শমী কায়সার। নামটির মধ্যে বাংলাদেশের নাটকের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। অভিনয়ের আভিজাত্যও তাতে সমানতালে বিদ্যমান। কিন্তু নিজেকে পর্দার আড়ালে রেখেছেন তিনি। অথচ তার সেই চিরচেনা হাসি এখনো দর্শকের মনে বাজে। যেই দর্শকের সঙ্গে শমীর একজীবনের বন্ধন, তাদের থেকে দূরে কতদিন! শমী ফিরেছেন আবার অভিনয়ে। অভিনয়ের এই সুশিল্পীকে নিয়ে লিখেছেন- জাকারিয়া সৌখিন
ফিরে আসা কিংবা প্রত্যাবর্তন সবসময়ই আনন্দের। আর সেই ফিরে আসা যদি হয় শমী কায়সারের মতো অভিনেত্রীর, তবে তার সঙ্গে শুধু আনন্দই থাকে না, থাকে আবেগও। কারণ শমীর সঙ্গে যে আমাদের চোখ, মন আর মস্তিষ্কের সম্পর্ক। চোখ দিয়ে দেখে, মন দিয়ে অনুভব করে মস্তিষ্কের সবচেয়ে দামি শেলফে ধারণ করে রাখা হয়েছে শমীর স্মৃতি। বড্ড মধুর সেই স্মৃতি। তাই শমীর ফিরে আসা মানে আমাদের টিভি নাটকের দর্শকের জন্য নীরব উল্লাস। আবার তিনি হাসবেন, কাঁদবেন, মায়া ছড়াবেন পর্দায়। আর আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখব সেই মায়ার খেলা।
দীর্ঘদিন আমাদের কাছে শমী ছিলেন অতিদূর সমুদ্রের কোন দ্বীপ থেকে ভেসে আসা সুঘ্রাণ। যে দ্বীপের সঙ্গে দর্শকের কোনো যোগাযোগ নেই, শুধু ঘ্রাণ শুকে দেখার সম্পর্ক। দূরদ্বীপবাসিনীর মতোই তিনি নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন। এবার সেই আড়াল ভাঙল। আসছে ঈদেই তাকে আবার দেখা যাবে- অভিনয়ে।
প্রিয় পাঠক, সুখবর পেয়ে গেলেন। তাই অপেক্ষা করুন ঈদের জন্য। শমীর জন্য অপেক্ষা করেছেন অনেক কাল। আর একটু। এই শমী, যেই শমীর নাম শুনলেই আপনার চোখের সামনে অনেক দৃশ্যের ছোটাছুটি শুরু হয়। পরিচিত দৃশ্য, সংলাপ, এঙ্প্রেশন- সব মিলিয়ে পেয়ালা ভর্তি অভিনয়ের রস চুমুক দিয়ে দিয়ে স্বাদ গ্রহণ। শমী কায়সার অভিনয় দিয়ে এভাবে আমাদের সঙ্গে হৃদয়ের বন্ধন তৈরি করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি উধাও হয়ে গেলেন। উধাও মানে অভিনয় থেকে উধাও। আর তাই শমী ভক্তদের মন অতৃপ্ত আত্দার মতো ঘুরে বেড়িয়েছে। পুরনো নাটকে তৃপ্তি খুঁজেছে সবাই। নতুন নাটকে তিনি নেই। ব্যস্ততায় তিনি ডুবেছিলেন অন্য জগতে। দীর্ঘদিনের ডুব। কিন্তু হৃদয়ের বন্ধন এত সহজেই ভোলা যায়! অভিনয়ের স্বজন হয়ে, রক্তে অভিনয়ের হিমোগ্লোবিন কোষ রেখে কী করে তিনি দূরে থাকেন! তাই তো আবার ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছেন অভিনয়ের ভুবনে। নিয়মিত না হলেও প্রতি বছর তিনি দুএকটি নাটক-টেলিফিল্ম হলেও করবেন। বললেন, 'প্রতি বছর কিছু কাজ করতে চাই। উৎসবকেন্দ্রিকই হবে কাজগুলো। একটু দেখে-শুনে ভালো গল্পে অভিনয় করব।' আর দর্শকের সঙ্গে তার সম্পর্কের টান নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'দর্শকের ভালোবাসার আকর্ষণ তো রয়েছেই। কখনোই ছিন্ন করার কিংবা অস্বীকার করার ক্ষমতা নেই আমার। তাদের টানেই বলেন আর অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসার টানই বলেন, ফিরলাম। এখন তো নানা কাজে ব্যস্ত থাকি। তাই সময়-সুযোগ করে অভিনয় করব। ইচ্ছাটা যেহেতু করেই ফেলেছি, পিছিয়ে যাব না আর। এ জন্যই বেছে বেছে ভালো নাটকে অভিনয় করব। যাতে আমার ভক্তরাও বলতে পারেন, শমীকে যখন পাই, মনের মতো করেই পাই'।
এই না হলে অভিনেত্রী! দর্শককে ঠকাতে চান না এক বিন্দুও। সম্পর্ক যখন অনুভবের, তখন ঠকানো যায় না। সত্যিকারের শিল্পীর বেলায় কথাটি আরও অধিক সত্য।
