চট্টগ্রাম জেলায় প্রতিবছর পশু কোরবানিদাতার সংখ্যা বাড়ছে। এক দশক আগে যেখানে পুরো জেলায় ৫ লাখ পশু কোরবানি হতো সেখানে আসন্ন ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির চাহিদা ধরা হয়েছে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি। অর্থ্যাৎ গত দশ বছরে কোরবানির পশুর চাহিদা ৭৯ শতাংশ বেড়েছে। তবে সুখের খবর হচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চট্টগ্রাম অঞ্চলে পশু পালনের হারও বাড়ছে। ফলে স্থানীয় পশুর যোগান দিয়ে চাহিদা পূরণ করা যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম জেলায় ২০১০ সালের পর থেকেই ক্রমান্বয়ে পশু কোরবানির হার বাড়ছে। ২০১১ সালে তিন লাখ ৮৬ হাজার ৭৬৭টি পশু কোরবানি দেওয়া হয়। পরের তিন বছর যথাক্রমে চার লাখ ৫৬ হাজার, চার লাখ ৬০ হাজার, চার লাখ ৮৭ হাজার পশু কোরবানি হয়। আর ২০১৫ সালে কোরবানি হয় পাঁচ লাখ পশু। এর পরের বছরগুলোতেও ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে কোরবানির হার। সর্বশেষ ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরে ৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৬৮টি পশু কোরবানি হয়।
চলতি বছর চট্টগ্রামে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি পশু কোরবানি হতে পারে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। যা গত বছরের চেয়ে ৬৭ হাজার ২৯৭টি বেশি। কোরবানির পশুর চাহিদা বাড়লেও ঘাটতির সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ বিগত বছরগুলোতে স্থানীয় পর্যায়ে পশু পালনকারী খামারির সংখ্যাও বাড়ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর বলেন, চাহিদা বাড়লেও পশুর সংকট হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। এখানে পশুপালনের হারও বাড়ছে। এবার চাহিদার বিপরীতে আট লাখ ৬০ হাজার ৮৮২টি পশু স্থানীয় খামারীদের কাছে মজুদ আছে। ফলে ঘাটতি মাত্র ৩৫ হাজার ৩৭৮টি। এই ঘাটতি আশপাশের জেলাগুলো থেকেই পূরণ হয়ে যাবে। এছাড়া কোরবানির মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকেও বেপারিরা বাজারে পশু নিয়ে আসেন। ফলে পশুর কোনো ঘাটতি থাকবেনা।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, মজুদকৃত পশুর মধ্যে ষাঁড়ের সংখ্যা তিন লাখ ৬৫ হাজার ২৯টি, বলদ এক লাখ ২১ হাজার ৬৭০টি, গাভি ৪৯ হাজার ১১৪টি এবং মহিষ ৬৪ হাজার ১৬৩টি। এছাড়া দুই লাখ ৫ হাজার ১৭৪টি ছাগল, ৫৫ হাজার ৬৯৭টি ভেড়া মজুদ আছে। এদিকে উপজেলাগুলোর মধ্যে স›দ্বীপে সবচেয়ে বেশি ৮৫ হাজার ২৫টি পশু এবং বোয়ালখালীতে সবচেয়ে কম ২৯ হাজার ৭৪২টি পশুর চাহিদা রয়েছে। আর চট্টগ্রাম নগরীতে পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৭৫৭টি।
এদিকে খামারীরা বলছেন, এবার পশুখাদ্যের বাড়তি দাম, ওষুধসহ অন্যান্য সামগ্রীর বাড়তি দামের কারণে গত বছরের তুলনায় কিছুটা বাড়তি দামে পশু বিক্রি করতে না পারলে লোকসান গুনতে হবে। মিরসরাইয়ে ওয়াহেদপুর এলাকার খামারি হুসাইন বিন আজাদ বলেন, বাজারে খাদ্যসহ সবকিছুর দাম বাড়তি। গত বছরের তুলনায় এবার পশুর উৎপাদন ব্যায়ও বেশি হয়েছে। সেক্ষেত্রে দাম কিছুটা বাড়তি হতে পারে। তবে উত্তরাঞ্চল থেকে যদি অতিরিক্ত পশু আসে স্থানীয় খামারিরা লোকসানে পড়বেন।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, খাদ্য ও ওষুধের দাম কিছু কিছু সময় বাড়তি ছিলো। তবে সেটা পুষিয়ে নিতে খামারীদের খুব বেশি উচ্চমূল্য নিতে হবেনা। আশা করছি ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে উইন-উইন সিচ্যুয়েশন থাকবে। যাতে দুই পক্ষই লাভবান হতে পারেন।