‘আরমান ভাই’ শিরোনামে বাংলাভিশন চ্যানেলে প্রচারিত জনপ্রিয় নাটকটির কথা হয়তো সবার মনে আছে। এতে আরমান ভাই চরিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি পেয়েছিলেন জাহিদ হাসান। এ দর্শকপ্রিয় অভিনেতার শোবিজ জগতে আসার গল্পটা কেমন? সে কথাই জানালেন তিনি। তার কথায়- ‘আমার ডাকনাম পুলক। মা রেখেছিলেন পুলক নামটি। সিরাজগঞ্জ আমার নিজের এলাকা। ছেলেবেলার বন্ধুরা এখনো পুলক নামেই ডাকে। কাছের মানুষেরাও কেউ কেউ পুলক নামে ডাকেন আজও। জাহিদ নামটি রেখেছিলেন আমার দাদা। পুলক থেকে সবার ভালোবাসায় আজকের জাহিদ হাসান হয়েছি। পেছন ফিরে তাকালে কত কথা মনে পড়ে। কত স্মৃতি চোখে ভাসে। একজীবনে সেসব স্মৃতি কি ভুলে যাওয়া সম্ভব? মনে পড়ে ছেলেবেলায় সিরাজগঞ্জে থাকতে প্রচুর নাটক দেখেছি। শীতের সময় যাত্রাপালা দেখার কথাও মনে পড়ে। সিরাজগঞ্জ শহরে মঞ্চনাটকের দল ছিল। সেখানে নাটক দেখার কথাও মনে পড়ে। ওখানে টিকিট কেটে মঞ্চনাটক দেখার প্রচলন ছিল। আমিও টিকিট কেটে মঞ্চনাটক দেখতাম। যাত্রাপালা বেশি দেখা হতো না, মাঝে মাঝে যেতাম। একবার শুনলাম, সিরাজগঞ্জ শহরে ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ যাত্রাপালা হবে। ঢাকা থেকে দল আসবে। আনোয়ার হোসেন নবাবের চরিত্রে অভিনয় করবেন। ওই যাত্রাপালা দেখার জন্য সে কী আগ্রহ আমার! টিকিটের দাম ৫০০, ১০০, ৫০ ও ২০ টাকা। বড় বড় শিল্পী যাবেন বলেই টিকিটের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আব্বাকে বললাম, যাত্রা দেখব। ২০ টাকা দিয়ে আব্বা বলেছিলেন, ‘যাও’। আনোয়ার হোসেনকে দেখে এসো। স্টেজের খুব কাছে মাটিতে বসে সেই রাতে ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ যাত্রাপালা দেখেছিলাম। ওই প্রথম আনোয়ার হোসেনকে কাছ থেকে দেখা! কী যে উত্তেজনা কাজ করেছিল। স্কুল পাস করে সিরাজগঞ্জ শহরেই কলেজে ভর্তি হই। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর নাটকের দিকে ঝুঁঁকে যাই। কেননা, অভিনয়ের নেশাটা পেয়ে বসেছে স্কুলজীবন থেকে। যার জন্য কোথাও নাটক বা যাত্রাপালা হলে দেখতে যেতাম।
কলেজে পড়ার সময় তরুণ সম্প্রদায় নাট্যদলে যোগ দিই। সেই দলের হয়ে কয়েকটি নাটকে অভিনয় করি। ‘সাত পুরুষের ঋণ’ নাটকটির কথা বলতেই হয়। নাটকটি ১৯৮৪ সালের ১০ আগস্ট বিটিভিতে সরাসরি প্রচারিত হয়েছিল। সেই সময়ে আমার জন্য বিষয়টি অনেক বড় ছিল।
ইন্টারমিডিয়েট পাস করে আমার বেশির ভাগ বন্ধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো। আমি তো নাটক করতে চাই। আমাকে ঢাকায় আসতে হবে। ঢাকায় না এলে নাটক করতে পারব না। আমার আশা পূরণ হবে না। বাড়ি থেকে অবশ্য কেউ তা চাচ্ছিল না। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলাম। ভর্তিও হয়েছিলাম। কিন্তু মনটা পড়ে থাকল ঢাকা শহরে। কিছুদিন সেখানে পড়ার পর চলে আসি ঢাকায়। কারণ অভিনেতা হতে হবে। পড়ালেখা শুরু করি এ শহরে। আর ভিতরে ভিতরে স্বপ্ন দেখি- অভিনয় করব। ১৯৮৬ সালে ‘বলবান’ নামের একটি সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ পাই। ১৯৮৯ সালে বড় একটি সুযোগ আসে আমার জীবনে। বিটিভিতে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য অডিশন দিই। পাসও করি। আসলে এখনকার মতো ওই সময়ে টিভি নাটকে অভিনয় করাটা অত সহজ ছিল না। খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। কাজেই অডিশনে পাস করার পরপরই নাটকে অভিনয় করতে পারিনি। তারপরও তালিকাভুক্ত হতে পেরেছি- এটাই ছিল আমার জন্য বড় ব্যাপার।
১৯৯০ সাল আমার জীবনে বড় একটি টার্নিংয়ের বছর। ঢাকায় তখন মঞ্চকর্মীদের বেশ ভালো অবস্থা। চিন্তা করি, আমিও মঞ্চনাটকে অভিনয় করব। সে বছর মঞ্চনাটক শুরু করি। যোগ দিই ‘নাট্যকেন্দ্রে’। এ ছাড়া একই বছর প্রথমবার টিভি নাটকে অভিনয় করার সুযোগ এসে যায়।
প্রথম অভিনীত টিভি নাটকটির নাম ছিল ‘জীবন যেমন’। নাটকটি প্রযোজনা করেছিলেন আলীমুজ্জামান দুলু। ভাগ্য প্রসন্ন ছিল বলে প্রথম টিভি নাটকেই গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র পেয়েছিলাম।
প্রথম টিভি নাটকে অভিনয় করে পেয়েছিলাম ১ হাজার ২০০ টাকা।