বাংলা নাটক খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। এটাকে অভিশাপও বলা যায়, বলা যায় আশীর্বাদও। তিন বছর আগে এই প্রক্রিয়ার শুরু। দর্শক মোশাররফ করিমের মত সু-অভিনেতার একঘেয়েমি ও ভাঁড়ামি অভিনয়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল। তারা জানিয়ে দিয়েছে, অভিনেতা যতই প্রিয় হোক; তাকে একই রকমভাবে বারবার দেখতে চাই না।
এ বছর আবার আরেক পরিবর্তনের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সেটা। মেহজাবিনের মতো মেধাবী অভিনেত্রীকে দূরে ঠেলে দেওয়ার সাহস করেছে দর্শক। দর্শক মেহজাবিনকে জানিয়ে দিচ্ছে, আপনি একই বৃত্তে ঘুরছেন। আপনার কাছে আমরা বহুমাত্রিকতা প্রত্যাশা করি।
এখানে মোশাররফ করিম বা মেহজাবিন বিষয় না। বিষয়, দর্শক ঠোট কাঁটা হয়ে যাচ্ছে। তারা মুহূর্তেই যে কাউকে ত্যাজ্য করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখছে। সুতরাং, বাংলা নাটকের বাঁকে দুই বড় পরিবর্তন হুমায়ূন আহমেদ এবং মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পর কোনও কিছুই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। এর সবচেয়ে বড় কারণ গল্পে ও চিত্রনাট্যে সাহিত্য বিমুখতা।
লেখক হয়ে জন্ম নেওয়া হুমায়ূন আহমেদ নাটক পরিচালনার ক্ষেত্রে দুনিয়া পড়ে এসে স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। পরিচালক হয়ে জন্ম নেওয়া মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বাংলা সাহিত্যের সব দিকপালের শরণাপন্ন হয়েছেন তার গল্পের চিত্রনাট্যে। তার পঠন পাঠনের বিস্তৃতি কম নয়। তার চিত্রনাট্যও রাঙিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে শহীদুল, জহিরসহ সকলের রঙে।
তাই এখন অভিশাপ হয়ে যাচ্ছে নাটকের পরিচালকদের জন্য। গল্পহীনতার নাটকে সবচেয়ে বড় আশ্রয় ছিল জোর করে হাসি কিংবা কান্নার ছড়াছড়ি। যে দুটোই দর্শক ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে কয়েক বছর যাবৎ। আশীর্বাদ এই কারণে, নাটককে এখন ফিরতেই হবে গল্পের কাছে। ভেতরে কিছু থাকতেই হবে। হুট করে হাসি-কান্না এখন ঢাল হিসেবে নিরাপদ নয় পরিচালকদের জন্য।
দর্শক এখন সময়ের মূল্য সম্পর্কে সচেতন। তারা সময়ের মূল্য খোঁজে। জানতে চায়, আপনি এখানে কেনো অযথা হাসলেন? কেনইবা কান্না জুড়ে দিলেন? সামনে দর্শকের প্রশ্নের তীর যতটা ধারাল হচ্ছে, ততটা বিদ্ধ হতে প্রস্তুত কি পরিচালকগণ?
লেখক : সাংবাদিক
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি-প্রতিদিন/শফিক