সিনেমার তারকারা কীভাবে হাঁটেন, কেমন পোশাক পরেন, তাদের চুলের স্টাইল কেমন মানে তাদের চলন-বলন সবকিছুই দর্শক-ভক্তরা শুধু উপভোগ করেন না, অনুকরণ ও অনুসরণও করেন। ঢাকাই সিনেমার বেশ কজন নায়ক-নায়িকার স্টাইলের কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
রাজ্জাক
নায়করাজ রাজ্জাকের হেয়ার স্টাইল ষাট ও সত্তর দশকের দর্শকদের কাছে ছিল অনুকরণীয়। তখন বেশির ভাগ মানুষ তার মতো করে চুলের স্টাইল করতে বেশ পছন্দ করত। ওই সময় রাজ্জাক সিনেমায় চিপা প্যান্ট পরতেন। তাও দর্শকদের কাছে অনুসরণীয় হয়ে ওঠে। এর বাইরে ইমোশনাল সংলাপের সময় নায়করাজ সব সময় বুকের বাঁ পাশটা চেপে ধরে রাখতেন। এটিও দর্শকের কাছে খুব পছন্দনীয় ছিল।
ববিতা
অভিনেত্রী ববিতা বেশির ভাগ সিনেমায় প্রেম ও লজ্জার দৃশ্যে আলতো করে শাড়ির আঁচলের কোনা কামড়ে ধরতেন। আবার অনেক সময় শাড়ির আঁচলের কোনো সংলাপ আওরাতে আওরাতে আঙুলে পেঁচিয়ে নিতেন। এটি মহিলা দর্শকদের কাছে বেশ পছন্দের হয়ে উঠেছিল।
আলমগীর
সিনেমায় নায়ক আলমগীরের ভিন্ন ডিজাইনের শার্ট দেখে দর্শকরা তার মতো শার্ট অর্ডার দিয়ে তৈরি করাতেন। এসব শার্টের কলার থাকত কালো বা সাদা আবার শার্টের রং যাই হোক বুকের দিকটায় থাকত কোনাকুনি করে ভিন্ন রঙের ডিজাইন করা। তা ছাড়া আবেগঘন দৃশ্য বা গানে ডান হাতের তালুর দিকটা ওপর দিকে পেতে যেভাবে সংলাপ প্রক্ষেপণ করতেন তা ছিল দর্শকদের কাছে খুব পছন্দের।
কবরী
অভিনেত্রী কবরীকে মিষ্টি মেয়ে বলে সম্বোধন করা হতো। কারণ ছিল সিনেমার রোমান্টিক দৃশ্যে তার মিষ্টি মধুর হাসি। যা অন্য সবার চেয়ে আলাদা ছিল। এক্ষেত্রে বিখ্যাত ‘সারেং বউ’ সিনেমার একটি দৃশ্যে তার মিষ্টি হাসি দেওয়া সংলাপ ‘ইস্ সারেংয়ের বেটা কী বেহায়াগো’ আজও দর্শকের মনে গেঁথে আছে।
শাবানা
ঢালিউডের বিউটিকুইন খ্যাত অভিনেত্রী শাবানার অভিনীত বেশ কিছু স্টাইল বা দৃশ্য এখনো দর্শক ভুলতে পারেননি। যেমন প্রায়ই প্রেমের সংলাপ বা গানের ক্ষেত্রে তার চোখ পিট পিট করত। রাগ বা বিরহের দৃশ্যে বেডরুমে ছুটে গিয়ে বিছানায় কোল বালিশ জড়িয়ে ধরে তার কান্নার কথা কি দর্শক আজও ভুলতে পেরেছেন। আবার স্বামীহারা শাবানা সন্তানকে লেখাপড়া শেখাতে অর্থ উপার্জনের জন্য কাপড় সেলাই করতে সেলাই মেশিন নিয়ে বসে পড়ার দৃশ্য এখনো আইকনিক হয়ে আছে।
জাফর ইকবাল
ঢাকাই সিনেমার প্রথম স্টাইলিশ নায়কের খ্যাতি অর্জন করেন জাফর ইকবাল। তার ওয়েস্টার্ন ধাঁচের পরা পোশাক সত্তর ও আশির দশকের নতুন প্রজন্মের কাছে বেশ অনুকরণীয় হয়ে উঠেছিল। তার অভিনয়ের ভিন্ন ধাঁচ, বিশেষ করে ইমোশনাল সংলাপ ও রোমান্টিক গানের ক্ষেত্রে ডান হাত ওপর দিকে উঠিয়ে মাথা নিচু করে গান করা বা সংলাপ বলা বেশ জনপ্রিয়তা পায়। যেমন ‘এক মুঠো ভাত’ সিনেমার ‘অতো রূপের গরব করিস না, ওই রূপ চিরদিন থাকবে না।’ গানটিতে জাফর ইকবালের স্টাইল এখনো চিরন্তন হয়ে আছে।
