তিনি ছিলেন রবিঠাকুরের নতুন বৌঠান। কবির বালক বয়সের ছাদের রাজ্যে যিনি বইয়ে দিয়েছিলেন নতুন হাওয়া। নামিয়ে এনেছিলেন নতুন ঋতু। একদিন যিনি কবির কাছে দেখা দিয়েছিলেন 'চেনাশোনার বাহির সীমানা থেকে মায়াবী দেশের নতুন মানুষ' হয়ে, তিনিই হয়ে উঠেছিলেন কবির কাছের মানুষ। অথচ সে মায়াকানন ছেড়ে, চাঁদের চোখে ঘুমের ঘোর বুলিয়ে দিয়ে, একদিন প্রাণের পরে চলে গেলেন তিনি। কোথায় দিয়ে কোথায় গেলেন তিনি, কেন যে তিনি চলে গেলেন অথচ বলে গেলেন না, কবি যেন কোনোদিনই তার নাগাল পাননি।
আজ এতদিন পেরিয়েও বাঙালির আলোচনায় ফিরে ফিরে আসেন কবি আর তার নতুন বৌঠান। প্রবন্ধে, পত্রিকায় কখনো আস্ত বইয়ে তাদের নতুন করে খুঁজেছে বাঙালি। এবার চলচ্চিত্রের আয়োজন। কবি আর কবির বৌঠান এবার উঠে আসবেন সুমন ঘোষের ছবি 'কাদম্বরী'তে। সম্প্রতি সে ছবির প্রচারেই এ সিরকার জুয়েলার্সের কাদম্বরী কালেকশনের ট্র্যাডিশনাল গহনায় সেকালের বৌঠানের মতোই সেজে উঠলেন ছবির কাদম্বরী কঙ্কনা সেনশর্মা। কবি ও তার নতুন বৌঠানকে নিয়ে বাঙালির কৌতূহলের শেষ নেই। এ ছবির নিরিখে সেই কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু এখন কঙ্কনাই। বাঙালির চিরকালের কৌতূহলের এক চরিত্র হয়ে ওঠা তার কাছে কেমন ছিল? "আসলে আমি ব্যাপারটা নিয়ে ভাবিইনি। ছবিটা করার আগে আমি কাদম্বরীদেবী সম্পর্কে অল্পই জানতাম। মানে শুনেছিলাম, কিন্তু ডিটেল জানতাম না। সুতরাং বৌঠানকে নিয়ে যে এত কৌতূহল আছে, এত রকমের স্পেকুলেশন আছে, সেটাই আমি জানতাম না। 'চারুলতা' বা 'নষ্টনীড়'-এর প্রসঙ্গে খানিকটা জেনেছিলাম। তারপর আমি অরুণা চক্রবর্তীর 'জোড়াসাঁকো' বইটি পড়ি। তখন আমি চরিত্রটাকে ভালো করে বুঝতে পারি।'' বললেন কঙ্কনা। ধীরে ধীরে কাদম্বরীদেবীর চরিত্র তাকে গ্রাস করে। 'আমি বুঝতে পারি ওর জীবনটা খুব সুখের ছিল না। স্বামী অনেকটাই বয়সে বড় ছিলেন। সম্ভবত স্ত্রীর প্রতি খুব একটা বিশ্বস্তও ছিলেন না। সন্তান ছিল না। বহুবার অসুস্থ হয়েছিলেন। তখনকার দিনে অসুখ হওয়া মানে তো সেই এক ঘরে পড়ে থাকা। শিল্প-সাহিত্য ভালোবাসতেন, কিন্তু সেভাবে তেমন কোনো মানুষ পাননি, যার কাছে নিজেকে মেলে ধরতে পারেন।'