দর্শকের অভাবে লোকসান গুনতে গুনতে বন্ধ হয়ে গেছে একে একে দিনাজপুর শহরের ৬টির মধ্যে ৫টি সিনেমা হল। একমাত্র চালু সিনেমা হলটি কয়েক মাসের মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে মালিকপক্ষ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রতিদিনি ১৫/২০টি চলচ্চিত্র প্রদর্শন হয়ে থাকে। অন্যদিকে, পকেটে পকেটে মোবাইল ফোনে সিনেমা এবং পাইরেসির কারণে দেশের সিনেমা হল ব্যবসা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। এখন হলগুলোতে দর্শক শূণ্যের কোঠায়, ফলে হল মালিকদের গুণতে হচ্ছে মোটা অংকের লোকসান। আর শত শত কর্মচারী বেকার হয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।
দিনাজপুরের ১৩ উপজেলায় ২৫টি সিনেমা হলে কর্মচারীর সংখ্যা ছিল হাজার খানেক। তার মধ্যে দিনাজপুর শহরেই ছিল ৬টি সিনেমা হল। সিনেমা হলগুলি হলো- মডার্ণ, লিলি, বোস্তান, চৌরঙ্গি, কুঠিবাড়ী, ছায়া। এরমধ্যে একমাত্র মডার্ন সিনেমা হলটি চালু রয়েছে। চৌরঙ্গী বন্ধের পথে। বাকীগুলো আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলার সিনেমা হলগুলোর বেশিরভাগই বন্ধ।
সিনেমা দর্শক বেলাল উদ্দিন, রফিকুল ইসলামসহ অনেকে জানান, ভারতীয় চলচ্চিত্রের উৎকর্ষতার সামনে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র টিকে থাকতে পারছে না। তরুণ প্রজন্মের পছন্দকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলা, হিন্দি ও তামিল চলচ্চিত্র। আধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ছাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ওইসব সিনেমাগুলোকে। এই কারণেই বাংলাদেশে হলগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিম্নমানের ছবি তৈরি হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষরা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
একমাত্র চালু থাকা দিনাজপুরের মডার্ণ সিনেমা হলের মালিক মো. শাহেবজাদা পারভেজ বলেন, বাংলাদেশের সিনেমা এখন মান সম্পন্ন নয়। চলচ্চিত্র নির্মাণকারীরা দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী চলচ্চিত্র উপহার দিতে পারছে না বিধায় দর্শক হলে আসছে না।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে এখনও ভাল চলচ্চিত্রের দর্শক আছে। তারা ভাল ছবি পেলে হলে এসে ছবি দেখতে রাজি। কিন্তু ছবি নির্মাণকারীরা দর্শকদের সাথে প্রতারণা করে টাকা আয় করতে চান।
শাহেবজাদা পারভেজ তার এ সিনেমা হলটি আগামী রমজান ও কুরবাণী ঈদের মাঝামাঝি বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন বলে জানান।
এদিকে বেকার হল শ্রমিকদের কেউ কাপড় ব্যবসা, ফুচকা ও চটপটির দোকান, ফুটপাতে ডিম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। অন্যদিকে মালিকরা হলগুলি ভেঙ্গে নির্মাণ করছেন মার্কেট ও নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
মডার্ণ সিনেমা হল ১৯৫৭ সালে নির্মাণ করেন শাহেবজাদা পারভেজের পিতা এম এস জোহা। এই হলটি তৈরি করার পর থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ভালো ব্যবসা ছিল। তখন দর্শক ছিল প্রচুর। কিন্তু ১৯৮০ সালের পর থেকে চলচ্চিত্রের মান নামতে শুরু করে। এসময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের চরম অবনতি ঘটে।
হল কর্মচারী জহির উদ্দিন বুলু জানান, তিনি এখানে প্রায় ৩০ বছর ধরে চাকরি করেন। এখন হলে দর্শক নাই। হলের মায়ার জন্য ঘুরে ফিরে এই হলেই আসি। সংসারের অভাব অনটন লেগেই আছে। কিন্তু এ বয়সে কোন কিছু করার উপায় নাই।
আর্থিক দৈন্যদশার কারণে মালিকরা হলগুলো সংস্কারেও উদ্যোগ নিচ্ছে না। ফলে ভাঙ্গা সিট আর ছারপোকা ভরা চেয়ারের গদির কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। তাছাড়া পরিবারের সকলকে নিয়ে হলে বসে ছবি দেখারও পরিবেশ এখন আর নেই। অথচ, এ সিনেমা হল থেকেই এক সময় সরকার আয় করত বিপুল রাজস্ব।
বিডি-প্রতিদিন/০১ জুন ২০১৫/ এস আহমেদ