আলী যাকের
আমার মনে হয় গত কয়েক বছরের তুলনায় বর্তমানে বেশকিছু টিভি নাটক ও অনুষ্ঠানের মান উন্নত হয়েছে। গল্প, নির্মাণ, অভিনয়ে পরিপক্বতা এসেছে। কিন্তু বিজ্ঞাপনের চাপ ও মানহীন কিছু অনুষ্ঠানের কারণে ভালো কাজগুলো আড়াল হয়ে যাচ্ছে।
এ অবস্থার উন্নয়ন করতে পারে টিভি চ্যানেলগুলোই। বিজ্ঞাপন প্রচারের আধিক্য ও নাটক এবং অনুষ্ঠানের পরিমাণ কমিয়ে মান বাড়াতে হবে। এতে দর্শক ভালো কাজগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে দেখতে পারবে।
ছোটপর্দার জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনতে এর কোনো বিকল্প আছে বলে আমার মনে হয় না।
অনুষ্ঠানের মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে টিভি কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে বিজ্ঞাপন কমাতে পে-চ্যানেল চালুসহ নানা সুযোগ-সুবিধা তৈরি করবে সরকার। তা হলেই দীর্ঘদিনের এ দুই অভিযোগের সমাধান হবে।
আতাউর রহমান
ঈদে টিভি অনুষ্ঠানের মান যে খুব খারাপ তা কিন্তু নয়। ১০টি অনুষ্ঠানের মধ্যে কমপক্ষে ৩টি ভালো বলা যায়। অন্তত কয়েক বছরের তুলনায় অনুষ্ঠানগুলোতে নতুনত্ব ছিল বলে মনে হয়।
অনুষ্ঠানের মান বাড়াতে টিভি কর্তৃপক্ষকেই উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে ঈদে সাত বা ১০ দিন অনুষ্ঠান প্রচার না করে সর্বোচ্চ পাঁচ দিন করলে ভালো হয়।
এতে অনুষ্ঠানের পরিমাণ কমায় মান বাড়বে। তা ছাড়া লাগামহীন বিজ্ঞাপন প্রচার কমাতে হবে। না হলে যত ভালো অনুষ্ঠানই হোক না কেন দর্শক ধরে রাখা যাবে না। এখন উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির যুগ।
দর্শকের হাতে রিমোট কন্ট্রোল। তারা পছন্দের অনুষ্ঠান দেখতে রিমোটের বোতাম টিপবেই। এ প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে চ্যানেলগুলোকে সচেতন হতেই হবে।
হানিফ সংকেত
এত নাটক নির্মাণ হচ্ছে! তাই নাটক বিষয়টা মাত্রার বাইরে চলে গেছে। আর যেভাবে চ্যানেলগুলো প্রমোশনাল চালাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে, নাটক পণ্য। কিন্তু নাটক কখনোই পণ্য নয়, সৃজনশীল শিল্পকর্ম। আমার মনে হয়েছে আমরা সংখ্যার দিকে চলে যাচ্ছি, মানের দিকে নয়। চ্যানেলগুলোতে মান নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো কর্তাব্যক্তি নেই। তাই ঈদের অনুষ্ঠান হয়ে পড়ে যন্ত্রণাদায়ক। কোনো দর্শকই সুস্থভাবে নাটক দেখতে পেরেছেন কি-না তা জানা নেই। একই শিল্পীর চেহারা বারবার ঘুরেফিরে আসাও বিরক্তিকর। তবে সব অনুষ্ঠানই মানহীন হয়েছে তা নয়, কিন্তু চ্যানেল সংখ্যা এবং নাটকের সংখ্যার তুলনায় তা ছিল খুবই নগণ্য। দিন দিন অনুষ্ঠান নতুন হবে- এটাই নিয়ম। কিন্তু আমাদের অনুষ্ঠান দিন দিন পেছনে যাচ্ছে। জং ধরে গেছে।
শামীম শাহেদ
অনুষ্ঠানের মানহীনতা এবং বিজ্ঞাপনের আধিক্যের অভিযোগ সঠিক। অনুষ্ঠান নির্মাণ প্রফেশনাল লোকদের হাতে থাকা দরকার। না হলে মানহীন অনুষ্ঠান রোধ করা যাবে না। আর বিজ্ঞাপন প্রচার হুট করে কমানো সম্ভব নয়। কারণ টিভি চ্যানেলগুলোর আয়ের প্রধান উৎসই হচ্ছে বিজ্ঞাপন। তবে সরকার যদি পে-চ্যানেল চালু বা আয়ের অন্য কোনো পথ করে দেয় তবে বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরতা কমবে। চ্যানেল দেখে দর্শক মাস শেষে তিন থেকে চারশ' টাকা ফি দেয়। কিন্তু এই টাকা চ্যানেল মালিক পায় না। অথচ বিদেশে সবই পে-চ্যানেল। দুঃখজনক হলেও সত্য, সরকার আবার এআইটি ব্যবস্থা চালু করায় অনুষ্ঠান ক্রয়ের মূল্য বেড়ে গেছে। ফলে বাড়তি টাকা তুলে আনতে অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন প্রচারে বাধ্য হচ্ছে চ্যানেলগুলো। এ অবস্থার অবসান একমাত্র সরকারেরই হাতে।