নির্মাতা যখন বললেন- আপনাকে 'পদ্মপাতার জল' এর অতিথি হতে হবে, মন তখন সায় দিল না। কিন্তু আমাকে ছাড়বেন না তিনি। অগত্যা গল্প পড়লাম। মনে ধরার উপাদানে ঠাসা। এক কথায় অসাধারণ। মন পাল্টালাম। ইমন আর মিমের সঙ্গে গানের সঙ্গী হলাম। 'গোপনে গোপনে... আরও গোপনে...'। চমৎকার লিখেছেন শেখ রানা। অদিত, শোয়েব, ন্যান্সি ও কণার মতো তুখোড় গাইয়েরা গানটিতে কণ্ঠ দিলেন। অদিতের সুরে মন জুড়িয়ে গেল। সে এক অন্য রকম ভালো লাগা।
তিন প্রকৌশলী বন্ধু-শেখ আসিফুর রহমান, রাজু আহমেদ আর রাজিব রায়হান। শখ হলো ছবি নির্মাণ করবেন। নেহাত শখ বললে ভুল হবে। সেলুলয়েডের ফিতায় নতুন বাংলাদেশ আবিষ্কারের প্রত্যয় তাদের। দেশের চমৎকার সব লোকেশন বেছে নিলেন। বিখ্যাত পুরাকীর্তিগুলোও বাদ যায়নি। কি এক অসাধারণ শৈল্পিক নিদর্শন। একাধিকবার জাতীয় পুরস্কার পাওয়া চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান ক্যামেরায় চোখ রেখে চলচ্চিত্রের ফিতায় তুলে আনলেন সৌন্দর্যের অপূর্ব ব্যঞ্জনা। নির্দেশক তন্ময় তানসেন ক্লান্তিকে দুহাতে সরিয়ে শ্রেষ্ঠ কাজের স্বাক্ষর রাখলেন। গল্পের কারিগর লতিফুল ইসলাম শিবলী শুধু কাহিনীর মুন্সিয়ানা দেখাননি। সংলাপেও রাখলেন অনন্য মুগ্ধতা। 'তুমি হলে সেই শিল্পী, যে শিকারের আগে ঢিল মেরে উড়িয়ে দাও পাখি। তারপর ছুড়ো গুলি...। কিংবা নারীর ছলনা বোঝার বয়সে কখনো পৌাঁছায় না পুরুষ...। আহা, একি শুধুই কথার কথা। না তো, কি যে এক গভীর ভাবালুতা। দর্শকের কপালে চিন্তার ভাঁজ এঁকে দেবে। মনের গহিনে উঠবে ভাবনার ঝড়।
পদ্ম পাতায় নিপুণের উপস্থিতি মাত্র পাঁচ মিনিটের। নায়ক নায়িকার সঙ্গে গোপনে গোপেনে গানে অংশ নিলেন। নিপুণ ৫ মিনিটের অতিথি কেন? ব্যাখ্যা করলেন নির্মাতা। বড় পর্দায় এসেই দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করা চাট্টিখানি কথা নয়। এমন একজন সৌভাগ্যবান অভিনেত্রীকে যে করেই হোক এ ছবির সদস্য করতেই হবে। অনেক ভেবেচিন্তে গানের মালা পরিয়ে দিলেম তার গলে। দর্শক ঈদে 'পদ্মপাতার জল' দেখে নিশ্চিত বলবে আমার হিসাব নিকাশ ষোলো আনা খাঁটি। এক ঘেয়েমিতে দর্শক ভুগবে, তা হবে কেন। গান আর সংলাপ কিংবা মেলোড্রামা দিয়ে দর্শক ধরে রাখার চেষ্টা পুরনো। সনাতন রীতির বাইরে গিয়ে নতুন কি করা যায়। এদেশের ছবিতে কবিতার ছন্দ কখনো আসেনি। তবে তাই হোক। মিম আর ইমনের ঠোঁটে তুলে দিলেম কাব্যময়তা। দর্শক বলবে, ছবিতো নয় যেন নব যৌবনা রোদে স্নান করে ঝরঝরে হওয়া।
কুমিল্লার মেয়ে নাসরিন আক্তার নিপুণ। চলচ্চিত্রে এসে সহজেই সব জয় করে নেন। সবার কপালে এমন ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ে না। শিল্পী সত্তাকে সুনিপুণভাবে নিজের মধ্যে ধারণ করে নেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা দেখিয়েছেন তিনি। তার কথায়- পদ্মপাতার জলের ভাঁজে ভাঁজে ছড়িয়ে আছে আবেগ আর ভালোবাসার উপমা। বাঈজী পদ্মর রূপে পাগলপারা জমিদার তনয় শিশির। এমন নারীর বাস্তবিক পরিচয় বা স্বীকৃতি কি সমাজ দেয়। শুরু হয় সম্পর্কের টানাপড়েন। কি হবে পদ্ম আর শিশিরের। ক্লাইমেক্স দেখে অশ্রুসিক্ত হতে হবে আর মনকাড়া বিনোদন ডেকে আনবে বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ার। ঈদের আনন্দকে শতগুণে বাড়িয়ে দেবে এই প্রাপ্তি। আমার এই প্রত্যাশা মোটেও বাড়িয়ে বলা নয়। তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে বললেন আত্দবিশ্বাসী নিপুণ।