শমী কায়সার ঈদের একটি টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন। এটি নির্মাণ করেছেন চয়নিকা চৌধুরী। শিরোনাম 'অনুমতি প্রার্থনা'। পুরনো জুটি নতুন করে গড়েছেন মাহফুজ আহমেদের সঙ্গে। দর্শকের জন্য এটি বিরাট সুসংবাদ। এত বছর অপেক্ষার পর আবার মাহফুজ-শমীর রসায়ন পর্দায়।
শমী বলেন, 'গল্পটি খুব ভালো লেগেছে। নির্মাতার নির্মাণ ভাবনাও চমৎকার। তিনি গুছিয়ে কাজ করার জন্য সুনাম কুড়িয়েছেন। আর মাহফুজ ভাই তো রয়েছেনই। তাই অভিনয় করেছি।'
'অনুমতি প্রার্থনা'র শুটিং হয়েছে বাংলাদেশের ভূস্বর্গ বান্দরবানে। নীলাচল-নীলগিরিতে টানা পাঁচ দিন ধরেছে চলেছে লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন। শুটিং লোকেশন দেখেও মুগ্ধ তিনি। সেখানে তিনি মুখোমুখি হন বাংলাদেশ প্রতিদিনের। বলেন, 'অনেকদিন পর অভিনয় করলাম। এটা যেমন ভালো লাগছে, একই সঙ্গে লোকেশন দেখেও মন ভালো হয়ে গেল। এত সুন্দর জায়গা আছে আমাদের দেশে।'
'অনুমতি প্রার্থনা' ঈদে এনটিভির পর্দায় দেখা যাবে। শুধু শমী-মাহফুজের অভিনয়ই নয়, লোকেশন দেখেও মন জুড়াবে দর্শকের।
আপনারা কী ভাবছেন এই একটি টেলিফিল্মে অভিনয়ের কারণেই তিনি আবার ফিরছেন বলা হচ্ছে? যদি ভেবে থাকেন সেটা মস্ত ভুল। শমী আরও একটি নাটকে অভিনয় করছেন। আর সেটি ধারাবাহিক। এবার খুশিতে হাততালি দিতেই পারেন। কারণ ধারাবাহিক মানে ধারাবাহিকভাবে শমীর অভিনয় দেখে যাওয়া। আবুল হায়াতের রচনা-পরিচালনায় তিনি অভিনয় করছেন 'আকাশের ওপারে আকাশ' ধারাবাহিকে। নারীবাদী গল্প। শমীর চরিত্রটিও চমৎকার। তিনি গল্পের মূল ভূমিকায়। শমী বলেন, 'নারীর ক্ষমতায়নকে নিয়ে গল্প। তাই অনেক আগ্রহ নিয়ে অভিনয় করছি। তাছাড়া হায়াত আঙ্কেলেরও বহুদিনের ইচ্ছা আমাকে নিয়ে একটি ধারাবাহিক নির্মাণের। স্ক্রিপ্ট পড়ে ভালোলাগায় আমার আনুষঙ্গিক অন্যান্য ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও কাজটি করছি। হায়াত আঙ্কেলের প্রতি আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ ফারজানা চরিত্রটির জন্য আমার ওপর আস্থা রাখায়।'
শুনলেন তো শমীর কথা। এবার আপনারাও তৈরি হয়ে যান ১০৪ পর্ব জুড়ে শমীর অভিনয়ে বুঁদ হয়ে থাকার জন্য।
শমীর কাছে সোজাসাপটাই জানতে চাওয়া হয়েছিল, দর্শক আপনার অভাব অনুভব করে। আপনাকে দেখতে চায়। আপনার ভাবনা কি? উত্তরে তিনি বলেন, 'অভিনয় দিয়েই আমি শমী কায়সার। আমিও চাই অভিনয় করতে। এ জন্যই বছরে কিছু নাটক-টেলিফিল্মে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
শমী ফিরে আসুক আবার। ফিরে আসুক আমাদের ড্রয়িং রুমে। বাংলাদেশের ঘরে ঘরে শমী, বিপাশা, মিমিদের নাটক ছিল। এখন হিন্দি সিরিয়ালের যুগ। তাই শমীদের ফিরে আসা এখন জরুরি। বাংলাদেশের নাটকের যে সুনাম ছিল সেটি ফিরিয়ে আনাতেও আবার শমীদের প্রয়োজন। শমীও নিশ্চয়ই সে বিষয়টি বুঝবেন আন্তরিকভাবে। কারণটা অভিনয়ের স্বজন হিসেবে রক্তের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক। তাইতো নীলগিরির চমৎকার আবহাওয়ায় বসে অভিনেতা মাহফুজও বললেন, 'শমীরা যদি আবার নিয়মিত অভিনয় করে, তবে আমরা নাটকে আরও সমৃদ্ধ হবো। দর্শক কোয়ালিটিফুল নাটক দেখতে পারবে।'
সত্যিই তাই। অভিনেতা যথার্থই বলেছেন। শমীর হাসি সবার প্রিয়। তিনি যখন পর্দায় খিলখিল করে ওঠেন, তখন দর্শক মন বলে- 'এই হাসি ভালো লাগে'। তার হাসিটি চিরসবুজ থাকুক।