মৌলিক শিল্পী পেয়ে যাব। এরই মধ্যে তাদের গান নিয়ে কাজ শুরু হয়ে গেছে।

 

আমরা শিল্পীদের বলি না, কাভার গান নিয়ে আসতে

সাহেদ আলী পাপ্পু (কর্ণধার সিএমভি)

আমরা কিন্তু কখনো শিল্পীদের বলি না, আমাদের কাছে কাভার গান নিয়ে এসো। শিল্পীরাই আসেন তাদের গান নিয়ে। একটা সময় নতুন শিল্পীরা যখন যে গান নিয়ে এসেছেন আমরা চেষ্টা করেছি তাদের গানগুলো প্রকাশ করতে। কিন্তু এই সময়ে গান প্রকাশের ক্ষেত্রে আমরা একটু কঠোর হয়েছি। চেষ্টা করছি ভালো শিল্পীদের গানগুলো প্রকাশ করতে। তবে এখন আমরাও একটি বিষয় খেয়াল করছি, নতুন শিল্পীদের মৌলিক গান করার বিষয়ে আগ্রহ দিন দিন কমছে।

সর্বশেষ খবর