পূর্ণিমা
নায়িকা পূর্ণিমার মিষ্টি হাসি আরও মোহনীয় হয়ে ওঠে যখন সিনেমার রোমান্টিক দৃশ্যে ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির সঙ্গে তার ডান হাতটি ঘাড়ের ওপর রাখা হয়। পূর্ণিমার অনেক স্টাইলের মধ্যে এটি হচ্ছে দর্শকের কাছে বেশ প্রিয় ও মেয়েদের কাছে অনুকরণীয়।
নাঈম
চিত্রনায়ক নাঈমের সিনেমায় বাঁশি বাজানোর দৃশ্য দর্শকের কাছে আজও আকর্ষণীয় হয়ে আছে। তিনি প্রজাপতির মতো উড়ে ঘুরে যেভাবে রোমান্টিক গানে বাঁশি বাজাতেন তা তরুণ-তরুণীদের হৃদয়ে শিহরণ জাগাতেন। যেমন, ‘চাঁদনী’ সিনেমায় নায়িকা শাবনাজ যখন ‘ও আমার জান তোর বাঁশি যেন জাদু জানেরে’ গানটি গেয়ে ওঠেন তখন নাঈমের ঠোঁটে ধরা বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে তিনি যেভাবে নেচে ওঠেন তা এখনো দর্শকের মনের মণিকোঠায় জ্বলজ্বলে হয়ে আছে।
শাবনূর
সিনেমায় বলিউড নায়িকা মাধুরীর স্টাইলে শাবনূরের নাচ দর্শক বেশ পছন্দ করতেন। যেমন বলিউডের ‘হাম দিল দে চুকি সনম’ সিনেমায় মাধুরীর ‘নিমুরা নিমুরা’ নাচের সঙ্গে ঢাকায় নির্মিত একই সিনেমা ‘এই মন চায় যে’তে ‘ছোট ছোট লেবু এনে দাও’ গানটিতে শাবনূরের হুবহু নাচ দর্শকদের বিমোহিত করেছিল। তাছাড়া নব্বই দশকের ঢাকাই সিনেমার নায়িকাদের মধ্যে একমাত্র শাবনূরের নাচই দর্শক হৃদয়ে উচ্ছ্বাসের ঝড় তুলতেন।
ওমর সানী
নায়ক ওমর সানী যখন রাগ বা বিরহের সংলাপ প্রক্ষেপণ করেন তখন তিনি ডান দিকে কাঁধ ঝুঁকিয়ে বেশ আবেগঘনভাবে অভিনয় ডেলিভারি দেন। তার এই স্টাইল দর্শকরা বেশ পছন্দ করেন।
ইলিয়াস কাঞ্চন
নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনয়ের ক্ষেত্রে সেরা ছিলেন তার হৃদয় বিগলিত কান্নার দৃশ্য আর গানের ক্ষেত্রে ডান পায়ের হাঁটু তুলে তুলে নাচের জন্য। ‘সুন্দরী’ সিনেমায় তার কান্নার দৃশ্য ও অন্যসব সিনেমায় ভিন্ন মুদ্রার নাচ তখনকার দর্শক বেশ উপভোগ করতেন।
রোজিনা
সিনেমায় রোজিনা যখন গানের সঙ্গে নাচতেন তখন তার হাতের কনুই উঁচিয়ে উঁচিয়ে ছোটা এখনো দর্শকের মনে আছে। এই নাচের জন্য কিছু দর্শক তার সিনেমা দেখে বেশ মজা পেতেন।
সালমান শাহ
ঢাকাই সিনেমায় নব্বই দশকে সালমান শাহ তার ওয়েস্টার্ন ধাঁচের পোশাক এবং মাথায় ভিন্ন স্টাইলের টুপি বা রুমাল পরে যেভাবে তরুণ প্রজন্মের কাছে নতুন আইকনিক হিসেবে ধরা দিয়েছিলেন সেই স্থান আজও কোনো নায়ক পূরণ করতে পারেননি। শুধু পোশাক নয়, তার অভিনয়ে ভিন্ন মাত্রার ধাঁচ ও অনবদ্য নাচ আজও দর্শকের কাছে অনুকরণীয় হয়ে আছে। তাই সাফল্যের বরপুত্র খ্যাত এই নায়ক চিরকাল ঢাকাই সিনেমায় ইতিহাস হয়ে থাকবেন।