আমাদের সংগীতের ভূবনে আছে বেশ কিছু সুরেলা পাখি। সবচেয়ে সুরেলা পাখির তালিকার ওপরের দিকে আছে একটি নাম। তিনি সামিনা চৌধুরী। শ্রোতাদের মন কেড়ে নেয়ার মতো কেমন যেন সহজ-সরল আবেগী গায়কী আছে তার মধ্যে। যে কারণে তার গান মানেই প্রাণের মাঝে এক অদ্ভুদ অনুভূতির সৃষ্টি-উল্লাস। দিনের পর দিন শ্রোতাসমাদৃত গান গেয়ে সামিনা হয়ে উঠেছেন শ্রোতা প্রিয় এক শিল্পী। তবে এই অবস্থান নিয়ে যেন এখন নিজের মাঝে কিছুটা সংশয় রয়েছে তার। পিছপা হতে রাজি নন সামিনা। নিজের চেষ্টাতেই তিনি তার গানের মধ্য দিয়ে বাংলা গানকে সমৃদ্ধ করতে চান। সামিনা চৌধুরী বলেন, 'সবকিছুতেই ভালো-মন্দ থাকবে। আর এটাই স্বাভাবিক। যারা প্রমোট করেন তাদেরই দায়িত্ব ভালোটাকে বের করে আনা। যদি প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থানে সচেতন থাকতেন তাহলে সঙ্গীতাঙ্গনে এই দৈন্যদশা কিছুতেই থাকত না।'
একটি সুন্দর সংগীত পরিবারে বেড়ে ওঠা সামিনা চৌধুরীর। চর্চা আর সাধনার মধ্য দিয়ে যার ছুটে চলা। তার ক্ষেত্রে এমনটি হওয়া অস্বাভাবিক কিছুই নয়। সামিনার ভাষ্য, 'আমি নিয়মিত সংগীতচর্চা করি। আমি মনে করি, একজন শিল্পীর জীবনে চর্চার গুরুত্বটা অনেক বেশি। সংগীত সাধনার বিষয়। তা সাধনার মধ্য দিয়েই অর্জন করতে হয়।'
বাংলা গানকে সমৃদ্ধ করতে আজও সামিনা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সে কথা সবাই জানেন, তাই নতুন করে এ খবর জানানোর কিছু নেই। নতুন খবর যদি শোনাতেই হয়, তাহলে বলব অভিনেত্রী সামিনা চৌধুরীর কথা। এ কথাই সত্যি। শীঘ্রই তাকে অভিনেত্রীর রূপে দেখা যাবে। যদিও ছোটবেলায় শিশুতোষ নাটকে অভিনয় করেছিলেন সামিনা। বেতারের নাটক 'জুলিয়াস সিজার' ও 'এই সেই'তেও অভিনয় করে বেশ প্রশংসিত হন তিনি। এরপর তাকে আর কোনো নাটকে অভিনয় করতে দেখা যায়নি। কিন্তু কিছুদিন আগে সামিনা তার ফেসবুক পেজে নাটকে অভিনয় করার বিষয়ে ভক্তদের মতামত চেয়েছেন। আর তাতে ভক্ত-শ্রোতাদের সাড়াও ছিল চোখে পড়ার মতো। নির্মাতা তারিক মুহাম্মদ হাসানের অনুরোধে 'ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট' নাটকে দেখা যাবে গানের এ শিল্পীকে।
সামিনা চৌধুরী বলেন, 'অনেক দিন থেকেই নির্মাতা তারিক অভিনয় করার জন্য আমাকে অনুরোধ করে আসছেন। যদিও তাকে আমি বহুবার না করে দিয়েছি। তাকে বলেছিলাম- একক নাটকে অভিনয় হলে বিষয়টি ভেবে দেখতাম। ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তারপরও অভিনয়ের বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকভক্ত ও পরিচিতজনদের সঙ্গে আলোচনা করি। সবাই অভিনয়ের পক্ষে রায় দিয়েছে। তবে আমি এখনও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। দেখা যাক কী হয়। কিছুদিন হলো তারিক মুহাম্মদ হাসান আমাকে একক নাটকে অভিনয় করার প্রন্তাব করে আসছেন। এটি ঈদের জন্য নির্মাণ করা হবে। এ নিয়েও তাকে কোনো সিদ্ধান্ত দিইনি। হয়তোবা ঈদের নাটকে অভিনয় করতে পারি।'
গানের শিল্পী গানের মাঝেই থাকবেন- এটাই স্বাভাবিক। আর তাই তো তিনি ভক্তদের জন্য ঈদে নতুন গানের আয়োজন রেখেছেন। এবারের ঈদের বেশ কিছু টিভি চ্যানেলের ঈদ আয়োজনে থাকছেন তিনি। ওপার বাংলার শিল্পী রাঘব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে শীঘ্রই প্রকাশ হচ্ছে তার দ্বৈত গানের অ্যালবাম 'একটা বন্ধু চাই'। এতে থাকছে ১০টি গান। জুলফিকার রাসেলের কথায় গানগুলোর সুর করেছেন শিল্পী রাঘব নিজেই। সংগীতায়োজন করছেন কলকাতার ইন্দ্রজিৎ দে এবং তমাল চক্রবর্তী। এতে দুই শিল্পীর কণ্ঠে চারটি করে একক এবং দুটি করে দ্বৈত গান থাকছে। এটি প্রকাশ করছে লেজার ভিশন।
ডাক্তার কিংবা অভিনেত্রী হওয়ার হবার স্বপ্ন নিয়ে সামিনা চৌধুরীর অগ্রণী বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, হলিক্রস গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স পাস করেন। ১৯৭০ দশকের শেষের দিকে মায়ের উৎসাহে বিটিভির নতুন কুঁড়িতে অংশগ্রহণ করেন। প্রথম বাংলাদেশ শীর্ষক দেশের গান গেয়ে প্রথম পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৮১ সালে যখন তিনি ক্লাস এইটের ছাত্রী সে সময় সুরকার আলাউদ্দীন আলী তাকে দিয়ে 'জন্ম থেকে জ্বলছি' চলচ্চিত্রের 'একবার যদি কেউ ভালোবাসতো' গানটি রেকর্ড করান। গানটি তখন প্রবল জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরে বিটিভিতে ১৯৮২ সালে 'শিউলিমালা' অনুষ্ঠানে গান করেন 'ফুল ফোটে ফুল ঝরে' গানটি। এটিও হিট হয়। ১৯৮১ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তার প্রথম অডিও অ্যালবাম। সেই তো যাত্রা শুরু।