বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : আজমেরী হক বাঁধন

বেশির ভাগ মানুষই আমাকে পছন্দ করে না

বেশির ভাগ মানুষই আমাকে পছন্দ করে না

দুই বাংলার জনপ্রিয় মুখ আজমেরী হক বাঁধন। ‘রেহানা মরিয়ম নুর’ দিয়ে বিশ্বের দরবারে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। সিনেমা-ওয়েব কনটেন্টসহ বেশ কিছু দর্শকনন্দিত কাজ উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। হিন্দি সিনেমায়ও কাজ করেছেন বাঁধন।  তাঁর সঙ্গে সমসাময়িক ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

দীর্ঘ ১৭ বছরের ক্যারিয়ার, মাঝে অনেকটা বিরতি এরপর নতুনভাবে ফিরে আসা, সাফল্যের দেখা পাওয়া সাফল্যের কারণ কী?

সত্যি কথা কি, একটা সময় ব্যক্তিগত কারণে কিছুটা ডিজেস্টারের মধ্যে অতিবাহিত করছিলাম। সেটা ২০১৭-তে। আমার ক্রনিক ডিপ্রেশন ছিল। তা আরও সিভিয়ারভাবে অ্যাটাক করে আমাকে। এরপর একজন থেরাপিস্টের কাছে কাউন্সিলিংয়ে গেলে তিনি আমাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেন যে, আপনি যে কাজটি করেন তা ভালো লাগে কি না? আমি তখন বললাম, না লাগে না। তিনি বললেন, তাহলে কেন করেন? বললাম, আমার তো টাকা দরকার, তাই করি। আসলে তখন কাজটাকে ভালো লাগার জন্য করিনি, টাকার জন্য করেছি। এরপর তিনি পরামর্শ দিলেন, যে কাজই করবেন ভালো লাগানোর জন্য করবেন। এরপর আমি নিয়মিত ২৫-৩০ দিন পুবাইল-উত্তরায় নাটক, সিরিজ করতে লাগলাম। খুবই কমফোর্ট জোনে থেকে কাজগুলো করতে লাগলাম। ৮টার মধ্যে যে ছেড়ে দেবে, ঠিকঠাক কাজ দেবে তাদের কাজগুলো করতে লাগলাম। ওই সময়টায় আমরা অনেক কিছুর সম্মুখীন হই। খুবই অস্তিত্বহীন হয়ে যাই তখন। তবে ওই অবস্থায়ই আমি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করার চেষ্টা করতে লাগলাম। এরপর বাচ্চাকে নিয়ে কোর্টে গার্ডিয়ানশিপের জন্য গেলাম। এরপর থেকে বলা শুরু করলাম। এটা খুবই ইন্টারেস্টিং যে, আমি কিন্তু রেহানা মরিয়ম নুরের কাছে যাইনি, অক্টোপাসের কাছে যাইনি কিংবা মুসকান বা অন্যান্য চরিত্রের কাছে। সেগুলোই কিন্তু আমার কাছে এসেছে। এটা একটা অস্বাভাবিক ঘটনা যে, সাদের টিম আমাকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। আমি তখন কিন্তু নিজেকে বুঝিয়েছিলাম, এটা আমার লাস্ট অপশন। এটা আমাকে করতে হবে এবং শতভাগ ডেডিকেশন দিয়ে। এরপর তো একটার পর একটা কাজ করেছি, এখনো করে যাচ্ছি।

 

সেই বাঁধন কি কিছুটা হলেও পাল্টেছে?

কিছুই চেঞ্জ হয়নি। আমি যে বাঁধন ছিলাম সে বাঁধনই আছি। আমার কাছে আসলে যে কোনো কাজের গল্প ও চরিত্রটা পছন্দ হতে হবে। আর আমার ডিরেক্টরকে আমাকে বিশ্বাস করতে হবে।

 

মিডিয়ার মানুষ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা, একে অন্যকে পছন্দ করেন না আপনার ধারণা কী?

আমাকে বেশির ভাগ মানুষই পছন্দ করেন না। এটা শুধু মিডিয়া নয়, মিডিয়ার বাইরেও। আবার যারা পছন্দ করেন তারা একেবারে মন থেকে করেন। তো  সেটা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমি এটাই ফিল করতে চাই। কে পছন্দ করল আর কে করল না, তা নিয়ে ভাবতে চাই না।

 

হিন্দি সিনেমায় যখন কাজের অফার এলো তখন কী ভেবেছিলেন?

