চলচ্চিত্র ব্যবসার ক্রমাবনতিতে উদ্বিগ্ন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। এমন উদ্বেগের কথা জানান চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দীন। এক লিখিত বিবৃতিতে তিনি জানান, ঢালিউডের যাত্রালগ্নে প্রতিকূল অবস্থা সত্ত্বেও এখানকার ছবি দেশে-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। ১৯৫৬ সালে 'মুখ ও মুখোশ' দিয়ে সবাক বাংলা চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু। তখন এদেশে উর্দু ও হিন্দি ছবি চলতো। সেসব ছবি ও ছবির তারকাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আমাদের ছবি ব্যবসাসফল হতো। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে এদেশে উর্দু ও হিন্দি ছবির প্রেটেকশন শুরু। প্রোটেকশনের পর ২০১০ সাল পর্যন্ত ঢালিউডে মুক্তি পায় ২৫৭৬টি ছবি। এর মধ্যে ২৯টি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক, ৯৩টি মৌলিক গল্পনির্ভর, ৬১টি লোক কাহিনীভিত্তিক, ১৬টি উপন্যাসের চিত্ররূপ। বাকি ২৩৭৭টি ছবির ২৫ ভাগ ভারতীয় ও ৬ ভাগ উর্দু ছবির হুবহু নকল।
৪০ ভাগ ছবি নির্মাণ হয়েছে হিন্দি ও উর্দু ছবির কাহিনী ও চিত্রনাট্যকে নানা কায়দায় পরিবর্তন করে। ১৯৯৯ সালে এরচেয়েও বড় অবক্ষয় শুরু হয়। অশ্লীলতা ও বিকৃত রুচির শিরোনামে ছবি নির্মাণের মহাউৎসব দেখা দেয়। এসব ছবির সংলাপও উচ্চারণ করার মতো নয়। ফলে দর্শক সিনেমা হলবিমুখ হতে শুরু করে। তারা ঘরে বসে স্যাটেলাইট চ্যানেল, ভিসিআর, আর সিডির মাধ্যমে অবাধে সেন্সরবিহীন বিদেশি ছবি দেখার সুযোগ পায়। ভালো ছবি এবং দর্শকের অভাবে বন্ধ হয়ে প্রায় ১৩০০ এর স্থলে বর্তমানে ৩শটির মতো সিনেমা হল অবশিষ্ট আছে। এগুলোও বন্ধের পথে। শুধু ঢাকা শহরে হাতেগোনা কয়েকটি সিনেপ্লেক্স নির্মাণ হলেও তাতে বেশি প্রদর্শন হয় ইংরেজি ছবি। এ অবস্থায় ১৯৭২ সালের আগের মতো সবদেশের ছবি প্রদর্শন যদি উম্মুক্ত করে দেওয়া হয় তাহলে প্রতিযোগিতায় গিয়ে হলেও তখনকার মতো ভালো ছবি নির্মাণ করতে বাধ্য হবে নির্মাতারা। প্রদর্শকরা চায় ঘরে ঘরে সেন্সরবিহীন ছবির অবৈধ প্রদর্শন বন্ধ করে অতিরিক্ত ট্যাক্স দিয়ে সরকার সিনেমা হলে সেন্সর করা বিদেশি ছবি সীমিত আকারে প্রদর্শন করুক। না হলে রুগ্নশিল্পের ভাগ্যবরণকারী দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পকে আর রক্ষা করা যাবে না।