৩৪ বছর পর আলোর মুখ দেখছে বাংলাদেশ ফিল্মসিটি। এপ্রিলে এফডিসির ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এস এম হারুন-অর রশিদ ফিল্মসিটির উন্নয়নে উদ্যোগ নেন। তিনি সরকারি প্রকল্প তালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত করান। ফলে শীঘ্রই ফিল্মসিটির নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে।
হারুন-অর রশিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চলচ্চিত্রকারদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণে এফডিসির এমডি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপর বিষয়টির প্রতি অগ্রাধিকার দিই। কারণ, ফিল্মসিটি গড়ে উঠলে চলচ্চিত্র নির্মাতারা উপকৃত হবেন। তিনি বলেন, ফিল্মসিটির উন্নয়ন এখন ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সরকারি প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। শীঘ্রই প্রকল্প পরিকল্পনা জমা দেব। পাস হলেই কাজ শুরু হবে।
প্রাথমিকভাবে প্রথম পর্যায়ের উন্নয়ন কাজ হবে ও ধারাবাহিকভাবে এ কাজ চলতে থাকবে এবং দ্রুত একটি পূর্ণাঙ্গ ফিল্মসিটি গড়ে উঠবে। প্রস্তাবনায় আন্তর্জাতিক মানের ফিল্মসিটি নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। ফলে হলিউডের ইউনিভার্সেল কিংবা বলিউডের রামুজি ফিল্মসিটির রূপ পাবে বাংলাদেশ ফিল্মসিটি।
চলচ্চিত্রকারদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৯ সালে সরকার গাজীপুরের কালিয়াকৈরের আন্দারমানিক গ্রামে ফিল্মসিটি নির্মাণের জন্য ১৫০.১১৭ একর ভূমি বরাদ্দ দেয় এবং তা এফডিসির অন্তর্ভুক্ত করে। সরকার ফিল্মসিটি গড়ার জন্য তখন তথ্য মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়। এখানে রেস্ট হাউস, রানওয়ে, রেললাইন, নদী, গ্রাম, পাহাড়সহ বহিঃদৃশ্য ধারণের লোকেশন সমৃদ্ধ একটি পরিকল্পনা তথ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় এফডিসি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, পরিকল্পনা শুধু জমার মধ্যেই সীমিত হয়ে যায়। চলচ্চিত্রকারদের অব্যাহত দাবির মুখে পরিকল্পনা জমা দেওয়ার ২৩ বছর পর ২০০২ সালে এফডিসির তৎকালীন এমডি ওয়াসিমুল বারী রাজিব বিষয়টি আবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের নজরে আনেন। মন্ত্রণালয় তখন সফিপুর আনসার একাডেমি থেকে আন্দারমানিক গ্রামের ফিল্মসিটি পর্যন্ত রাস্তাটি পাকা করে দেয় এবং সেখানে ১৫ কক্ষের একটি সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে। এর মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করে দুটি কক্ষকে ভিআইপি করা হয়। পাশাপাশি একটি লেক তৈরি করে দেয় এবং স্থানটি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। ব্যাস, ওই পর্যন্তই। আবার থেমে যায় ফিল্মসিটির নির্মাণ কাজ।
চলচ্চিত্রকারদের অব্যাহত আবেদনে ২০১০ সালে সরকার নতুন করে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আবার ফিল্মসিটি গড়ার উদ্যোগ নেয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৬০ কোটি টাকা। কথা ছিল দেড় বছরের মধ্যে ফিল্মসিটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে। কিন্তু নানা জটিলতায় সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
চলচ্চিত্রকাররা বলেন, দীর্ঘ ৩৪ বছরে এখানে কখনো চলচ্চিত্রের শুটিং হয়নি। বনভোজনের জন্য জায়গাটি ভাড়া দেওয়া হয়। এ থেকে এফডিসি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পায়। আর লেকে মাছের চাষ করে মাছ বিক্রির অর্থও এফডিসিতে জমা হয়। বিদ্যুৎ বিল, প্রহরীদের বেতন এফডিসি নির্বাহ করে। বর্তমানে ফিল্মসিটির নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন একজন ইনচার্জ, তিনজন গার্ড ও একজন মালি। প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে চলচ্চিত্রকারদের স্বপ্নের ফিল্মসিটি।