বুধবার, ৩ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

আলিয়া ভাটের যত চমক...

আলাউদ্দীন মাজিদ

আলিয়া ভাটের যত চমক...

ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি ছবিতে অভিনয়ের জন্য কিংবদন্তি অভিনেত্রী রেখার হাত থেকে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার  নিচ্ছেন আলিয়া ভাট

  বলিউড অভিনেত্রী আলিয়া ভাটের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি বেকার গেল না। আবারও চমক নিয়েই ফিরলেন তিনি। ‘গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ির মতো একটি ঐতিহাসিক ছবিতে চ্যালেঞ্জিং এবং ঝুঁকিপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করে থেমে থাকেননি তিনি। অসাধারণ অভিনয়দক্ষতা দেখিয়ে বলিউডের বাঘা বাঘা অভিনেত্রীদের সারিতে এসে দাঁড়ালেন। উঁচু মানের কাজ দিয়ে জয় করে নিলেন ৬৮তম ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ডের সম্মানজনক ট্রফি। গাঙ্গুবাই ছবিতে প্রচুর দৃশ্য ছিল, যেখানে নির্মাতা সঞ্জয় লীলা বানশালী তাঁর পরিচিত চাল চেলেছেন। গাঙ্গুবাইয়ে আলিয়ার পারফরম্যান্স ছিল শীর্ষস্থানীয়। গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায় ‘গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি’। ছবিটি ছিল সত্য ঘটনার চিত্ররূপ। শুটিংয়ের প্রথম দিন আলিয়া ক্লায়েন্টদের খুশি করার জন্য সঠিক কৌশল শিখছেন অন্য যৌনকর্মীর থেকে। অসহায় আলিয়া, সেই পেশায় একেবারে নবাগতা, না বুঝেই বন্ধুর ইঙ্গিতে বিশ্রীভাবে অঙ্গভঙ্গি করার সময় তাঁর অস্বস্তি চোখে মুখে ফুটে ওঠে। এই দৃশ্যের মতো ছবিতেও দর্শকদের আগ্রহ বাঁচিয়ে রাখতে আলিয়া অবিরাম সংগ্রাম করেছেন। ছবিতে আলিয়ার চরিত্রটি ছিল এক যৌনকর্মীর, যিনি খ্যাতির চমকপ্রদ উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন। এই ছবির সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো আলিয়া ভাটকে এমন একটি চরিত্রের জন্য বেছে নেওয়া হয়, যা শুধুই ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ নয়। বরং, এ অভিনেত্রীর এখন পর্যন্ত নেওয়া ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। আলিয়া ‘গাঙ্গুবাইকে’ অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করেন এবং সেরার সেরা অভিনয় করার সম্ভাব্য প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। আর এই চেষ্টা তাঁকে সফলতার পোক্ত তক্তে বসিয়ে দেয়। আলিয়া তাঁর চেনা ছকের বাইরে এমন একটি চরিত্র করার জন্য কৃতিত্বের যোগ্য। এবং ছবিটি মুক্তির পর সর্বজনের প্রশংসা এবং অবশেষে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড হাতে ওঠার পর নিজের অভিনয় জাত চিনিয়ে চমকে দিলেন বলি পাড়াকে।

 

আবেগঘন পোস্ট

এদিকে সম্প্রতি ঘোষিত ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে একাধিক পুরস্কার পেল ‘গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি’। ছবির সাফল্যের পর আবেগঘন পোস্ট করলেন আপ্লুত আলিয়া। যা মুহূর্তে ভাইরাল হলো নেটদুনিয়ায়। তিনি লেখেন, যেদিন ‘গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি’ ছবির শুটিং শেষ করলাম সেদিন আমার হাত কাঁপছিল। তখন আমার মন কান্নায় ভরে যায়। আমি আমার কলাকুশলীদের বলেছিলাম, জানি না ছবিটি হিট হবে নাকি ফ্লপ হবে, তবে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা সব সময় মনে রাখব। এর থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। একই সঙ্গে সঞ্জয় স্যারের নির্দেশনাও আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে এবং এর কারণেই ছবিটি ব্লকবাস্টার হয়েছে। আমি যখন সেই সেট থেকে বেরিয়ে এসেছি, তখন আমি অনুভব করেছি যে, একজন ব্যক্তি হিসেবে আমার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে এবং এই সব সম্ভব হয়েছে শুধু আমার এত ভালো দল আছে বলে। আলিয়া আরও বলেন, গাঙ্গু মেরি জান মেকা অল্টার ইগো হ্যায়। আর এটি শুধু সঞ্জয় স্যারের কারণে। আমাকে এত বিশ্বাস করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সঞ্জয় স্যার। আপনার কারণেই আমি নিজেকে বিশ্বাস করতে পেরেছি। আমি সব সময় তোমার কাছে ঋণী থাকব। তিনি লেখেন, আমি আমার শ্রোতাদের, আমার ভক্তদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। যারা সব সময় আমাকে আরও ভালো কাজে অনুপ্রাণিত করেছেন। আমার পুরো দল, আমি যে শুধু তোমার জন্যই। এরপর নিজের পরিবারকে ধন্যবাদ জানান আলিয়া।