আমি সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, হিন্দি সিনেমা ‘খুফিয়া’তে আমাকে কাষ্ট করবে। কান-এ অনুরাগ কশ্যপের সঙ্গে আগের দিন দেখা হলো। পরের দিনই আমাকে জেরেমি টেক্সট করেছে যে, অনুরাগ তোমার সেল নম্বর চেয়েছে। এরপর অনুরাগ আমাকে টেক্সট করে জানায়, বিশাল ভরদ্বাজের ফিল্মের জন্য আমার অডিশন হবে। আমি টেক্সট দেখে বারবার পড়তেছিলাম। অবাক হয়ে অন্যদেরও টেক্সটা দেখাচ্ছিলাম। আসলে আমি তখন সবকিছু বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। এরপর কান থেকে বাংলাদেশে আসার পর বিশালের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা হলো। অডিশনের জন্য রিহার্সেল হলো। এরপর তো কাজটি করলাম।

 

খুফিয়া কবে আসছে?

নেটফ্লিক্সের জন্য নির্মিত এই সিনেমাটি। শুটিং শেষ হয়েছে গত বছরই। তবে নির্মাতাই ভালো জানেন কবে সিনেমাটি রিলিজ দেবেন।

 

নতুন বছরে নতুনরূপে হাজির হচ্ছেন ওয়েব সিরিজগুটি নিয়ে...

মাদক পাচারকারী সুলতানার চরিত্রে অভিনয় করেছি। সাত পর্বের এই সিরিজটির গল্পটা পরিচালক শঙ্খ দাশগুপ্ত খুব দুর্দান্তভাবে সাজিয়েছেন। ভিন্ন প্লট, ভিন্ন চরিত্র, ভিন্ন ধরনের একটা গল্প তিনি ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন। সুলতানা চরিত্রটা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আলাপ করেছি। এই চরিত্রটা অনেকদিন ধরে নিজের মধ্যে ধারণ করছি।

 

কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে ধারণা রয়েছে, ফিমেল লিডের কাজ চলে না আপনার বিষয়ে কী অভিমত?

এ দেশে ফিমেল লিডের কাজ চলে না, এই কথাটা আসলে শুনতে চাই না। আমি বিশ্বাস করি আগামী দুই-এক বছরের মধ্যে এই ধারণার পরিবর্তন হবে। আমরা আমাদের কাজ দিয়েই এই চিন্তার পরিবর্তন করতে পারব। দর্শককেও নতুন কিছু দিতে পারব। এখন শুধু অপেক্ষা।

 

মেয়ের স্বপ্ন পূরণে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন সেই স্বপ্ন পূরণের বিষয়টি একটু খুলে বলবেন?

২০১৯ সালে সায়রাকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম যুক্তরাষ্ট্রে। তখন মেয়েকে বলেছিলাম, এটাই হয়তো তোমাকে নিয়ে শেষ ট্যুর। আমার অত ক্যাপাবিলিটি নেই। কিন্তু গত ৩ বছরে আমাকে সৃষ্টিকর্তা সে জায়গায় এনেছেন। সায়রার ইচ্ছা ছিল তুষারপাত দেখার। সেটা তখন সম্ভব হয়নি। এবার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর মেয়েকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এসেছি। বরফের মধ্যে গিয়ে মা-মেয়ে মিলে অনেক মজা করছি। অনেক আনন্দ করছি। এক জীবনে দারুণ কিছু সুখের স্মৃতি জমা হচ্ছে। সুখের অনুভূতিতে জীবনকে রঙিন করছে।

 

শুনেছি ঢাকা লিট ফেস্টে একটি সেশন পরিচালনা করবেন আপনি?

হ্যাঁ, ‘ধরাবাঁধার বাইরে’ শিরোনামের এই সেশনে আমার সঙ্গে নিজেদের মতামত ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন আমার খুবই প্রিয় মানুষ আফজাল হোসেন, বন্যা মির্জা এবং চঞ্চল চৌধুরী। এটি অনুষ্ঠিত হবে ৭ জানুয়ারি সোয়া ৪টা থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত একাডেমির মাঠে (লন)। এ ছাড়াও ‘পুরুষত্ব বনাম পুরুষতন্ত্র’ নামের একটি সেশনে অতিথি হিসেবেও থাকব। আমি খুবই সম্মানিত এ জন্য।

সর্বশেষ খবর