হলিউডের পথে

এদিকে বলিউডের দর্শকদের বহুবার মুগ্ধ করা অভিনেত্রী আলিয়া ভাট হলিউড পাড়ি দেওয়ার জন্য মার্কিন ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা উইলিয়াম মরিস এন্ডেভারের সঙ্গে চুক্তিপত্রে সই করেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে খুব শিগগিরই প্রথম হলিউড ছবির নাম ঘোষণা করবেন অভিনেত্রী। ২০২৩-এ এই ছবির ঘোষণা করতে পারেন আলিয়া। হলিউডের বেশ কয়েকটি চিত্রনাট্য পড়েছেন আলিয়া। তার মধ্যে কয়েকটি বেশ পছন্দও হয়েছে তাঁর। আর তাই সবমিলিয়ে বলিউড থেকে হলিউডে পাড়ি দেওয়া নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত তিনি। আলিয়ার এক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানাচ্ছেন, হলিউডে জেনিফার লরেন্সকে খুব পছন্দ আলিয়ার। ছবিতে তিনি যে ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেন, তেমনই কিছু চাইছেন বলি অভিনেত্রী। বেশ কিছুদিন ধরেই হলিউডে পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনায় রয়েছেন আলিয়া। তবে কোন ছবি করবেন, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তায় রয়েছেন তিনি। আমেরিকায় উইলিয়াম মরিস এন্ডেভার একটি নামকরা সংস্থা। এই সংস্থার থেকেই উঠে এসেছেন এমা স্টোন, গাল গ্যাডট, চার্লিজ থেরন এবং অন্যরা।

 

প্রযোজনা সংস্থা খুললেন

একদিকে হলিউডে কাজ করার অদম্য ইচ্ছা, আবার একই সঙ্গে দেশে  প্রযোজনা সংস্থাও খুলে ফেলেছেন আলিয়া। সেই সংস্থার প্রথম ছবি ‘ডার্লিং’-এ সহপ্রযোজক হিসেবে রয়েছেন অভিনেতা শাহরুখ খান।

ফোর্বস তালিকায় অন্তর্ভুক্ত এদিকে আলিয়ার আরেকটি চমক হলো ২০১৭ সালে থেকে তিনি ফোর্বস ইন্ডিয়ার সেলিব্রেটি ১০০ তালিকায় এবং ২০১৭ সালে ফোর্বস এশিয়ার থার্টি আন্ডার থার্টি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

 

এক নজরে...

ভাট পরিবারে জন্মগ্রহণকারী আলিয়া, চলচ্চিত্র নির্মাতা মহেশ ভাট এবং অভিনেত্রী সোনি রাজদানের কন্যা। ১৯৯৯ সালে তনুজা চন্দ্র পরিচালিত সংঘর্ষ চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পীর ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। পরবর্তীতে প্রাপ্তবয়স্ক অভিনেত্রী হিসেবে করণ জোহর পরিচালিত ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’ (২০১২) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন তিনি; যেটি সে বছরের বক্স অফিসে সাফল্য অর্জন করে। তিনি জোহরের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ধর্ম প্রোডাকশন্স প্রযোজিত বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনেত্রী হিসেবে বলিউড চলচ্চিত্র শিল্পে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে টু স্টেটস (২০১৪), হাম্পটি শর্মা কি দুলহানিয়া (২০১৪), ডিয়ার জিন্দেগি (২০১৬) এবং বদ্রীনাথ কি দুলহানিয়া (২০১৭)। ২০১৪ সালে ইমতিয়াজ আলী পরিচালিত হাইওয়ে পথচলচ্চিত্রে স্টকহোম সিনড্রোমে আক্রান্ত কিশোরীর চরিত্রে ভাটের অভিনয় চলচ্চিত্র সমালোচকদের ইতিবাচক মন্তব্য লাভ করে। চলচ্চিত্রটির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার জিতেন এবং একই অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্যও মনোনয়ন পান। ২০১৬ সালে উড়তা পাঞ্জাব অপরাধ নাট্য চলচ্চিত্রে দারিদ্র্যপীড়িত অভিবাসী চরিত্রে এবং ২০১৮ সালে রাজি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি হিন্দি চলচ্চিত্রের সর্বাধিক উপার্জনকারী মহিলা-নেতৃত্বাধীন চলচ্চিত্রগুলোতে কাজ করেছিলেন।  ২০১৯ সালে তাঁর সর্বাধিক উপার্জনকারী সংগীতধর্মী নাট্য চলচ্চিত্র ‘গালি বয়’ মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটি ৯২তম একাডেমি পুরস্কারে সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে ভারত থেকে নির্বাচিত হয়েছিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর